বসু”ন্ধরার এম”ডির গার্লফ্রে”ন্ডের ‘আ”ত্মহ’’ত্যা’, গুলশা”ন থানায় নাট”কীয় চার ঘণ্টা!

| আপডেট :  ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

রাত পৌনে এগারোটা। গুলশান থানা। কোথাও কেউ নেই। গাড়ির জানালা খুলতেই দেখলাম পুলিশ ভ্যানে করে একটি লা’শ ঢুকছে। সেই লা”শের পিছু নিয়ে থানায় ঢুকলাম। এর মধ্যে কানাঘুষা হচ্ছে বসুন্ধরার এমডির গার্লফ্রেন্ড আত্মহ’0’ত্যা করেছে। অবশ্য এমন একটি তথ্য জেনেই ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলাম।

ভাগ্যক্রমে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ঘটনা আমার কাছে হাজির। থানায় ঢুকেই শুনেছি কয়েকজন কনস্টেবল বি’ষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। তাদের সঙ্গে আমিও গিয়ে যোগ দিলাম। কিন্তু তারা নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না। শুনা কথার মতো কথা বলছেন।

রাত সাড়ে এগারোটা। রিপোর্টার বলতে সেখানে আমিই উপস্থিত। এর মধ্যে কথা হয় থানার ওসি ত’দন্তের সঙ্গে। সে দেখি এই বি’ষয়ে খুব আগ্রহী। নিজেই এসে আমার সঙ্গে কথা বলছেন। আর কোনো টিভি চ্যানেল আসছে কীনা জিজ্ঞেস করছেন। তখনো সে বি’ষয়টি সম্ভবতো অনুধাবন করতে পারেনি বেচারা। ভাবতে পারিনি কি ঘটতে যাচ্ছে। ঘটনা যত সময় নিচ্ছে, থানার পরিবেশ তত পিনপতন নীরবতা বাড়ছে। এই নীরবতা, কিছু চা’পিয়ে যাওয়ার বা গো’পন করার নীরবতা।

রাত যত বাড়ছে, একেক করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থানায় ঢুকছে। রিপোর্টাররাও আসা শুরু করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে দুই তিনটি চ্যানেলের অ্যাসাইমেন্ট ছিলো প্রতিষ্ঠানের মালিক পর্যায়ের। তারা তখন নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে তাদের বসের বসদের। কিন্তু কিছুই অনএয়ার হচ্ছে না। বলে রাখা ভালো কয়েকজন রিপোর্টার এসে আবার চলেও গেছেন। তাদের ধারণা এটা বিশেষ কিছু বহন করবে না। বরং ঘটনা নিয়ে গেলেও অনএয়ার হবে না। তার চেয়ে বরং চলে যাওয়া ভালো।

আমাকেও চলে যেতে বলছিলো তারা। তবে আমি নাছোড়বান্দা। আমি আর ডি’বিসির জাহিদ ভাই রয়ে গেলাম। আমার উদ্দেশ্য অনএয়ার হোক বা না হোক আমি ঘটনার শেষটা দেখতে চাই। মানবজমিনের সম্পাদক প্রিয় মতি ভাই সবসময় একটা কথা বলতেন, ‘সব রিপোর্ট হয়তো প্রকাশ করা যায় না, কিন্তু রিপোর্টারদের সময় একদিন আসেই। তাই ডকুমেন্টস যত্ন করে রেখে দিতে হয়।’ যাহোক, আমি ঘটনার শেষ দেখতে চেয়েছিলাম। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে ছিলাম।

এর মধ্যে থানার ভিতর যাচ্ছি, বের হচ্ছি। এভাবে পায়চারি করছি। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছেন না। না ভু’ক্তভো’গী,না পুলিশের কেউ। ওই যে বলছিলাম, ওসি ত’দন্ত খুব আগ্রহী ছিলো, সেও দেখি এখন আর তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না। আমাকে এড়িয়ে চলছে। থানার ভিতর বাহির হওয়ার ধারাবাহিকতায় আরো একবার ভিতরে ঢুকে দেখলাম বসুন্ধরার এমডির সাথে ওই ত’রুণীর একটি ছবির অ্যালবাম পুলিশের কাছে। বাসায় টানানো দুই জনের একটি বড় ছবি। দু’টি ফোন। বাসা থেকে পুলিশ জ’ব্দ করেছে এগুলো।

এই ছবি দেখার পর, এবার আমার পুরোপুরি বিশ্বাস হলো, ঘটনা ঠিক। তখনো এই বি’ষয়ে রিপোর্টার’রা পুরোপুরি কনফার্ম না। এই ছবি দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। ফোনের ক্যামেরাটা বের করলাম, ছবি তুলার জন্য। কিন্তু বি’ষয়টি টের পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ছবিগুলো তরিঘড়ি করে ওসি ত’দন্তের কক্ষে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। একধরনের সিলগালা। আমি আর ছবি নিতে পারিনি। এদিকে এ সময়টা ধরে ওই ত’রুণীর বড়বোনকে দেখছি, এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে পুলিশের সঙ্গে ছুটাছুটি করছে। সাথে ভু’ক্তভো’গীর বন্ধুবান্ধবরা।

কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না। মিডিয়া দেখলেই দৌড়ে চলে যাচ্ছে, এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যসব এমন ঘটনার উল্টো চিত্র। ভু’ক্তভো’গীর পরিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে স্বেচ্ছায় কথা বলতে চায় এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের দেখে কখনোই স্বাভাবিক মনে হয়নি। যথেষ্ট আ’তঙ্ক ছিলো তাদের মধ্যে। এদিকে গুলশান জোনের পুলিশ সকল কর্মকর্তারা থানায় হাজির। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিং করছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়তো তারা কেউ পাচ্ছেন না। কোনো কোনো কর্মকর্তা বাইরে বের হয়ে এদিক ওদিক গিয়ে ফোনে কথা বলছিলেন।

পরিস্থিতি ঘটনাস্থলে না থাকলে বুঝা যাবে নাহ। তবে একটা বি’ষয় আমি কনফার্ম ছিলাম, পরিবার মা’মলা করতে চাচ্ছে, কিন্তু পুলিশ চিন্তায় আছে। তারও’পর আমরা বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী রয়েছি। স্টোরী অনএয়ার হোক বা হোক আমরা উপস্থিত থাকা কিন্তু তাদের জন্য একটু বাড়তি চা’প ছিলো। সেটা বুঝাই যাচ্ছিলো। তার মানে, দেশের এতো বড় একজন ব্যবসায়ীর বি’রুদ্ধে মা’মলা করতে চাচ্ছে পরিবার। কিন্তু পুলিশ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে?

ঠিক ঠাহর করতে পারছিলাম না। তবে এই ঘটনায় কিন্তু স্পষ্ট বার্তা দেয়, দেশে আইন সবার জন্য সমান নয়। অন্য কেউ হলে কিন্তু বড়কর্তারা থানায় এসে মিটিং করতেন না। যা হোক বুদ্ধিজীবী টাইপের কথা বাদ দেই। এসব ঘটনা দেখে রিপোর্টারদের মধ্যেও কানাঘুষা হচ্ছে। আসলে কি করতে যাচ্ছে পুলিশ? মা’মলা নিবে নাহ? সমঝোতা হয়ে যাবে? টাকার বিনিময় সমাধান হয়ে যাবে? এসব প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কথার ফাকে এক এসআই রাত দুইটায় এসে বলছেন, মা’মলা হয়েছে। খবর দিয়ে দেন অফিসে। এই কথা শুনার পর সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো, এমডির বি’রুদ্ধে মা’মলা!

ক্ষণিকের মধ্যেই পিনপতন নীরবতা ভেঙ্গে থানায় যেন প্রা’ণ ফিরে এলো। সকল জল্পনা কল্পনা শেষ হলো। কিন্তু তখনো ভু’ক্তভো’গীর পরিবার কথা বলতে চাইলেন না। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের লোকজন আলাদা আলাদা করে বের হয়ে গেলেন। যেন গণমাধ্যমের কেউ টের না পায়। সবার মধ্যে একধরনের চা’পা আ’তঙ্ক। আমার অপেক্ষা করছি ভু’ক্তভো’গীর বড় বোনের জন্য। যিনি এই মা’মলায় বা’দী। মিনিট পাঁচেক পরেই বের হলেন তিনি। তিনিও কোনো কথা বলছেন না।

তার চোখেমুখে আ’ত’ঙ্কেরও ছাপ! কি এমন আ’ত’ঙ্ক? তারপরও তাকে আমরা ধরার চেষ্টা করলাম। কেউ কোনো কথা বলছেন না। তাকে বললাম, আপনি কি আপনার বোনের হ’০’ত্যার বিচার চান না? তখন তিনি একটু নরম হয়ে কথা বলতে চাইলো, কিন্তু তার সঙ্গে লোকটি তাকে জো’র করে গাড়িতে তুলে ফে’লেন। ফলে তার ইচ্ছে থাকা সত্বেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এতক্ষণে সকল টেলিভিশন চ্যানেল গুলশান থানায় হাজির। কারো কারো চোখে মুখে ঘুম স্পষ্ট ছিলো। সবশেষ, গুলশান জোনের ডিসি বীরের মতো ব্রিফিং করে জানিয়ে দিলো, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবাহান আনভীরের বি’রুদ্ধে আত্মহ’০’ত্যা প্ররোচনা অ’ভিযোগে মা’মলা দা’য়ের করেন ভু’ক্তভো’গীর পরিবার। ডিসি বীরের মতো ব্রিফিং করলেও, পিছনের গল্পটা অন্য।

হয়তো কোনো গ্রীন সিগনালের জন্য তিনি অপেক্ষা করেছিলেন। এবং সেটা তিনি পেয়েছে। সব শেষ করে রাত তিনটা অফিসে ফিরলাম। স্টোরী রেডি করে সকাল আট’টায় অনএয়ার। আত্মহ’০’ত্যা প্ররোচনা ঘটনায় বসুন্ধরার এমডির বি’রুদ্ধে মা’মলা। টেলিভিশন হিসেব আমরাই প্রথম বি’ষয়টি অনএয়ার করেছি।

মোহাম্ম’দ ওমর ফারুক, ব্র’ডকাস্ট জার্না‌লিস্ট, ইন‌ডি‌পেন‌ডেন্ট টি‌ভি (ফেসবুক থেকে নেওয়া)