সব
বাংলার প্রাচীন রাজধানী ঢাকা। একসময় জাহাঙ্গীরনগর হিসেবে পরিচিত এই নগরীতে রয়েছে রাজধানী ব্রিটিশদের তৈরি স্থাপনাসলহ বিভিন্ন দৃষ্টি নন্দন বাড়ি, রাস্তা, ভাস্কর্যও। বর্তমানে এই নগরীর ধানমন্ডিবাসীর প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডি লেক। আর ধানমন্ডির অন্যতম আকর্ষণের জায়গা জাহাজ বাড়ি। এক সময়ের ধানমন্ডি লেকে শোভা বাড়াতো এই ৫/এ রোডের ৬০ নাম্বার জাহাজ বাড়িটি, যা আজ শুধু ইতিহাসের পাতায় ছবি হয়েই আছে।
অনেকটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আদলে তৈরি করা বাড়িটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহলের কোনো শেষ নেই। । আবার অনেকে মনে করেন এটি একটি ভৌতিক বাড়ি। আর এর কারণ এটি এমন একটি বাড়ি যে বাড়ির সদস্যদের খুব একটা বাইরে দেখা যায় না। এমনকি বাড়ির ভেতর থেকে সামান্য টু শব্দটিও শোনা যায় না। বাড়ির প্রধান দরজাও সবসময় বন্ধ থাকে। বাইরের কারো ভেতরে প্রবেশ করারও অনুমতি নেই। এসব কারণে বাইরের মানুষ বাড়িটি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ধারণা পোষণ করে।
তবে সবার কাছে এই বাড়িটি ‘জাহাজ বাড়ি’ নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে বাড়িটির নাম ‘জাহাজ বাড়ি’ নয়। জাহাজের আদলে তৈরি হওয়ায় মানুষের মুখে মুখে হয়েছে ‘জাহাজ বাড়ি’নামটি। বাড়ির গেটের নেমপ্লেটে বাড়িটির নাম লেখা ‘চিশতিয়া প্যালেস’। ১৯৯৩ সালের কোনো এক সময় এই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তার এক বছর পর ১৯৯৪ সালে বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে প্রথম দিকে বাড়িটির ডিজাইন জাহাজ আকৃতির না হলেও নির্মাণের পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বাড়িটির কিছু অংশ ভেঙে এর পাশ দিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি করলে বাড়ির মালিক বাড়িটির সীমানা প্রাচীর বর্তমান জাহাজ আদলে তৈরি করেন।
মানুষের কৌতুহল তৈরি করা এই বাড়ির মালিক‘শের এ খাজা’নামেই পরিচিত হলেও তার আসল নাম একেএম আনোয়ারুল হক চৌধুরী। স্থানীয়দের মতে তিনি একজন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবান মানুষ এবং তিনি যা ভবিষ্যৎবাণী করতেন ঠিক তেমনটিই হতো বলে জানা যায়। তার ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য শেরে খাজাকে বলা হতো ‘কিং অব কিং মেকার’। জানা গেছে শের এ খাজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পড়ালেখা করেন। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতার বিষয়ে সঠিক ভবিষ্যতবানী করতে পারায় তার জাহাজবাড়ইতে বিশ্বের বড় বড় সব নেতার পদচারণা ছিলো। তবে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হলেও তিনি এটিকে পুঁজি করে কোনো ব্যবসা করেন নি। তার এই আধ্যাত্মিক ক্ষমতার সেবা শুধুমাত্র বিশ্বের প্রথম সারির নেতারাই পেতেন। এসবের বাইরে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে এই ‘আধ্যাত্মিক’ পুরুষ ইন্তেকাল করেন। তখন তার বয়স ছিলো ৫৯ বছর। বর্তমানে চিশতিয়া প্যালেসে বসবাস করছেন শেরে খাজার মা, বোন ও তার পরিবার এবং শেরে খাজার স্ত্রী রেহানা চৌধুরী। তার ছেলে রুবেল চৌধুরী।