কুয়াকাটা সৈকতে ডুব দিয়ে যেভাবে ভারতের চেন্নাই গেলেন পর্যটক

| আপডেট :  ৫ জুন ২০২২, ১১:৪৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৫ জুন ২০২২, ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

কুয়াকাটা সৈকতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ ব্যবসায়ী ফিরোজ শিকদার ভারতের চেন্নাই কোস্টগার্ডের হেফাজতে রয়েছেন। শনিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত ১২টার পর ফিরোজের সঙ্গে মহিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়েরের মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিরোজের ভাই মাসুদ শিকদার।

এদিকে ফিরোজের বাড়ি ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা। তবে তিনি চেন্নাই কীভাবে গেছেন তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না কেউ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিরোজ শিকদার পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের আমখোলা বাজারে তার একটি দোকান আছে। ফিরোজের বড় ভাই মাসুদ শিকদারেরও একটি দোকান রয়েছে।

ফিরোজ ব্যবসায়িকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মগোপনে থাকার জন্য নিখোঁজের নাটক সাজানোর চেষ্টা করছেন কিনা- এমন প্রশ্নে ফিরোজের বড় ভাই মাসুদ শিকদার বলেন, আমরা ব্যবসায়িকভাবে খুবই ভালো আছি। এমন সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। আমখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, ফিরোজের ভাই মাসুদ শিকদার বলছেন ফিরোজ চেন্নাই আছেন। ফিরোজ কীভাবে চেন্নাই গেছেন তা আমি জানি না। ফিরোজ ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

পুলিশ ও ফিরোজের ভাই মাসুদ জানান, গত ২৬ মে ফিরোজ তার বন্ধুদের নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে যান। বিভিন্নভাবে খোঁজাখুঁজির পর শনিবার দুপুরে নিখোঁজ ফিরোজের ভাই মাসুদ শিকদারের মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন আসে। ওই ফোনে ফিরোজ তার ভাইকে জানান, তিনি ভারতের চেন্নাই আছেন এবং গত ২৭ মে দুপুরে কুয়াকাটা সৈকতে গোসল করার সময় সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যান। পরে একটি কলাগাছ ধরে ভাসতে ভাসতে ভারতের জলসীমায় পৌঁছালে ভারতীয় জেলেরা তাকে উদ্ধার করে সেখানকার কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করেন। চিকিৎসা শেষে তিনি এখন অনেক সুস্থ আছেন।

ফিরোজের স্ত্রী সীমা বলেন, আমরা খুঁজে যখন হতাশ হয়েছি তখন মাসুদ ভাইয়ের কাছে একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। তিনি বাড়িতে জানিয়েছেন ফিরোজ জীবিত আছেন। ভারতের চেন্নাই রয়েছেন। তার সঙ্গে গতকাল দুই বার কথা হয়েছে।

সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া ফিরোজের বন্ধু মো. ওহিদুল ইসলাম বলেন, ফিরোজ আর তার ভাগনে ও শ্যালকসহ মোট সাতজন বেড়াতে গিয়েছিলাম। সবাই সৈকত থেকে উঠলেও ফিরোজকে খুঁজে না পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দেই। গতকাল বিকেলে শুনছি ফিরোজ তার বড় ভাই মাসুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে। ফিরোজ ভেসে চেন্নাই চলে গেছে। আমাদের বন্ধু সুস্থ আছে এটাই আল্লাহর রহমত।

ফিরোজের ভাই মাসুদ শিকদার বলেন, গত ২৭ মে দুপুর থেকে কুয়াকাটা ও আশপাশ এলাকায় অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ভাইকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। এরপর স্থানীয়দের পরামর্শে বিভিন্ন স্থানের ফকির কবিরাজ ও গণকদের শরণাপন্ন হই। আমি ফরিদপুরের ভাঙ্গার কাছাকাছি পৌঁছি। আনুমানিক দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে একটা ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই শুনি আমার ভাই ফিরোজ কান্নাকাটি করতেছে। ওর কান্নার শব্দ শুনে আমিও কান্নায় ভেঙে পড়ি। পরে ওর কাছে জানতে চাই কোথায় আছিস? তুই এই নম্বর পাইলি কই? তখন ফিরোজ বলল, ‘ভাইয়া আমি এহন ইন্ডিয়ার চেন্নাই আছি।’

সেখানে গেলি কেমনে বলার সঙ্গে সঙ্গে ভাই আমারে কইলো- ‘ওইদিন গোসল করার সময় তুফানে আমারে সাগরের মধ্যে লইয়া গেছে। অনেক দূরে যাওয়ার পর একটি কলাগাছ পাই। হেইডা ধইরা মুই ভাসতে থাহি। মনে হয় একদিন এক রাইত অইবে এভাবে ভাসতে ভাসতে মোরে ইন্ডিয়ান জেলেরা উদ্ধার করে ওইহানের কোস্টগার্ডের কাছে দেয়। হেইয়ার পর মুই সুস্থ অইয়া আপনেরে ফোন দিছি।’

মাসুদ শিকদার বলেন, আমার সঙ্গে ফিরোজের যে নম্বর দিয়ে কথা হয়েছে তা আমি প্রশাসন ছাড়া কাউকে দিব না। আর ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যখন যা হবে তা পরে আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানানো হবে।

এ বিষয়ে কুয়াকাটার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল খালেক বলেন, ফিরোজের সন্ধান পাওয়ার খবর তার ভাই মাসুদ জানিয়েছেন। তবে যে নম্বর থেকে কথা হয়েছে সে নম্বরটি চাইলে গত দুদিন ধরে দিবে বলেও আজ (৫ জুন) বিকেল ৪টা পর্যন্ত দেয়নি। ফিরোজ চেন্নাই বা কোথায় আছে সেটা এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। তবে সংবাদ পেলে অবশ্যই জানাব।

মহিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, গত ২৬ মে ফিরোজ কুয়াকাটা এসে নিখোঁজ হন। মহিপুর থানায় তার ভাই মাসুদ জিডি করেন ২৮ মে। ফিরোজের ভাই মাসুদ গত শনিবার নিশ্চিত করেছেন ফিারোজ ভারতের চেন্নাই কোস্টগার্ডের হেফাজতে রয়েছেন। শনিবার রাত ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে +৯১— একটি নম্বরে ফিরোজের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি তার বাবার নাম ও পরিচয় দিয়েছেন। ফিরোজ এখন সুস্থ ও জীবিত আছেন। দেশে ফিরে আসলে সব তথ্য জানা যাবে। ফিরোজ বর্তমানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আছেন এটা নিশ্চিত। তবে কীভাবে ভারত গেছেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। ফিরোজ ও তার ভাই মাসুদের বক্তব্য একই।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মে গলাচিপা উপজেলার আমখোলা বাজারের সাত বন্ধু মিলে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসেন। পরদিন দুপুরে পাঁচ বন্ধু শ্যালক ও ভাগনেসহ সাতজন সমুদ্রে যান। ইয়ামিন বাদে বাকি সবাই সাগরে গোসল করতে নেমেছিলেন। কিছু সময় পর সবাই তীরে উঠে ছবি তোলে। এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সবাই একসঙ্গে হলেও ফিরোজকে পাওয়া যায়নি। পরে এক এক করে সবাই ওপরে ফিরে আসলেও ফিরোজকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখোঁজি করেন তার বন্ধুরা। পরে ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।