নিজের ৩৯ বসন্তে আট বিয়ে করে সর্বস্ব লু’টে নেয়া সেই নীলা এখন জে’লে

| আপডেট :  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৪৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩৬ অপরাহ্ণ

নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সুলতানা পারভীন নীলা। ডাক নাম বৃষ্টি। নিজের ৩৯ বসন্তে বিয়ে করেছেন আটটি। প্র’তারণা করেছেন সব স্বামীর সঙ্গেই। লু’টে নিয়েছেন তাদের সর্বস্ব। তার বি’রুদ্ধে জালিয়াতি ও ভু’ক্তভোগীদের বি’রুদ্ধে মা’মলা, হ’য়রানিসহ বিভিন্ন অ’ভিযোগও রয়েছে।

এ অবস্থায় সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নীলাকে গ্রে’ফতার করে পুলিশ। তার আগে ঢাকার ১৪ নম্বর আ’দালতে হাজির হয়ে প্র’তারণার মা’মলায় জা’মিন আবেদন আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আ’দালতের বিচারক মাইনুল হোসেন তাকে জে’লে পাঠান। এ মা’মলার অপর আ’সামি ও নীলার বড় ভাই শফিকুল আলম বিপ্লবের জা’মিন মঞ্জুর করেছেন আ’দালত।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নীলার বি’রুদ্ধে গ্রে’ফতার পরোয়ানা জারি করেন আ’দালত। নীলার সাবেক (৭ নম্বর) স্বামী এম রহমানের দা’য়ের করা মা’মলার আইনজীবী ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট ওয়াদুদ শাহীন এসব বি’ষয় নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া ঢাকার সিআইডি উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেও এসব বি’ষয়ে নিশ্চিত হয়। এসআই রফিকুল জানান নীলা খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সুলতানুল আলম বাদলের মেয়ে। তিনি বহু বিবাহে আসক্ত। প্র’তারণার ফাঁ’দে ফে’লে ৮ জনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। পক্ষান্তরে তার বিয়ের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

নীলার সপ্তম স্বামী এম রহমান তার বি’রুদ্ধে ঢাকার আ’দালতে প্র’তারণার মা’মলা দা’য়ের করেন। সেই মা’মলার দায়িত্ব পায় ঢাকার সিআইডি। দীর্ঘ ত’দন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট মা’মলার চার আ’সামির বি’রুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করেন আ’দালত।

সিআইডি’র এ এস আই বলেন, নীলা যে বাসার ঠিকানা ব্যবহার করে আসছেন সেটি সঠিক নয়। একেক সময় তিনি একেক পরিচয়ে প্র’তারণার মাধ্যমে বিয়ে করতেন। নতুন স্বামীর সহায়-সম্পত্তি হাতিয় আরেকজনকে টার্গেট করতেন। একই নিয়মে তিনি বাকি বিয়েগুলো করেছেন।

নীলার সাবেক স্বামীদের ভাষ্য, শা’রীরিক গঠন ও রূপ-যৌবনকে পুঁজি করে তিনি প্র’তারণা করতেন। বিয়ের নামে ধনাঢ্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, চাকরিজীবীদের ফাঁ’দে ফে’লে কোটিপতি বনে গেছেন নীলা। যাদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে কথা কা’টাকাটি হতো তাদের বি’রুদ্ধে নি’র্যাতন-যৌ’তুক দাবি সংক্রান্ত একাধিক মা’মলা করতেন খুলনার আলোচিত এ নারী। সর্বশেষ তার বি’রুদ্ধে সম্পর্কের সূত্র ধরে চেক চু’রি করে অপর এক নারীর ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের ঘটনায় মা’মলা হয়।

একাধিক অ’ভিযোগ ও অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, সুলতানা পারভীন নীলা বিয়ের পরপরই তার স্বামীদের কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নিতেন। পরে তা’লা’ক নিতেন। এটি মূলত তার ব্যবসা।

