‘মায়ের ফোন কলটি যেন আমার বেঁচে যাওয়ার উসিলা হয়ে এসেছিল’

| আপডেট :  ৬ জুন ২০২২, ০৭:৪২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ জুন ২০২২, ০৭:৪২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের একটু পরেই মাকে ফোন করে সেটি জানান হাফিজুর রহমান। আগুন লাগার খবর পেয়ে মায়ের মন আর মানছে কোথায়! একটু পর পরই ছেলের খবর নিচ্ছিলেন। মাকে বারবারই ফোনে অভয় দিয়ে যাচ্ছিলেন ছেলে। বিস্ফোরণের ঠিক আগ মুহূর্তে দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে এসে প্রাণে বেঁচে যান হাফিজুর রহমান।

হাফিজুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ড অদূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন তিনি। এর মধ্যেই আগুন আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়লে ভিড়ও বাড়তে থাকে। ফলে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল। বিস্ফোরণের একটু আগে আবার হাফিজকে ফোন দেন মা। মায়ের কথা ভালোভাবে শুনতে হাফিজ ভিড় থেকে অনেকটা দূরে সরে আসেন। এর মধ্যেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। বন্ধ হয়ে যায় হাফিজের ফোন। কোনোরকমে দৌড়ে সরে যান নিরাপদ দূরত্বে। ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় যেন নির্বাক হয়ে পড়েন হাফিজুর। কিছুক্ষণ পর থেকেই আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর।

তিনি আর জানান, তার মোবাইলটি বন্ধ থাকায় পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। আবার কারও কাছ থেকে মিলছিল না তাঁর সন্ধানও। তাঁর খোঁজ পেতে তাই চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাটের বাসা থেকে রওনা হন ভাগনে কামরুল হাসান নিয়াজ ও নুরুল আবছার বাবুল। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান তাঁরা। তবে হাজারো মানুষের ভিড় থেকে কোনোভাবেই মামা হাফিজুরকে শনাক্ত করতে পারছিলেন না তাঁরা। আড়াই ঘণ্টা ধরে তাঁরা চষে বেড়ান আশপাশের এলাকায়। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে হতাশ হয়ে যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দেখে শহরে ফেরার চেষ্টা করছিলেন তখনই খোঁজ মেলে হাফিজের।

হাফিজুর বলেন, বিস্ফোরণের একটু আগেও ঘটনাস্থলের একেবারেই কাছে ছিলাম। এমন সময় আমার মা ফোন করলে কথা বলার জন্য দূরে সরে যাই। তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরণটি ঘটে। আমার মায়ের কলটি যেন আমার বেঁচে যাওয়ার উসিলা হয়ে এসেছিল। সেই ফোনটা না এলে আমি বিস্ফোরণের মাঝখানেই পড়ে যেতাম।

হাফিজুর আরও বলেন, কোনোমতে দৌড়ে নিরাপদে সরিয়ে আসি। কিন্তু মোবাইলের চার্জ না থাকায় পরিবারকে জানাতে পারিনি। পরিচিত যারা ছিলেন বিস্ফোরণে তাদের অনেকের মোবাইল ফোনও নষ্ট হয়ে যায়। সহকর্মীদের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা সবাই বিহ্বল হয়ে পড়ি। আল্লাহ আমার মতো যদি অন্য সহকর্মীদের কোনো না কোনো উসিলায় বাঁচিয়ে দিতেন!

হাফিজুরের ভাগনে নিয়াজ ও বাবুল বলেন, মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় কোনোভাবেই মামার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এদিকে পরিবারের সবার মধ্যে আতঙ্ক আর উদ্বেগ কাজ করছিল। আশপাশের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করতে না পেরে আমরাও হতাশ হয়ে পড়ি। হঠাৎ রাত তিনটার দিকে একটা নম্বর থেকে আমার নানুর কাছে ফোন দেন মামা। পরে সেই নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে মামার সাক্ষাৎ পাই।