সব
গতকাল রোববার সকালে অন্যের জমিতে চাষের কাজ করতে যান মজনু জোয়ার্দ্দার। ওই জমির মাঝেই রয়েছে পুরোনো ও মরিচা ধরা একটি বিদ্যুতের খুঁটি। জমিতে কাজ শুরুর পর ওই বিদ্যুতের খুঁটির কাছে যাওয়ামাত্র বিদ্যুতায়িত হন মজনু। এ সময় লাফ দিয়ে দূরে সরে গিয়ে প্রা’ণে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু ঘটনাস্থলে তাঁর হালের গরু দুটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা’রা যায়।
মজনু জোয়ার্দ্দার ঝিনাইদহ সদর উপজে’লার মধুপুর গ্রামের হবিবুর রহমানের ছেলে। ছোট ছোট চার স’ন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। টিনের চালের দুই কক্ষের ঘরে বসবাস করেন। নিজের চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে লাঙল দেওয়া, গরুর গাড়িতে ফসল ঘরে তোলা ও ফসল মাড়াইয়ের কাজ করেই তাঁর আয় হয়। এসব কাজে ওই গরু দুটিই ছিল তাঁর একমাত্র সম্বল। কা’ন্নাজ’ড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কীভাবে সংসার চালাব! কীভাবে স্ত্রী-বাচ্চা নিয়ে বেঁচে থাকব!’
মজনু বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ায় পড়ালেখা তেমন করতে পারেননি। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। নিজেদের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে চাষবাসের কাজ করেন। এভাবে অল্প অল্প করে জমানো টাকা দিয়ে আট বছর আগে দুটি এঁড়ে বাছুর কেনেন। এরপর বাছুর দুটিকে নিজ হাতে লালন-পালন করে বড় করেন।
মজনু জোয়ার্দ্দার আরও বলেন, চার বছর ধরে গরু দুটি তিনি মাঠে জমি চাষের কাজে ব্যবহার করেন। এতে মৌসুমে রাতদিন পরিশ্রম করে দিনে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়। এভাবে দুটি ধানের মৌসুমে দুই মাস কাজ করেন। বাকি সময় দিনে চার থেকে পাঁচ শ টাকা আয় হয়। এই টাকায় তাঁর সংসার চলে।
ওই জমিতে বিদ্যুতের পুরোনো লো’হার খুঁটি থাকায় এই দু’র্ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে মধুপুর গ্রামের আবদুল জলিল বলেন, গরু দুটি মা’রা যাওয়ায় গোটা গ্রামের কৃষকের ক্ষ’তি হয়েছে। এই দুটি গরু দিয়ে গ্রামের মানুষ মাঠে ফসল ফলান। জমি চাষ করেন, ফসল ঘরে তোলেন। এবার তাঁরাও স’মস্যায় পড়বেন।
এ বি’ষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি তাঁরা জেনেছেন। ইতিমধ্যে সহকারী প্রকৌশলী সাকিব আদনানের নেতৃত্বে একটি ত’দন্ত কমিটি করেছেন। তারা ত’দন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তার অবহেলা থাকলে তাঁর বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
জে’লা প্রা’ণিসম্পদ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার মজুম’দার বলেন, তিনি ঘটনাটি মাত্রই জানলেন। ক্ষ’তিগ্রস্ত কৃষককে স’রকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই দপ্তর থেকে এ বি’ষয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানা বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কৃষককে থানায় একটি লিখিত অ’ভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অ’ভিযোগ পেলে ত’দন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রঃ প্রথম আলো