লিবিয়ায় গিয়ে মাফিয়া চক্রের বন্দিদশা থেকে ছেলেকে মুক্ত করে আনলেন বাংলাদেশি মা!

| আপডেট :  ১১ এপ্রিল ২০২২, ১১:১৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১১ এপ্রিল ২০২২, ১১:১৫ অপরাহ্ণ

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির একটি দ্বীপে মাফিয়া চ’ক্রের ব’ন্দিদশা থেকে অ’পহৃত স’ন্তানকে মুক্ত করে আনলেন বাংলাদেশি মা! যে মা বাসে চড়ে কখনো ঢাকায় যাননি, সেই মা উড়োজাহাজে চড়ে সোয়া সাত হাজার কিলোমিটার দূরে অ’পহরণকারীদের ব’ন্দিশিবির থেকে উ’দ্ধার করে আনলেন একমাত্র ছেলেকে।

কুমিল্লা জে’লার দেবীদ্বার উপজে’লার কালিকাপুর গ্রামের লিবিয়াপ্রবাসী আবুল খায়েরের স্ত্রী শাহীনুর বেগম (৪৫) লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়া চ’ক্রের হাতে ছয় মাস ধরে ব’ন্দি থাকা ছেলেকে উ’দ্ধার করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। আজ সোমবার সরেজমিনে উপজে’লার কালিকাপুর শাহিনুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক ভিড়। সবাই মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় জমিয়েছে।

শাহিনুর বেগম ও তার পুত্র ইয়াকুব হোসাইনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের দুঃসাহসী অ’ভিযানের কাহিনি। শাহিনুর বেগম বলেন, ‘সবাই বলছিল আমার ছেলে মা’রা গেছে, তাকে মে’রে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। চার দফায় ছেলেকে উ’দ্ধারের জন্য আমি ও আমার লিবিয়াপ্রবাসী স্বামী দালালকে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। ছয় মাসেও ছেলের কোনো খোঁজ না পেয়ে লিবিয়াপ্রবাসী স্বামীর সহযোগিতায় পাসপোর্ট ও ভিসা নিশ্চিতকরে নিজেই লিবিয়ায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ‘

পরিবারের দৈন্য ঘোচাতে প্রায় ১১ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০১১ সালে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান আবুল খায়ের। এর মধ্যে দুই কন্যার বিয়ে হয়ে যায়। অভাবের সংসারে আরো একটু সচ্ছলতা আনতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালের মে মাসে একমাত্র ছেলে ইয়াকুব হাসানকেও পাঠানো হয় লিবিয়ায়।

ইয়াকুব হাসান লিবিয়ায় বেনগাজি শহরের কনস্ট্রাকশন ফার্মে কর্মরত তার বাবার কাছে থাকতেন। প্রথম দুই বছর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। ইয়াকুব প্রথম এক বছর ‘আল হারুজ’ তেলের পাম্পে ৩৫ হাজার টাকায় এবং পরের এক বছর হাকজিলতন তেলের পাম্পে ৪৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন।

পরে সিলেটের হবিগঞ্জের দালাল জাহাঙ্গীরের খপ্পরে পড়ে অ’বৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি থেকে বোটে করে ১৫০ জন ইতালি যাওয়ার পথে লাম্পেদুসা দ্বীপে ‘মাফিয়াদের’ হাতে ধরা পড়েন ইয়াকুব। ওখান থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য এক বাঙালি দালাল ধরে বাবার সহযোগিতায় চার লাখ টাকায় মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় দফায় মাফিয়া চ’ক্র লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের নিকট তাদের বিক্রি করে দেয়।

কোস্ট গার্ড ওখান থেকে তাদের অন্য একটি দ্বীপে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে চলে অ’মানবিক জীবন। একেটি কক্ষে প্রায় ৬০-৭০ জনের অবস্থান। খাদ্যসং’কট, শা’রীরিক নি’র্যাতনসহ নানা কারণে প্রতিদিনই মরছে সাথিরা। লা’শের পচা গন্ধ, পেটের ক্ষুধা, পানিসং’কট আর টাকার জন্য চলে ব’ন্দুকের বাঁটের আ’ঘাত ও পানির পাইপের পেটানি। শরীরের ক্ষ’তচিহ্নে পচন ধরেছে ইয়াকুবসহ অন্যদের। প্রতিদিন একটি রুটি, কোনো দিন আধা রুটি খেয়ে শরীরের য’ন্ত্রণায় জীবন অ’তিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ সংবাদে তার বাবা আবুল খায়ের হার্ট অ্যাটাক করে অ’সুস্থ হয়ে পড়েন।

শাহিনুর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশে পাড়ি দেন। স্বামীর সাথে লিবিয়ায় বেনগাজিতে অবস্থান করে দূ’তাবাসের সাথে যোগাযোগ এবং সে’নাবা’হিনী ও আইওএমের কর্মকর্তা এবং সে’না সদস্যদের সহযোগিতায় ওখান থেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।

ইয়াকুব বলেন, ‘জে’লে আমাদের খুব অ’ত্যাচার করা হতো। খাওয়ার জন্য একটা রুটি আর পানি দিত। ২২ দিন জে’লে থাকার পর কোস্ট গার্ডকে চার লাখ টাকা দিয়ে আমি ছাড়া পাই। ‘ এরপর প্রায় আট মাস পর আবারও ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন ইয়াকুব। এবার তার বি’পদ আরো বেড়ে যায়। এ সময় ‘মাফিয়ারা’ তাকে ব’ন্দি করে নিয়ে যায়।

শাহিনুর বলেন, ‘আইওএম কর্মকর্তারা লিবিয়া স’রকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াকুবকে উ’দ্ধার করেন। তারা ফোনে আমার সঙ্গে ওর কথা বলিয়ে দেন। ফোনে যখন ছেলের কণ্ঠ শুনি তখন হাউমাউ করে কেঁদে উঠি। আমার ছেলেও ওপাশ থেকে কা’ন্না করতে থাকে। ছেলেকে দেখার জন্য বুকটা ফে’টে যাচ্ছিল। কিন্তু লিবিয়ায় আমাদের দেখা হয়নি। ছেলে তখন ত্রিপলিতে ছিল, আর আমি বেনগাজিতে। ‘