বাবা চলে যাওয়ার পর শুরু হয় প্রভাবশালী মরিয়মের উ*শৃঙ্খল জীবন-যাপন!

| আপডেট :  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার গৃ’হবধূ রহিমা বেগম নি’খোঁজ হওয়ার পর থেকে নানা নাটকীয় মোড় দেখা যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের লাইমলাইটে আসা, তার নানা পোস্ট, মায়ের লা’শ পাওয়ার দাবি ভাবিয়ে তুলেছিল সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

রহিমাকে পাওয়ার পর পাল্টেছে মরিয়মের ভাষাও। এসব কিছু নিয়ে গণমাধ্যমের পাঠক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা যখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত, তখন উঠেছে আরেক অ’ভিযোগ। মরিয়ম মান্নান নাকি প্রভাবশালী, ঢাকায় তার আছে বিভিন্নজনের সঙ্গে সম্পর্ক!

এ অ’ভিযোগ তুলেছেন রহিমা বেগম নি’খোঁজ হওয়ার ঘটনায় দা’য়ের হওয়া মা’মলার আ’সামি ফুলবাড়িগেট এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার। হেলাল শরীফ গ্রে’ফতার আছেন।

মনিরা আক্তার জানান, তার স্বামী হেলাল বিনা অ’পরাধে গত ২৮ দিন ধরে জে’ল খাটছেন। গত ৩০ আগস্ট হেলালকে গ্রে’ফতার করে পুলিশ। আগামী অক্টোবরে তার স’ন্তান প্রসবের কথা থাকলেও স্বামীর দুশ্চিন্তায় গত ৬ সেপ্টেম্বর অ’স্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়ে স’ন্তানের জন্ম দেন তিনি।

মনিরা আরও বলেন, মরিয়ম খুব প্রভাবশালী। ঢাকার বিভিন্ন লোকের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি নিজে তার মায়ের নি’খোঁজ হওয়ার মতো গর্হিত কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। প্রভাবশালী লোক দিয়ে তিনি পুলিশকে প্রভাবিত করে আমার স্বামীকে জে’ল খাটাচ্ছেন।

তিনি বলেন, মরিয়মের কারণে অ’পরাধ না করেও আমার স্বামী জে’ল খাটছেন। এতে আমাদের হ’য়রানি, অর্থদ’ণ্ড ও মানহানি হয়েছে। আমরা নিশ্চিত, গ্রে’ফতার হওয়া কেউই এ ঘটনার সঙ্গে জ’ড়িত ছিলেন না। মনিরা আশা করছেন দ্রুত তার স্বামী জে’ল থেকে ছাড়া পাবেন। অন্যথায় তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন।

মরিয়মের বি’রুদ্ধে মনিরা আক্তারের অ’ভিযোগ যাচাইয়ের জন্য যোগাযোগ করে রহিমা বেগম নি’খোঁজের ঘটনায় দা’য়ের হওয়া মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। বিকেলে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অ’ভিযোগের এ বি’ষয়টি আমি জানি না। রহিমা বেগম আ’দালতে জ’বানব’ন্দি দিচ্ছেন। এসব বি’ষয় সম্পর্কে পরবর্তীতে জানানো হবে।

এদিকে, মা হা’রানো নিয়ে মরিয়ম মান্নান যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত সেগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা করেছিলেন নেটিজেনরা। কিন্তু শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজে’লার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে রহিমা বেগমকে উ’দ্ধারের পর পরই আলোচনা রূপ নেয় সমালোচনায়।

প্রথম দিকে যারা মরিয়মের মায়ের খোঁজের আন্দোলনের পোস্টগুলো লাইক-কমেন্টে-শেয়ার করে ভার্চ্যুয়ালি সঙ্গে ছিলেন এখন তারাই বি’রুদ্ধে লিখছেন।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) ‘রহিমা নি’খোঁজের নাটকে কা’রাগারে যারা, তাদের কী হবে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। পাঠকরা এ সংবাদ পড়ার পর জানিয়েছেন নিজ নিজ অভিব্যক্তি-

ফেসবুকে আসাদুজ্জামান আসাদ নামে একজন লিখেছেন- মরিয়ম মান্নান হয়তো নিয়মিত ক্রা’ইম পেট্রোল দেখেন। দারুণ অভিনয় করছেন তিনি। অনেকদিন পর বাংলাদেশে এমন অভিনয় দেখলাম! সত্যি অসাধারণ।

রকিব খান লিখেছেন, এদের এ অভিনয়ের কারণে হাজার হাজার সত্যিকারের গু’মকেও ছোট করে দেখা হবে। তাই এদের ক’ঠোর শা’স্তি দেওয়া হোক, যাতে করে এ দুঃসাহস কেউ আর না দেখায়। এরা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে। এরা জাতি এবং সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর।

মো. সোহেল নামে একজন বলেছেন, এ মরিয়ম ও তার মায়ের ব্যাকগ্রাউন্ড খতিয়ে দেখা উচিত। এমনও হতে পারে ভিন্ন ইস্যুর আড়ালে দেশের প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখার জন্য এ গু’মের নাটক সাজিয়েছে। অন্যপাশ থেকে হয়তো বড় ধরনের কিছু ঘটতে চলেছে। ময়মনসিংহে মহিলার লা’শের কাপড়-চোপড়ের সু’রতহালের সঙ্গে নাকি তার মায়ের অবিকল মিলে গেলো- সেটা কীভাবে বললো মরিয়ম? তাকে দিয়ে দাবার গুটি চালাচ্ছে না তো কোনো পক্ষ? দ্রুত তাকে র‌্যা’ব-৬ এর রি’মান্ডে নেওয়ার জো’র দাবি জানাই।

