গোপনে বিয়ে; স্বামীর প্রতারণায় প্রাণ গেল জবি শিক্ষার্থীর 

| আপডেট :  ১০ মে ২০২২, ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১০ মে ২০২২, ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশ: বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে প্রেম, এরপর গোপনে বিয়ে, সম্পর্কের টানাপোড়েন, তারপর দুর্ঘটনা। এমনই করুণ ঘটনা ঘটেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অঙ্কন বিশ্বাস এর ভাগ্যে। গত রোববার (৮মে) রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় অঙ্কন বিশ্বাস। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন।

জানা যায়, হার্ট অ্যাটাক ও পরে ব্রেন স্ট্রোক করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন হলো সেই বিষয়ে ওই সময় কিছুই জানা যায়নি। তবে গতকাল রাতে তার অকাল মৃত্যুর পরে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আত্মহত্যা নাকি হত্যা? এই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রেমঘটিত কারণে বিষপান করেছিল অংকন বিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কয়েক মাস ধরে এ সম্পর্কে বিপত্তি দেখা দেয়। শাকিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অঙ্কনকে এড়িয়ে চলেন এবং অন্য ধর্মের হওয়ায় বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৪ এপ্রিল ‘বিষপান’ করে প্রেমিকের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যান ওই শিক্ষার্থীর প্রেমিক শাকিল আহমেদ।

এই বিষয়ে ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল মুকিত চৌধুরি সানি জানায়, ২৪ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে অঙ্কন অসুস্থ বলে একটা ফোন আসে। পরে সেখানে গিয়ে অঙ্কনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পাই। ডাক্তাররা তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় হাসপাতালে শাকিল ও তার ভাই হিমেলকে দেখতে পাই। শাকিল ভাই ও বন্ধুর পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে প্রথমে ভর্তি করায়নি কর্তৃপক্ষ। পরে স্বামী পরিচয়ে ভর্তি করান।

মুকিত আরও জানায়, শাকিল প্রথমে ঘটনা বলতে চায়নি। শাকিলের ভাষ্যমতে অংকনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সে কিছু খেয়েছিল কি না, সে কিছুই বলেনি। ঘটনার প্রায় ১ ঘণ্টা পর আমায় (মুকিত) খবর দিলে আমি হাসপাতালে ছুটে আসি এবং ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানতে পারি তারা কোন উৎস ধরতে পারছে না যে আসলে সে কি খেয়েছিল। এক পর্যায়ে আমি তার বন্ধুকে দিয়ে অংকনের ব্যাগ থেকে বিষের বোতল সংগ্রহ করি, যেখানে খুবই অল্প পরিমাণ অবশিষ্ট ছিল। প্রথম থেকে তার অবস্থা গুরুতর ছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ মে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে বিএসএমএমইউ এর আইসিউতে ট্রান্সফার করা হয়।

এদিকে, দেখা যায় কথিত প্রেমিক শাকিল কেবল প্রেমিকই নয় তার স্বামীও বটে! গত ২২ মার্চ তাঁরা ২ লাখ টাকা দেনমোহরে কোর্ট ম্যারিজ করেন।

এই বিষয়ে জানতে অঙ্কনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অঙ্কনের বাবা তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি তো শুনছি কিন্তু জানি না কি হয়েছে। আমার সামর্থ্য নেই কিছু করার। আমি অসুস্থ, পঙ্গু। অঙ্কনের মা পাগলের মতো হয়ে গেছে। আমার আরেকটা ছেলে আছে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিলাম।’

এ বিষয়ে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল জানান, অংকনের পরিবার থেকে কেউ যদি কোনো ধরনের আইনি সহায়তা চায় তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

এদিকে অকাল মৃত্যুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই পলাতক রয়েছে তথা কথিত প্রেমিক শাকিল।

রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় একটা পুলিশ ফাইল হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।