২১ মাস পর একই কারাগারে প্রদীপ-চুমকি!

| আপডেট :  ২৪ মে ২০২২, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ মে ২০২২, ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ

এক বছর ৯ মাস পর স্ত্রী চুমকির দেখা পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্ম’দ রাশেদ খান হ’’ত্যা মা’মলায় মৃ’ত্যুদ’ণ্ডপ্রাপ্ত কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ব’রখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আ’দালতের এজলাস কক্ষে দেখা হয় তাদের। এ দিন দুদকের করা অ’বৈধ সম্পদ অর্জনের মা’মলায় আ’দালতে আত্মসমর্পণ করে জা’মিনের আবেদন করেন চুমকি। পরে আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কা’রাগারে পাঠায় আ’দালত।

একইদিন এ মা’মলায় তাদের বি’রুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। শেষদিনে সাক্ষ্য দেন মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা মোহাম্ম’দ রিয়াজ উদ্দিন। আগামী ২৯ মে আ’সামিপক্ষ থেকে তাকে জেরা করার কথা রয়েছে। দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, অ’বৈধ সম্পদ অর্জনের অ’ভিযোগে দুদকের মা’মলার পর থেকেই প’লাতক ছিলেন চুমকি কারণ। সোমবার তিনি আ’দালতে আত্মসমর্পণ করে জা’মিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কা’রাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। প্রদীপের পর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চুমকিও অবস্থান করছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কা’রাগারে। তবে একই কা’রাগারে থাকলেও তাদের মধ্যে দেখা কিংবা কথা বলার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কা’রাগারের জে’লার দেওয়ান মোহাম্ম’দ তারিকুল ইসলাম বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ ফাঁ’সির দ’ণ্ডপ্রাপ্ত আ’সামি হওয়ায় তাকে কা’রাগারের ৩২ নম্বর সেলে রাখা হয়েছে। আর চুমকি কারণ থাকবেন কা’রাগারের নারী ওয়ার্ডে। প্রথম সাত দিন তাকে কা’রাগারের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। সেখান থেকে সাত দিন পর নারী ওয়ার্ডে পাঠানো হবে। তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনই একই কা’রাগারে থাকলেও তাদের দেখা কিংবা কথা বলার সুযোগ নেই।

মা’মলার বা’দী ও ত’দন্ত কর্মকর্তা দুদক জে’লা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোহাম্ম’দ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মা’মলার পর থেকেই প’লাতক ছিলেন চুমকি কারণ। তাকে গ্রে’ফতারে একাধিকবার চেষ্টা চা’লিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। তবে এখন তাকে জি’জ্ঞাসাবাদের সুযোগ নেই। কারণ এখন মা’মলার বিচারকাজ চলছে।

এদিকে, দীর্ঘ সময় আত্মগো’পনে থাকার পর প্রকাশ্যে আসায় ‘এতদিন কোথায় ছিলেন চুমকি’ এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে।কারো কারো মতে, চট্টগ্রামেই কোথাও লুকিয়ে ছিলেন চুমকি। তবে বিভিন্ন তথ্যমতে- সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ভারতের আগরতলা, কলকাতার বারাসাত ও গৌহাটিতে রয়েছে প্রদীপ-চুমকি দম্পতির নিজস্ব বাড়ি। লক্ষ্মীকুঞ্জ ফাঁকা করে সেখানেই পাড়ি জমান তিনি।

প’লাতক থাকা অবস্থায় চুমকির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বাবা অজিত কুমার কারণ বলেছিলেন, মেয়ে কোথায় আছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। চুমকির ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরও জানেন না বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
সোমবার চুমকির আত্মসমর্পণের পর বাবা অজিত কুমার কারণের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে, প’লাতক চুমকির অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য ছিল- চুমকি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে বি’ষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দেয় দুদক। এর বাইরে আর কোনো তথ্য জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আত্মসমর্পণের পরও প্রশ্ন রয়ে গেছে- এতদিন কোথায় ছিলেন চুমকি।

২০২০ সালের ২৩ আগস্ট অ’বৈধ সম্পদ অর্জনের অ’ভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বি’রুদ্ধে মা’মলাটি করেন দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন। পরে গত বছরের ২৬ জুলাই আ’দালতে অ’ভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে প্রদীপ ও চুমকির বি’রুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গো’পন ও মানি লন্ডারিংয়ের অ’ভিযোগ আনা হয়।

একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর অ’ভিযোগপত্রের ও’পর শুনানি হয়। ২০ সেপ্টেম্বর মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মা’মলার এজাহারে উল্লিখিত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আ’দালত। ১৫ ডিসেম্বর এ মা’মলায় তাদের বি’রুদ্ধে চার্জ গঠন হয়।

এর আগে, প্রদীপের বি’রুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অ’ভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালের জুন মাসে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রদীপ ও চুমকির নামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্যও পান দুদক কর্মকর্তারা। এরপর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হলে একই বছরের মে মাসে দুদকে বিবরণী জমা দেন তারা।

দুদকের দেয়া অ’ভিযোগপত্রে বলা হয়, নগরীর পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, পাঁচলাইশে বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকির নামে। তার চার কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। এক্ষেত্রে দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অ’বৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। এছাড়া চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও এ ব্যবসায়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পাথরঘাটার ছয়তলা বাড়ির বি’ষয়ে চুমকি সে সময় দুদককে জানান, ২০১৩ সালে বাড়িটি তার বাবা তাকে দান করেন। যদিও চুমকির অন্যান্য ভাই ও বোনদের তার বাবা কোনো সম্পত্তি দান করেননি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে শ্বশুরের নামে বাড়ির জমি কেনেন প্রদীপ। এরপর ছয়তলা বহুতল ভবন গড়ে তোলেন।