১৮ বছর ধরে ইট জমিয়ে বাড়ি বানিয়ে দিলেন ৩ ছেলেকে! বিরলদৃষ্টান্ত ভ্যানচালক বাবার!

| আপডেট :  ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:৩২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:৩২ অপরাহ্ণ

বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় দুলাল দাসের জীবনে নেমে আসে দুঃখ আর হতাশা। বঞ্চিত হন সম্পত্তি থেকে। এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন দুলাল। এভাবেই ১৮ বছর ধরে ভ্যান চালানোর ফাঁকে নিজের সন্তানদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে কুড়িয়েছেন ইট। সেই কুড়িয়ে পাওয়া ইটের সঙ্গে আরো কিছু কিনে আট শতাংশ জমিতে তিন ছেলের জন্য বাড়ি করলেন তিনি।

ভ্যানচালক দুলাল দাসের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউপির শারশা গ্রামে। তার বড় ছেলে মিত্র দাস, মেজো ছেলে গোস্ত দাস ও ছোট ছেলে মিলন দাস। তারা সবাই বিবাহিত। দুলাল দাস বলেন, ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। এক সময় বাবা জমিদার ছিলেন। ছিল ২০ বিঘা জমি।

কিন্তু বাবা যতিন দাস দ্বিতীয় বিয়ে করার পরই কপাল পোড়ে আমাদের তিন ভাই ও পাঁচ বোনের। বঞ্চিত হই বাবার সম্পত্তি থেকে। লেখাপড়া করতে পারিনি। ছোট বেলা থেকেই ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুরি করে সংসার চালিয়েছি। ১৮ বছর আগে আমার স্ত্রী মারা যান। এরপর তিন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করিনি। অভাবের সংসারে ছেলেদেরও লেখাপড়া করাতে পারিনি।

ছেলে-বউ ও নাতির সঙ্গে দুলাল দাস ছেলে-বউ ও নাতির সঙ্গে দুলাল দাস তিন ছেলের জন্য তিনটি বাড়ি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তো আর বেশি সময় নেই। ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করেছি। বাবার কাছ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তাই মা হারা তিন ছেলের মনে কষ্ট দেখতে চাই না। সেই কারণেই ১৮ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ইট কুড়িয়েছি।

একইসঙ্গে প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে যে টাকা পেতাম তা দিয়েই ৩০-৪০টি ইট কিনতাম। এসব ইট জোগাড় করেই ছেলেদের জন্য তিনটি বাড়ি করেছি। তিনি বলেন, বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে ২৫ ফুট রাস্তা করার জন্য এরইমধ্যে ইট, খোয়া, বালু ও সিমেন্ট এনে রেখেছি। এ কাজে তিন ছেলেও সমান তালে সহযোগিতা করছেন।

ছেলেদের সংসারে দিনকাল কেমন কাটছে জানতে চাইলে দুলাল দাস বলেন, খুব ভালোই আছি। ছেলে-বউরাভালোভাবেই আমার দেখভাল করেন। নিজে যা আয় করি তা দিয়েই তাদের বাড়ির কাজে লাগিয়েছি। ভ্যান চালিয়ে বাড়ি আসছেন দুলাল ভ্যান চালিয়ে বাড়ি আসছেন দুলাল দুলাল দাসের বড় ছেলে মিত্র দাস বলেন, এমন বাবা পেয়ে আমরা গর্বিত। আমার বাবা যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা বিরল।

আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তালার ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন বলেন, কোনো একটি কাজের পরিদর্শন করতে গিয়ে দুলাল দাসের করা বাড়িগুলো দেখেছি। এটি আসলেই বিরল দৃষ্টান্ত। দুলাল দাস সাহায্য চাইলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।