মো. আবু ইউসুফও এমনই মন্তব্য করে লিখেছেন, দেশের মানুষের আবেগ নিয়ে পরবর্তীতে কেউ যেন আর এমন খেলা না খেলে।

ফেরদৌস আহমেদ বলেছেন, মরিয়মের এ ঘটনার ফলে দেশের অসংখ্য গু’ম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের কা’ন্নাকে স’ন্দেহে রূপান্তর করে দেবে। হালকা হয়ে যাবে শত শত পরিবারের অ’ভিযোগ।

রহিমা বেগম সবচেয়ে বড় অ’পরাধী। মেয়েরাও সব জানতেন- ওরা বড় নাটকবাজ। যারা আশ্রয় দিয়েছেন তাদেরসহ সবাইকে আইনের আতাওয় আনার দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

কে এই মরিয়ম মান্নান? বর্তমানে মরিয়ম মান্নান একজন নারীবা’দী নেত্রী। তিনি একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১২ সালে তার বাবা আব্দুল মান্নানের মৃ’ত্যু হয়। এ সময় এসএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। পাস করার পরে চলে আসেন ঢাকায়। শুরু হয় উশৃঙ্খল জীবন-যাপন।

ঢাকা আসার বেশ কিছুদিন পর তিনি বিয়ে করেন এক ডেন্টাল চিকিৎসককে। পরে তাকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করেন বরিশাল জে’লায়। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আপনজনরা তেমন কিছুই জানেন না। ঢাকার অভিজাত একটি এলাকায় দুই-তিনটি নারী হোস্টেল খুলে ব্যবসা করছেন। সেখানে অবাধে নারী-পুরুষের যাতায়াত রয়েছে। একটি অসমর্থিত সূত্র এমনটি দাবি করেছে। ফেসবুকে মরিয়মের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেখে সূত্রটির দাবির সঙ্গে মিলে যায়।

মরিয়ম নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।

রহিমা বেগম যখন নি’খোঁজ হন; গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গায় তার ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে সক্রিয় উপস্থিতি ছিল মরিয়মের। তার কা’ন্নার মধ্যে ছিল র’হস্য, কথার ভেতর লুকোচু’রি। কখনোই তিনি গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য দেননি। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তার রূঢ় আচরণের অ’ভিযোগও রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের বি’রুদ্ধেও এ ত’রুণী নানা অ’ভিযোগ তুলেছেন।

দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, মরিয়ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে এক এক সময় এক এক রকম মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় আমরা বিব্রত। মা হা’রিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে যে কেউ একটু রিয়্যাক্ট করেন। এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে চাই। নিশ্চয়ই তিনি (মরিয়ম মান্নান) এখন কোনো পোস্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করবেন এবং উনার ভু’ল উনি স্বীকার করবেন।

মাকে পাওয়ার পর যা বললেন মরিয়ম রহিমা বেগমকে উ’দ্ধারের পর খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে আসেন মরিয়ম। সেখান তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় তাকে। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। তিনি বলেন, আমার মাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি এটাই বড় কথা। এর চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে না। আমি আমার মাকে দেখেছি। এখন তার কাছে যেতে চাই।

এ ঘটনায় নিরপরাধ কয়েকজন ব্যক্তির বি’রুদ্ধে কেন মা’মলা দেওয়া হলো প্রশ্ন করলে মরিয়ম বলেন, তারা আমাদের পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে হু’মকি দিয়েছেন, নি’র্যাতন করেছেন। সেই স’ন্দেহের যায়গা থেকে তাদের নামে মা’মলা করা হয়।

আগেও লাইমলাইট পেয়েছেন মরিয়ম মান্নান চার বছর আগেও কোটা আন্দোলনে পুলিশি হেফাজতে নিজের ও’পর নি’র্যাতনের অ’ভিযোগ তুলে লাইমলাইট পেয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। শা’রীরিকভাবে তাকে হে’নস্তা করা হয়েছে বলে অ’ভিযোগ তুলে ভাইরাল হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পোস্ট ছবি ভিডিও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করে।

সে সময় তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন মরিয়ম মান্নান। একটি ভিডিওতে দেখা যায়- কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ মিনারে প্র’তিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। কয়েকজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন।

উত্তেজিত অবস্থায় তখন সাংবাদিকদের বলেন, আপনার জানতে চান ওই দিন তারা আমার কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিল? কি বলেছিল? আপনাদের শুনতে ইচ্ছে করছে, আমার কোথায় কোথায় ধরেছে? আমাকে কীভাবে কী করেছে? সবাই আমাকে ফোন দিচ্ছে, তোমাকে কী করেছে? এখন কী আমি লাইভে যাব? লাইভে গিয়ে বলব আমাকে কী করেছে? কেমন করে ধরেছে? আমি কা’ন্না করব আর সবাই আমাকে সহানুভূতি দেখাবে? সূত্রঃ বাংলানিউজ