দুই বেলা খেতে না পাওয়া কৃষকের ছেলেটিই এখন বাংলাদেশের মিচেল স্টার্ক

| আপডেট :  ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:২৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:২৬ অপরাহ্ণ

পঞ্চগড়ের অনুন্নত এক গ্রামে শরিফুল ইসলাম নামের এক কিশোর প্রায়ই গভীর মনোযোগে পুকুরে মাছ শিকার করে দিন কাটাত। কারণ একটাই, নিজের ধৈর্য বাড়ানো। যত সময় বড়শির পেছনে দেয়া যাবে, ততই বড় মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। একইসঙ্গে বাড়বে ধৈর্য।

অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রধান কাণ্ডারি শরিফুল ইসলামের গল্প যার নেতৃত্বে উনিশের বিশ্বকাপ এসেছে বাংলাদেশের হাতে। বর্তমানে এই দলের যে কয়জনকে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ ভাবা হচ্ছে তাদেরই একজন এই বাঁহাতি পেসার। লম্বা গড়নের কিশোরটি যেমন একই জায়গায় টানা বল ফেলে ব্যাটসম্যানকে বিরক্ত করতে ওস্তাদ, তেমনি বাউন্সারে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতেও বেশ পারদর্শী।

আর এই তরুণ আরো নজরে এসেছেন চলমান বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ গাজী গ্রুপ চট্রগ্রামের হয়ে। বল হাতে গতির সাথে দুর্দান্ত ভেরিয়েশনে নজর কেড়েছেন এই বাহাতি। মুস্তাফিজের সাথে জুটি বেধে চট্রগ্রামের পেস আক্রমনকে করেছেন টুর্নামেন্টের সেরা।

কিছুদিন আগে ক্রিকেটবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের উঠে আসার গল্প জানিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ক্রিকেটার হওয়ার ভাবনা কিংবা ভবিষ্যৎ চিন্তা, কোনোটাই নাকি ছিল না শরিফুলের মনোজগতে।সর্বপ্রথম স্থানীয় এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে টেপ টেনিসে তার বল করা দেখে মুগ্ধ হন রাজশাহীর স্বনামধন্য কোচ আলমগীর কবির।

তার ডাকেই দিনাজপুর থেকে রাজশাহীতে আসেন এই বোলার। সালটা তখন ২০১৬। উঠে আসার কৃতিত্ব কোচকে দিতে কার্পণ্যবোধ করেননি শরিফুল, ‘সমস্ত কৃতিত্ব আলমগীর কবির স্যারের। তিনিই আমাকে দিনাজপুর থেকে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন। কিন্তু আমার খেলার মতো কোনো সরঞ্জাম ছিল না।

তিনিই আমার হাতে ভারত থেকে আনা নাইকির একজোড়া নতুন বুট তুলে দেন। সকালে শুধু আমাকে নিয়েই একটা আলাদা প্র্যাকটিস সেশন রাখতেন। বিকেল বেলা যত্ন নিতেন নিজের সন্তানের মতো।এ পেসার যোগ করেন, ‘স্যারের একাডেমিতেই আস্তে আস্তে আমার উন্নতি ঘটতে থাকে, খুব দ্রুত ডাক আসে রাজশাহীর বয়সভিত্তিক দলে।

পরে ঢাকায় তৃতীয় বিভাগের দলে সুযোগ পাই, ২০১৭ সালে খেলি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।প্রিমিয়ার লিগের সেই আসরেই নিজেকে চেনান শরিফুল ইসলাম। মাত্র ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে হন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। সেই সাফল্যে বিপিএল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে যান।

নিজের এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সবচেয়ে সেরা উইকেটটা পেয়েছিলাম বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে। আমরা শ্রীলংকা এ-দলের বিপক্ষে খেলছিলাম। উইকেটে ছিল থিসারা পেরেরা। সে সবার বলেই পেটাচ্ছিল। আমি ভেবে-চিন্তে একটা কাটার দিলাম, সে বোল্ড হয়ে গেল। আমরা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছিলাম।’

উলেখ্য, বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের জার্সিতে অভিষেক হয় শরিফুলের। সেখানে অভিজ্ঞ বিদেশী ক্রিকেটারদের থেকে যখন যেটুকু পেরেছেন শেখার চেষ্টা করেছেন। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে বলতে থাকেন, ‘খুলনা টাইটান্সে অনেকটা সময় কাটিয়েছি কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও ডেভিড মালানের সঙ্গে। তাদের কাছে যতটুকু সম্ভব জানার চেষ্টা করতাম।