কলকাতায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে বাংলাদেশি রোগীর কিডনি হাওয়া

| আপডেট :  ৪ এপ্রিল ২০২২, ০৬:৪৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৪ এপ্রিল ২০২২, ০৬:৪৭ অপরাহ্ণ

পেটের ব্য’থা কোনোভাবে কমছিল না। আব্দুল কাশেমের (৩৪) কাছে খবর আসে, ভারতে গেলে স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসা মেলে। ভারতে যেতে তিনি এক দালালের শরণাপন্ন হন। দালাল চ’ক্রের সহযোগিতায় গত বছরের ৪ নভেম্বর ভোরে স্ত্রী ববিতাকে নিয়ে যশোর বর্ডার দিয়ে ভারতে যান কাশেম।

ভারতে গিয়ে কলকাতায় জি’ম্মি হন কাশেম ও তার স্ত্রী ববিতা। এরপর কলকাতার একটি হাসপাতালে নিয়ে কাশেমের কিডনি রেখে দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ভু’ক্তভোগী কাশেম ও তার স্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।ভারতে নিয়ে চিকিৎসার নামে জি’ম্মি করে অ’বৈধভাবে কিডনিসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির অ’ভিযোগে সংঘবদ্ধ প্র’তারক চ’ক্রের এক সদস্যকে গ্রে’প্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‌্যা’পিড অ্যা’কশন ব্যা’টালিয়ন (র‌্যা’ব)।

সুনির্দিষ্ট অ’ভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যা’ব-৩ এর একটি দল ঢাকা জে’লার আশুলিয়া এলাকা থেকে মোছা. বিউটি বেগম নামে চ’ক্রের ওই নারী সদস্যকে গ্রে’প্তার করে। তার বাড়ি নাটোর জে’লা সদরের কালীবাড়ীতে। গ্রে’প্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি মেডিকেল ডকুমেন্ট ফাইল ও একটি পাসপোর্ট উ’দ্ধার করা হয়।

র‌্যা’ব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপ্স. ও ইন্ট. শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, চ’ক্রের সদস্যরা নিরীহ লোকদের সুচিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে জি’ম্মি করে দেশে-বিদেশে অ’বৈধভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে আসছে। এমন অ’ভিযোগ পাওয়ার পর সত্যতা নিশ্চিতে র‌্যা’ব-৩ গো’য়েন্দা নজরদারি বৃ’দ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যা’ব-৩ এর একটি বিশেষ দল রোববার (৩ এপ্রিল) রাতে ঢাকা জে’লার আশুলিয়ায় বিশেষ অ’ভিযান পরিচালনা করে বিউটি বেগম নামে ওই নারীকে গ্রে’প্তার করে।

অ’ভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ফ্লাইট লে. (স্কোয়াড কমান্ডার) ফাতিন সাদাব অরণ্য জানান, গ্রে’প্তার ওই নারী মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী প্র’তারক চ’ক্রের সদস্য। আশুলিয়া থানায় দা’য়ের করা একটি মা’মলা সূত্রে ভু’ক্তভোগী আব্দুল কাশেমের (৩৪) তথ্য মেলে। জানা যায় তার বাড়ি জয়পুরহাটে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পেটের ব্য’থায় ভুগছিলেন।

গ্রামে ও শহরে বেশ কবার চিকিৎসা করিয়ে সুফল পাননি। ভারতে ভালো চিকিৎসা হয়, সেখানে গেলে ভাল হয়ে যাবেন, এমন খবরে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আব্দুল কাশেম ও স্ত্রী ববিতা বেগম দালাল চ’ক্রের সদস্য মোছা. বিউটি বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তখন বিউটি তাদের নিজ বাসায় ডাকেন।

পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিউটির বাসায় যান কাশেম ও তার স্ত্রী। আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে ভু’ক্তভোগী কাশেমকে ভারতে নিয়ে সুচিকিৎসা দেওয়ার প্রলোভন দেখান বিউটি। ভারতে কয়েকবার আসা-যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বিউটি তাদের জানান, বিভিন্ন লোককে ভারতে নিয়ে কম খরচে চিকিৎসা করিয়ে সাহায্য করেছেন। তার পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্রও তিনি দেখান।

বিউটির কথামতো কাশেম ও ববিতা পাসপোর্ট ও ভিসা করে গত বছরের ৪ নভেম্বর যশোর বর্ডার দিয়ে ভারত যান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা চ’ক্রের প’লাতক সদস্য মো. শহীদ (৪৫) ও শেখ ফরিদ (৪২) তাদের নিয়ে অ’জ্ঞাত স্থানে আ’টকে রাখেন। সেখানে থেকেই কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে কাশেমকে নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়।

চিকিৎসার নামে কৌশলে কাশেমের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় কিডনি দানের সম্মতিপত্রে সই নেন চ’ক্রের প’লাতক সদস্যরা। পরে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কথা বলে তাকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বিভিন্ন তারিখে আব্দুল কাশেমের শা’রীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর অপারেশন করতে হবে বলে জানানো হয়। এর কয়েকদিন পর ওই হাসপাতালের একটি রুমে তাকে একা নিয়ে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়।

অপারেশন শেষে জ্ঞান ফেরার পর পেটের বাম পার্শ্বে কা’টা দেখে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে কাশেম জানতে পারেন, তিনি তার কিডনি স্বেচ্ছায় দান করেছেন। পরে তিনি চ’ক্রের সদস্যদের কাছে কিডনি বিক্রির বি’ষয়ে জানতে চাইলে তারা ভ’য়ভীতি দেখান। ২১ ফেব্রুয়ারি কাশেম ও স্ত্রী ববিতাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

স্কোয়াড কমান্ডার ফাতিন সাদাব অরণ্য জানান, পরস্পর যোগসাজশে ভু’ক্তভোগী কাশেমকে চিকিৎসার নামে ভারতে নিয়ে অনুমতি ছাড়া তার বাম পার্শ্বের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে চ’ক্রটি। তিনি বাংলাদেশে এসে সুচিকিৎসা না পেয়ে অ’সহায় জীবনযাপন করছেন। গ্রে’প্তার বিউটির বি’রুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।