অটোরিক্সা চালক মিনার ছেলে পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে, স্বপ্ন হার্টের ডাক্তার বানানো

| আপডেট :  ৮ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রিক্সা চালানো পেশায় নারী! এমনটা চোখে পড়ে না। শ্রী মিনা চৌধুরী। বাড়ি বগুড়া সদরের শাখারিয়ার কালিবালা গ্রামে। মা-বাবা, স্বামী আর ছেলেকে নিয়েই মিনার সংসার। কিন্তু মিনার স্বামী স্বপন চৌধুরী একজন মাইক্রোচালক হিসেবে কাজ করেন ঢাকায়।

ছেলেকে পড়াশোনা করান শহরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। মিনার স্বপ্ন ছেলেকে ডাক্তার বানাবে। তাই একের পর এক অসম্ভব পেশায় দিন চলছে সংগ্রামী মিনার ২১ বছর।

জানা গেছে, বগুড়া সদরের শাখারিয়ার কালিবালা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মিনা চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠে মিনার। নিজের ভালমন্দ বোঝার বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয় স্বপন চৌধুরীর সাথে।

স্বামী ঢাকায় চাকরী করে মাসে বেতন পান দশ হাজার টাকা। মিনা বাল্যকাল থেকেই সংগ্রামী। কখনো পুকুর কিংবা খালের পাশে জন্মানো শাক বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কসমেটিকস সামগ্রী ফেরি করে বিক্রি করেছেন ঢাকা শহরেও। তারপরেও থেমে যায়নি মিনা।

মহাজনের থেকে ভাড়া নিয়ে রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে সংসার সামালদেন তিনি। সম্প্রতি তিনমাস আগে এসেছেন বগুড়ায়। শহরের তিনমাথা বিমান মোড় থেকে বড়গোলা মোড় পর্যন্ত অটোরিক্সা চালান।

বগুড়ায় এসে এক মহাজনের থেকে ভাড়া নিয়ে দিন চুক্তিতে অটোরিক্সা চালান। প্রতিদিন মহাজনকে ভাড়া ও চার্জ বাবদ ৩২০ টাকা জমা দিতে হয়। মহাজনের হিসেব পরিশোধ করে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরে মিনা। মিনার ছেলে শহরের মাটিডালি বাজার সংলগ্ন বিএসডি ল্যাব্রেটারী (ইংলিশ মিডিয়াম) স্কুলে স্ট্যান্ডার্ড থ্রী তে পড়াশোনা করে।

সংগ্রামী নারী মিনা চৌধুরী ’উত্তর অঞ্চলের খবর‘কে জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি স্ট্রাগল করে বড় হয়েছি। আমি সৌদি আরবে গৃহনীর কাজের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে নি’র্যাতন করেছে। বিদেশ থেকে আসার সময় উল্টো আমার বিশ হাজার টাকা কম দিয়েছিল। তখন কেউ সহযোগিতা করেনি।

একজন মানুষকে সহযোগিতার কথা বললে, হয়তো ১০/২০ টাকা দিয়ে বলবে এটা দিয়ে চা খেয়ো। কিন্ত, আমার পেটের ভাতের চাল কেউ কিনে দেবে না। নারী হয়েও পুরুষের পেশায় নিয়োজিত আছি প্রায় বিশ বছর ধরে। সমাজে বিভিন্ন রকমের মানুুষ আছে, সবাই এক না।

অনেক রিক্সাচালক ভাই বলে, আমরাই ভাত পাইনা, আবার মহিলা নামছে অটো চালাতে। আমি তখন কথা শুনে মুখ বন্ধ করে থাকি। কারণ, আমার কিছু বলার নাই। আমার ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আমার স্বপ্ন ছেলেটাকে হার্টের ডাক্তার বানাবো। বগুড়ার কেনো মানুষ আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়নি।’