ধনী বাবার আদরে শৈশব কাটানো ইসলাম উদ্দিন ভাগ্যের ফেরে এখন রিকশাচালক

| আপডেট :  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ণ

পরনে স্যুট, পায়ে জুতা। মাথায় সাদা টুপি। প্রথম দেখাতেই যে কেউ তাকে অভিজাত মানুষ ভেবে ভুল করবেন। পোশাকে কেতাদুরস্ত হলেও রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। ৭২ বছর বয়সী মানুষটা উপজেলা শহরে সারাদিন রিকশা চালিয়ে আয় করতে পারেন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সেই টাকা দিয়েই তাকে বিশাল সংসারের বোঝা টানতে হয়। অথচ ধনী বাবার আদরে খুব সুখেই কেটেছিল তার শৈশব। বর্তমানে ভাগ্যের ফেরে ধরতে হয়েছে রিকশার হ্যান্ডেল।

রিকশাচালকের নাম ইসলাম উদ্দিন। তার বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ৪নং ওয়ার্ডে। বাবার নাম আব্দুল হেকিম। দীর্ঘদিন আইসক্রিম বিক্রি করে স্ত্রী ও সাত সন্তানের পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়েছেন ইসলাম। তবে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

ইসলাম উদ্দিন জানান, তার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে ঢাকায় একটি ছোট চাকরি করেন। এতে তার নিজেরই চলতে কষ্ট হয়। দুই ছেলে সবার ছোট। তারা স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক সংসারের কাজ করে। স্ত্রী আসমাও মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে তাকে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, ‘আগে টানা ৩২ বছর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে আইসক্রিম বিক্রি করেছি। সে সময় ছাত্রছাত্রীরা আমার আইসক্রিমের আশায় বসে থাকত।

কোনো স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে নিমেষেই পুরো বক্সের আইসক্রিম শেষ হয়ে যেত। কিন্তু নামিদামি কোম্পানির আইসক্রিমের কারণে তার বক্সের আইসক্রিমের চাহিদা দিন দিন কমে যায়। এ কারণে বছর তিনেক আগে সেই পেশা ছাড়তে হয়েছে। এর পর থেকেই রিকশা চালাই।’

রিকশা চালালেও এখনও আইসক্রিমের ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা হয় তার। এ প্রসঙ্গে ইসলাম উদ্দিন বলেন, ছোট থাকতে যারা আমার আইসক্রিম কিনত, তারা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। ছোট শিশু অনেকেই এখন নিজেরাই বাবা-মা। আমাকে দেখলেই তারা এগিয়ে আসে। রিকশায় উঠলে ভালোবেসে ভাড়াও বাড়িয়ে দেয়। নাঈম বিল্লাহ নামে কেন্দুয়া বাজারের এক যুবক বলেন, গরিব হলেও ইসলাম উদ্দিন খুব সৎ মানুষ। কষ্ট করলেও

তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে। সবসময় পরিপাটি থাকা মিষ্টভাষী এই মানুষটি কখনও কারও ক্ষতি করেন না। তাই এলাকার মানুষও তাকে খুব পছন্দ করেন, ভালোবাসেন।

কেন্দুয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান বলেন, ইসলাম উদ্দিন ও আমি প্রায় সমবয়সী। ছোটবেলা থেকেই তাকে চিনি। তার বাবা আব্দুল হেকিম এক সময় উপজেলার সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু বেঁচে থাকতেই সব জায়গাজমি-সম্পদ বিক্রি করেন তিনি। তার মৃত্যুর পর পরিবারকে অথৈ সাগরে পড়তে হয়।

জীবনের অনেকটা সময় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বাড়িতে কাটাতে হয়েছে ইসলামকে। গরিব হলেও পরিপাটি থাকতে খুব ভালোবাসেন ইসলাম। এজন্য অনেকে নিজেদের ব্যবহূত ভালো পোশাক ইসলামকে দেন। সেসব পোশাক খুব আগ্রহ নিয়ে পরেন ইসলাম। তিনি আরও বলেন, মানুষটা অনেক কষ্ট করলেও কারও কাছে মুখ ফুটে কিছু বলেন না। এখনও ঘরে বিয়ের যোগ্য দুটি মেয়ে রয়েছে। শেষ বয়সে তাদের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন ইসলাম।

কিন্তু এই ছোট্ট উপজেলা শহরে রিকশা চালিয়ে তার খুব কম আয় হয়। কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি তার সাহায্যে এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়তো জীবনের শেষ ক’টা দিন আরামে কাটাতে পারতেন।