ডাকাতি ছেড়ে হজে গিয়ে ভিক্ষা করে ২০ বিঘা জমির মালিক মতিয়ার

| আপডেট :  ২৭ জুন ২০২২, ০৯:৪০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ জুন ২০২২, ০৯:৪০ অপরাহ্ণ

ছিলেন ডাকাত সর্দার। ডাকাতিতে ধরা পড়লে গণপি’টুনির শি’কার হন। ওই সময় দুই হাতের আঙুল ভে’ঙে দেওয়া হয়। সেখানে ক্ষ’ত সৃষ্টি হলে দুই হাতের কবজি কে’টে ফে’লেন চিকিৎসক। পরে পেশা বদলে হয়ে যান ভিক্ষুক। ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও সৌদি আরব গিয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন।

বিশেষ করে প্রতিবছর হজের মৌসুমে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। গত ১৫ বছর ভিক্ষা করে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। ভিক্ষার টাকায় নিজ গ্রামে কিনেছেন জমি। বর্তমানে ২০ বিঘা কৃষিজমির মালিক। বলছিলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজে’লার মতিয়ার রহমানের কথা। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় এবার সৌদি পুলিশের হাতে গ্রে’ফতার হলে বি’ষয়টি জানাজানি হয়।

গাংনী উপজে’লার সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা মতিয়ার রহমানকে গ্রামের সবাই ‘মন্টু ডাকাত’ বলে চেনেন। কারণ একসময় ডাকাত দলের সর্দার ছিলেন। গণপি’টুনির শি’কার হয়ে হাতের কবজি হা’রানোর পর এলাকা ছেড়ে বিদেশে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কম খরচে ভারত হয়ে হজে যাওয়া সহজ হওয়ায় প্রতিবছর হজে যান মতিয়ার। এ পর্যন্ত ১২-১৩ বার হজে গেছেন। প্রতিবছর ভিক্ষা করে দেশে ফিরে জমি কেনেন। মূলত হজ করতে নয়, ভিক্ষা করতেই যান। ক’রোনার কারণে এবং সীমান্ত বন্ধ থাকায় গত দুই বছর হজে যাননি। এবার ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস (হজ লাইসেন্স নং-৭৩৭) এজেন্সির মাধ্যমে হজে গিয়েছিলেন।

ধর্ম ম’ন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২২ জুন সৌদি স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে ম’দিনায় ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রে’ফতার হন।পরবর্তী সময়ে তাকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনে সৌদিস্থ বাংলাদেশ হজ মিশন। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় এ ঘটনায় ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এজেন্সির বি’রুদ্ধে ‘কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না’ তার জবাব দিতে নোটিশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সিন্দুরকোটা গ্রামের আফজল হোসেন, হারুন অর রশিদ, জামাল মিয়া ও জাকির হোসেনসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, ডাকাতিতে ধরা পড়ে দুই হাতের কবজি হা’রানোর পর ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। ‘মন্টু ডাকাত’ বলে ডাকলেও গ্রামের মানুষ এতদিন তাকে সহজ-সরল মনে করতেন। তবে গ্রামে ভিক্ষা করতেন না। হজের মৌসুমে প্রতিবছর সৌদি আরবে চলে যান। হজের মৌসুম শেষ হলে বেশিরভাগ সময় ভারতে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে খুব কম সময় থাকেন। এবার ধরা না পড়লে গ্রামের লোক জানতেন না তিনি ভিক্ষা করেন।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের লোকজনকে সংঘবদ্ধ করে সৌদিতে ভিক্ষা করেন মতিয়ার। হজের মৌসুম শেষ হলে দেশে ফিরে আসেন। তবে বেশিদিন গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে ভারতে বেশিরভাগ সময় কাটে তার।