কীভাবে সম্পর্ক গড়তেন নীলাঃ জানা গেছে, সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী পুরুষদের বিভিন্ন মাধ্যমে টার্গেট করতেন নীলা। পরে তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। একটা সময় গিয়ে শা’রীরিক সম্পর্কে জড়াতেন। এরপর থেকেই মূলত শুরু হতো তার দাবি দাওয়া। এসব দাবির মধ্যে প্রথমেই থাকতো বিয়ে। বিয়ের পর স্বামীর সম্পদ নিজের নামে করে নেওয়া। নগদ অর্থ, জমি, গাড়িও নিতেন নীলা। পরবর্তীতে স্বামীর সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা শুরু করতেন। এটি থেকে তিনি পৌঁছাতেন তা’লা’ক পর্যন্ত।

এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিয়ে হয় নীলার। তার সে সময়কার স্বামীর নাম শাহাবউদ্দিন সিকদার। তিনি ছিলেন জাপান প্রবাসী, গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের হরিকুমারিয়া গ্রামে। নীলার বয়স ছিল তখন ১৫ বছরেরও কম। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ঘর থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। তার উচ্ছশৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চু’রির ঘটনায় শাহাবুদ্দিন শিকদার মাদারীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (যার নং- ৭৩৮, তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯) করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে শাহাবুদ্দিন-নীলার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।

২০০৫ সালের ৬ মে খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোডস্থ এসএম মুনির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় নীলার। দ্বিতীয় স্বামীর কাছে নিজেকে ‘কুমারী’ জাহির করে বিয়ে বসেন তিনি। কাবিনে দেন মোহর ধরা হয় মাত্র ১ লাখ টাকা। বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই নীলার উচ্ছশৃঙ্খল জীবনযাপন ও উ’গ্র আচরণের শি’কার হন মুনির।

এক পর্যায়ে বিয়ের সময় পাওয়া স্বর্ণালঙ্কার ও স্বামীর নগদ কিছু অর্থ নিয়ে ঘর ছাড়েন নীলা। এ ঘটনায় সে বছরের ১০ ডিসেম্বর মুনির হোসেন তাকে তা’লা’ক দেন। ২০০৬ সালে মুনিরের বি’রুদ্ধে নারী ও শি’শু নি’র্যাতন এবং পারিবারিক আ’দালতে মা’মলা করেন নীলা। যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মুনিরের কাছ থেকে অর্থ আদায়।

দুবছর পর আবারও একই দাবিতে নগরীর খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোড এলাকার ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন নীলা। ২০০৮ সালের এপ্রিল হওয়া এ বিয়েতে শর্ত ছিল নীলা তার স্বামীকে অপর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ইতালি নিয়ে যাবেন। এতে তাকে দিতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। বনি টাকা দিলে সেটি নিয়ে অন্তরালে চলে যান নীলা। এ সময় থেকে তার প্র’তারণার বি’ষয়টি বুঝতে পারেন বনি। পরে তাদের তা’লা’ক হয়।

এর কয়েক দিন পর নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে প্র’তারণার মাধ্যমে বিয়ে করায় নীলার বি’রুদ্ধে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আ’দালতে মা’মলা করেন বনি। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মা’মলাটি রুজু হয়েছিল।

বনির মা’মলা চলমান অবস্থায় ২০১১ সালে নীলা বিয়ে করেন নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে একজনকে। তার কাছ থেকেও নগদ অর্থসহ সম্পদ লু’ট করেন নীলা। পরে প্র’তারণার বি’ষয়টি বুঝতে পেরে ইফতেখার আমেরিকায় চলে যান। ২০১২ সালে নীলা বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে। ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্ম’দ আজিম ও ২০১৮ সালে খুলনার এম রহমানকে বিয়ে করেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকায় মো. আব্দুল বাকী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বাকীর কাছ থেকে একটি চেক ও নগদ অর্থকড়ি চু’রি করেন নীলা। পরে তাদের ছাড়াছাড়ি হলে বাকী বি’ষয়টি নিয়ে ঢাকার আ’দালতে মা’মলা দা’য়ের করেন। এ ছাড়া প্র’তারণা ও জালিয়াতিসহ অ’পকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে গ্রে’ফতার ও ক’ঠোর শা’স্তির দাবিতে ২০২১ সালের ২২ মার্চ দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি।