এএসপি স্ত্রী-এসআই স্বামী ‘দম্পতির’ যে ছবি কাপাচ্ছে সোশাল মিডিয়া

| আপডেট :  ২০ মার্চ ২০২১, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ মার্চ ২০২১, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ফেসবুকে পু’লিশ কর্মক’র্তা এক দম্পতির ছবি এখন ভাই’রাল। তাদের প্রশংসায় পঞ্চ’মুখ সবাই। ছবিতে সাধারণ মানুষের মন্তব্য নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৭ মা’র্চ) সন্ধ্যায় পু’লিশের উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী’ পু’লিশের সহকারী পু’লিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেবের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন।

ওই পোস্টে এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু লেখেন, ‘পু’লিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারণা আছে তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমা’র সহধ’র্মিণীর অবস্থান আমা’র থেকে কতটা ওপরে। না, আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারও চাকরি হয়নি। আমা’র ও আমা’র সহধ’র্মিণী অবস্থানের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন।

যখন অহরহ পোস্ট দেখি মে’য়েরা লো’ভী হয়, মে’য়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মে’য়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না, আমা’র তখন খুব হাসি পায়। মায়ের জাত নিয়ে কী’ আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে।একজন বিসিএস কর্মক’র্তা যে কিনা আমা’র মতো একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মে’য়ে।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী’ পু’লিশের সহকারী পু’লিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেব দম্পতির বিয়ে হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। নিজেদের পছন্দে হলেও তাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিকভাবে।

এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু জানান, তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। বাবা ছিলেন একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিতুই বড়। উপ-পরিদর্শক পদে যোগদান করতে তিনি ট্রেনিং শুরু করেন ২০১৮ সালে ২৭ জানুয়ারি। পু’লিশের ট্রেনিং শেষ করেন ২০১৯ সালে। এর আগে থেকেই পরিচয় ছিল এএসপি উর্মী দেবের সাথে। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি এসআই পদে তার পু’লিশের চাকরি নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে দুজনের মাঝে আলাপ আলোচনা হয়। একপর্যায়ে একে অ’পরকে পছন্দ করেন। বিষয়টি যার যার পরিবারকে জানালে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়।

তিনি বলেন, অন্যান্য পোস্টের মতো ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছিলাম। পোস্টটি এভাবে ভাই’রাল হবে আমি বুঝতে পারিনি। তবে বিষয়টি মানুষ পজিটিভলি নিয়েছে। আম’রা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সুখী। আমা’র স্ত্রী’ও খুব ভালো মানুষ। তার সততার কোনো কমতি নেই। আমা’র মতো একজন মানুষকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলেই কতটা নির্লো’ভ ও নিরাহংকার।

এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক উজ্জ্বল ঘোষের নববধূ আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পু’লিশ সুপার (এএসপি) উর্মি দেব বলেন, আমা’র বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে। আমা’র বাবা একজন আইনজীবী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমিই বড়। বিসিএসের পর এএসপি পদে চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং আখাউড়া সার্কেলেই। ছবিটি সে (স্বামী) আমা’র অফিসে এসে তুলেছিল। ছবির বিষয়ে আমা’র আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীরা ফোন করে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমা’র স্বামীর সাথে চাকরিতে যোগদান করার পর পরিচয়। কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদাভাবে চালাতে হয়। যেন একটির কারণে আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একই পেশায় দুইজন থাকলে ভালো হয়, একজন আরেকজনেরটা সহ’জে বুঝতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে এএসপি উর্মি দেব বলেন, আম’রা যখন বিয়ে করি তখন দুজনই চাকরিজীবী। আম’রা বুঝে শুনেই বিয়েতে সম্মত হয়েছি। তাই আমাদের কোনো সমস্যা হবে না বলে প্রত্যাশা করছি। তারপরও প্রতিটি দম্পতির ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা হতে পারে। তখন আম’রা দুইজন আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাব।

এএসপি উর্মি দেব আরও বলেন, কোনো স’ম্পর্ক যখন পরিণতি পায়, সেটা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। আমাদের জীবন একটি, সবকিছু হিসাব-নিকাশ করে করা যায় না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র বিষয়গুলো পরিহার করতে হয়। শিক্ষিত মানুষ হয়ে দৃষ্টিভঙ্গি যদি না পাল্টাই, তাহলে কে পাল্টাবে? সবার আগে নিজের মন মানসিকতা বদলাতে হবে।