কেউ বিউটিকে এক কৌটা দুধ দেবেন?

| আপডেট :  ২০ জুন ২০২২, ১২:৩৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ জুন ২০২২, ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

আলামিন। বিউটির কোলে যেন ৯ মাসের ফুল। আলামিনের জন্মের তিন মাস পরই তার বাবা আমিনুর বোহেমিয়ান। বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে মা-ছেলে এখন নির্মম এক পরীক্ষায়। সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে হয়েছে তাদের ঠাঁই।

বানের জল থেকে বাঁচলেও ক্ষুধার জ্বালা নিভছে না কোনোভাবেই। তিন দিন আগে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার পর থেকেই আলামিনের অবিরাম কান্না। মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছে ছোট্ট শিশুটা। এখন আলামিনের জন্য এক কৌটা দুধ খুবই প্রয়োজন।

হতদরিদ্র মা বিউটি বেগম বললেন, ‘ভাত খাইয়্যা অভ্যাস। ভাত খাইলে ছেলেও দুধ পায়। তিন দিন একবেলা চিড়া খাইয়্যা আছি। কীভাবে সন্তান দুধ পাবে।’ বিউটির সঙ্গে কথা বলার সময় ক্লান্তিতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে শিশুটি। ছেলের শরীরের ওপর ময়লা-জীর্ণ একটি কম্বল জড়িয়ে দিলেন মা। একটু পরই আবার কেঁদে ওঠে শিশুটি। তখন আশ্রয়কেন্দ্রের অন্য শিশুরা আলামিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে।

বিউটি জানান, তাঁর বাবা বাক প্রতিবন্ধী। ছয় ভাইবোনের সংসার। জীবনে কখনও সুখ ধরা দেয়নি। বড় স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর কিছু দিন ভালোই চলছিল। তবে ছেলে হওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে তাঁর স্বামী।

টানা তিন মাস একবারের জন্যও খোঁজ নেননি। বন্যায় ছেলেকে নিয়ে পড়েছেন মহাবিপদে। বিউটির ভাষ্য, কোথাও থেকে ভাত কিনে খাব সেই অবস্থাও নেই। হাতে তার এক পয়সাও নেই। আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর এক দিন একজন এসে কিছু চিড়া-মুড়ি দিয়ে যান। অভ্যাস না থাকায় সেটা খেতেও কষ্ট হচ্ছে তাঁর।

আশ্রয়কেন্দ্রে বিউটি যে কক্ষে থাকছেন তার পাশেই পরিবার নিয়ে আছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ হাদিস মিয়া। তিনি বলেন, ‘শিশুটি দিন-রাত কাঁদছে। এটা চোখে দেখা যায় না। আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলাসহ আশপাশ ডুবে যাওয়ায় কেউ সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এদিকে আসে না।

আমরা মরে গেলে কেউ টের পাবে বলে মনে হয় না। কেউ যদি এক কৌটা দুধ কিনে দিতেন। তাহলে হয়তো ওর কান্না থামত। ওর মাও মাঝে মধ্যে চিৎকার দিয়ে কান্না করে বলছে, ‘এক কৌটা দুধ যদি কেউ দিতেন।’