খেলাফত প্রতিষ্ঠা হলে ‘সব সাংবাদিককে জ’ বাই’

| আপডেট :  ১২ এপ্রিল ২০২১, ০৫:২৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১২ এপ্রিল ২০২১, ১২:২১ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহে একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক খেলাফত তথা ই’সলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম হলে সব সাংবাদিককে জ”বাই করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অনেক র”ক্ত দেয়া হয়ে গেছে জানিয়ে সাম্প্রতিক এক মাহফিলে বলেন, এখন থেকে র”ক্ত নেয়া হবে।

মাহফিলটি কবে কোথায় হয়েছিল, সে বি’ষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও সেই বক্তার নাম-পরিচয় ঠিকানা পাওয়া গেছে।

সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর ময়মনসিংহ থেকে সেই বক্তাকে আ’ট’কের তথ্যও পাওয়া গেছে। যদিও এ বি’ষয়ে আ’ইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি।

সেই বক্তার নাম ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী। তিনি ময়মনসিংহ নগরীর সানকি পাড়ার ফজলুল হক মারকাযুল উলুম মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বি’ষয়ে শিক্ষা দেন।

এই মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ মাহমুদ জানান, নোমানীর বাড়ি ও জন্ম নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজে’লায়। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। ২০১২ সালে তিনি হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মু’সলিম হন। এর পর থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে আছেন।

মাওলানা নোমানী শহরের সানকিপাড়ায় স’রকার রোডের ১১০/২ নম্বর বাড়ি ‘সুখ আলয়’-এ ভাড়া থাকেন।

কওমি ঘরানার মাওলানা শরীফ উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, মাওলানা নোমানী হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন। তবে জে’লায় সংগঠনটির কোনো কমিটি নেই।

একই কথা বলেছেন মাওলানা নোমানীর মাদ্রাসার মোহতামিম আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহে তো হেফাজতের কোনো কমিটি নেই। তিনি হেফাজতের কোনো নেতা না আমার জানা মতে।’

ধর্মীয় জলসায় মাওলানা নোমানীর বক্তব্য ভাইরাল হলে তার খোঁজে রোববার সানকিপাড়ার সেই বাসায় গেলে তার স্ত্রী বাড়ির ভেতর থেকে বলেন, ‘কারা জানি আসছিল, তাদের সাথে গেছে।’

নোমানীর বি’ষয়ে আরও জানতে প্রশ্ন করলে তার স্ত্রী বলেন, ‘আমি পর্দা করি; বাইরের কারও সাথে কথা বলি না।’

ময়মনসিংহে একটি গো’য়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, নোমানীর সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাকে তারাই নিয়ে এসেছেন।

বি’ষয়টি কেন স্পষ্ট করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নে সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি না বলে তাহলে আমরা এ বি’ষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

পরে এ বি’ষয়ে জানতে জে’লার পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

মাওলানা নোমানী যা বলেছেন

৩ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে মাওলানা নোমানী স্পষ্টত তার সমর্থকদের আইন ভঙ্গের প্ররোচনা দিয়েছেন। হ’’ত্যা, র’ক্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

নোমানীকে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহ যদি আমাদেরকে তৌফিক দেয়, আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যদি আল্লাহ তৌফিক দেয় আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত কায়েম করতে পারি, আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, সংবাদ দেখার টাইম পাবি না। সংবাদ দেখার টাইম পাবি না। একটা একটা ধরব আর জ’বাই করব, জ’বাই করব ইনশাল্লাহ।’

এ সময় মাওলানা নোমানী হাত দিয়ে জ’বাই করার বি’ষয়টি দেখান। আর ওয়াজে উপস্থিত শ্রোতারা সবাই উচ্চস্বরে চি’ৎকার করেন।

এ সময় অমু’সলিম’দের বি’রুদ্ধে উসকানি দিতেও শোনা যায় নোমানীকে। তিনি বলেন, ‘অমু’সলমান, এখন থেকে আমরাও তইয়ার (তৈরি)। আমাদেরকে ঘাড় ভাঙবি, আমরাও ঘাড় ভাঙব। কারা কারা তইয়ার?’

তিনি বলেন, ‘যতদিন বাঁচব, বাঘের মতো বাঁচব। আর যদি মরতে হয় ইনশাল্লাহ দুই-চার দশটাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে এরপর মরব ইনশাল্লাহ। সবাই রাজি আছি তো ইনশাআল্লাহ।’

শ্রোতারা এই পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে চি’ৎকার করতে থাকলে মাওলানা নোমানী বলেন, ‘তবে র’ক্ত দিতে হবে, র’ক্ত, র’ক্ত। আমার বয়ানই আজকে র’ক্ত নিয়ে। ও মু’সলমান র’ক্ত দিতে রাজি আছেন?’

তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘সবাই সবাই। বুঝেন, চিন্তা করে বলেন। ভ’য় পাচ্ছেন না তো, নাকি? ভ’য় পাচ্ছেন না তো? র’ক্ত দেবেন ইনশাল্লাহ? র’ক্ত দেবেন তো ইনশাল্লাহ? র’ক্ত দিয়েছে কে? তাহলে মু’সলমান, আজকে থেকে ডায়লগ পরিবর্তন। ডায়লগ চেঞ্জ।

‘এখন থেকে আর র’ক্ত দেবো না, অনেক র’ক্ত দিয়েছি আমরা। র’ক্ত দিতে দিতে এ জীবন শেষ করে দিল। এখন থেকে সাফ সাফ কথা। এখন থেকে আর র’ক্ত দেবো না। কারা কারা তইয়ার? র’ক্ত নেব, র’ক্ত নেব, র’ক্ত নেব ইনশাল্লাহ।’