ছেলে সেনা অফিসার, পেটের দায়ে রিকশা চালান আশি বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা!

| আপডেট :  ৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:১৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৩:১৭ অপরাহ্ণ

ছেলে সে’না অফিসার – ‘নিজের সব সুখ বি’সর্জন দিয়ে স’ন্তানকে লালন-পালন করেছি। মাথার ঘাম মাটিতে ফে’লে স’ন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে সুশিক্ষিত করে সে’নাবা’হিনীর চাকরি নিয়ে দিয়েছি।কিন্তু আজ সেই স’ন্তান আমার কোনো খবর নেয় না!’ডু’করে কেঁ’দে কেঁ’দে এমন করেই কথাগুলো বলছিলেন আশি বছরের এক বৃ’দ্ধ বাবা। যিনি পেটের দা’য়ে সাভারের আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় রিকশা চালান।

স্ত্রী’র মৃ’ত্যুর পর জী’বনের পড়ন্তবেলায় আপন স’ন্তানের চ’রম অ’বহেলা অনাদরে নিদারুণ মা’নসিক য’ন্ত্রণা নিয়ে মৃ’ত্যুকে আলিঙ্গন করছেন এই বৃ’দ্ধ। আজ তার কাছে প’রিবার আর ছে’লে-মে’য়েদের জন্য জীবনের সব পরিশ্রম যেন বৃ’থা। কিন্তু এতকিছুর পরও স’ন্তানদের প্রতি কোনো অ’ভিযোগ নেই এই বা’বার। চান স’ন্তানরা ভালো থাকুক, আল্লাহ্‌ তাদের ভালো রাখুক।

২২ সেপ্টেম্বর, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় এসএ পরিবহন বাইপাইল শাখার সামনে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক বৃ’দ্ধ। এমন সময় গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন দুই যু’বক। হঠা বৃ’দ্ধক দেখে জানতে চান যাবেন কিনা? অবশেষে ২০ টাকা ভাড়া মিটিয়ে দুজনকে রিকশায় বসিয়ে তিনি চালাতে শুরু করলেন।

কিন্তু যে বয়সে তার একা চলতেই ক’ষ্ট হয়, সে কিভাবে দুজন মানুষকে পা ঘুরিয়ে রিকশা টে’নে নিয়ে যাবেন? বি’ষয়টি বুঝতে সময় লাগলো না দুই আরোহীর। বৃ’দ্ধের ক’ষ্ট সইতে না পেরে মাত্র দুই মিনিট পরই রিকশা থেকে নেমে গেলেন তারা।পরে রিকশা রাস্তার পাশে রেখে দুই যুবক জানতে চাইলেন এই বয়সেও কেন রিকশা চালান তিনি। আর তখনই স’ন্তানদের চ’রম অ’বহেলার কথা অক’পটে স্বী’কার করে কেঁ’দে ফে’ললেন এই বৃ’দ্ধ।

এদিকে পুরো ঘটনা মোবাইলে ক্যামেরা ব’ন্দি করেন তাদের মধ্যেই একজন। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাড়েন রিকশার আরোহী মামুন দেওয়ান। যা এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।

বৃ’দ্ধ জানায়, বা’র্ধক্যজনিত কারণে কয়েক বছর আগে বৃ’দ্ধের স্ত্রী মা’রা যান। তার তিন ছে’লে, এক মেয়ে। মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে আলতাফ হোসেন একজন সে’নাবা’হিনীর অফিসার। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইলে কর্মরত।

তবে টাঙ্গাইলের কোন ক্যা’ন্টনমেন্টে আছেন সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। আর মেঝো ছেলে টেলিভিশন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স মেকানিক এবং ছোট ছেলে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।

ভিডিওতে বৃ’দ্ধকে বলতে শোনা যায়, বড় ছে’লেকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চ শিক্ষিত বানিয়েছিলাম। ২৬ বছর আগে সে’নাবা’হিনীর চাকরি নিয়ে দিয়েছি। তারপর কয়েক দফায় টাকাও দিয়েছি। এখন ছে’লে ঢাকায় বাড়ি করেছে। কিন্তু আমার কোনো খোঁজ খবর নেয়না।

জানা যায়, চারজন ছে’লে-মে’য়ে থাকতেও বৃ’দ্ধ বাবার জায়গা হয়নি কোথাও। ভাড়া বাসায় থাকেন আশুলিয়ার বাইপাইলে। পেটের দায়ে রাত পোহালেই ছুটতে হয় রিকশা নিয়ে। বৃ’দ্ধ হওয়ায় সব মানুষই তার রিকশায় উঠতে চান না, যার কারণে কোনদিন ১০০, আবার কোনদিন ১৫০ টাকা রোজগার করেন। এই দিয়েই বাসা ভাড়া এবং খেয়ে না খেয়ে ক’ষ্ট করে দিন পার করছেন।

এদিকে বৃ’দ্ধের ভিডিওটি প্রতিবেদকের নজরে আসলে সময়ের কণ্ঠস্বর থেকে যোগাযোগ করা হয় বৃ’দ্ধের রিকশার আরোহী সেই যুবকের সঙ্গে। যিনি আশুলিয়া থানাধীন পাথালিয়া ইউনিয়নের কুরগাও পুরাতন পাড়া এলাকার সাঈদ দেওয়ানের ছেলে মামুন দেওয়ান।ঘটনার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, এসএ পরিবহন বাইপাইল শাখার সামনে থেকে ভলিবদ্দ বাজারে যাওয়ার জন্য আমরা দুইজন বৃ’দ্ধের রিকশায় উঠি।

উঠার আগে বললাম, নিতে পারবেন কি চাচা? তিনি বললেন, বাবা উঠেন। না নিতে পারলে টাকা দিয়েন না। পরে উঠার পর দেখলাম রিকশা টে’নে নিতে ক’ষ্ট হচ্ছিল তার। চেষ্টা করছিলাম মুরব্বিকে রিকশায় বসিয়ে আমরা চা’লিয়ে নিয়ে যাব, কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায় দু’র্ঘটনার ভ’য়ে সেটাও পারিনি। পরে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে নেমে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি।

মামুন দেওয়ান বলেন, সে’নাবা’হিনীতে যারা চাকরি করেন আমরা মনে করি তারা দেশের বিবেকবান এবং তাদের বলা হয় সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাদের দারা কোনো অ’নাচার হবে এটি আমরা বিশ্বাস করি না। কিন্তু এই বৃ’দ্ধ বাবার জী’বনের ঘটনা ম’র্মান্তিক। যে স’ন্তানকে মা’নুষের মতো মানুষ করেছেন। অথচ আজ এক ছে’লে স’রকারি চাকরি করলেও তাকে দেখার কেউ নেই। এটি খুবই ল’জ্জাজনক। আজ তিনি রাস্তায় কা’ন্না করছে।

“কিন্তু অবাক করা বি’ষয় হচ্ছে, স’ন্তানরা কোনো খবর না নিলেও তাদের প্রতি তার কোনো অ’ভিযোগ নেই। বৃ’দ্ধের চাওয়া তার স’ন্তানরা সব সময় স্ত্রী-স’ন্তান নিয়ে ভালো থাকুক।”

তবে ওই বৃ’দ্ধের বিস্তারিত পরিচয় জানতে পারেনি মামুন দেওয়ান। তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, গতকাল বৃ’দ্ধের নাম বা গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানতে ভু’লে গিয়েছিলেন তিনি। আজ ফের দেখা হলে নাম পরিচয় জানতে চাইবেন।