দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পিরোজপুরে প্রথমবারের মত চাষ হচ্ছে আপেল

| আপডেট :  ২৬ মার্চ ২০২২, ০২:৪৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ মার্চ ২০২২, ০২:৪৯ অপরাহ্ণ

অনেকটা শখের বশেই ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হরিমন ৯৯ আপেল জাতের ৫০টি চারা সংগ্রহ করেছিলেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধুভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা প্রণব হালদার। উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষামূলক আপেল চাষ করা। কৌতুহল থেকেই যোগাযোগ করেছিলেন আপেল চাষে গবেষক ভারতের পারভেজ নওশাদ ও হরিমন শর্মার সঙ্গে।

তাদের সাথে যোগাযোগের পর আগ্রহ বাড়ে প্রণবের। ব্যবসায়িকভাবে আপেল চাষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে হরিমন শর্মার আপেল বাগানে প্রশিক্ষণের জন্য যান তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ফলবে আরো দুইটি জাতের চারা ‘আনা (ইজরায়েল)’ ও ‘ডরসেট গোল্ডেন (বাহামাস)’ সংগ্রহ করেন।

পরবর্তীতে ২০২০ সালের এপ্রিলে তিনটি জাতের ৬০টি চারা বাড়ির পাশের জমিতে রোপণ করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি প্রণবকে। দুই বছর আগে বাগানে রোপণ করা গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। ভবিষ্যতে বাগান বড় করে বাণিজ্যিকভিত্তিতে আপেল চাষের স্বপ্ন দেখছেন প্রবণ। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান।

এ বিষয়ে প্রণব বলেন ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গাছে ফুল আসা শুরু করে। বর্তমানে গাছে ছোট আপেল ও ফুল আছে। ফল সংগ্রহ করা যাবে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত।আপেল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, জমিতে আপেলের চারা রোপণের জন্য ২×২×২ ফুট গর্ত তৈরি করে জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তে ১৫ দিন রেখে দিয়ে চারা গুলো রোপণ করা হয়।

এসময় অন্য কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। আপেল গাছ আলো, বাতাস পূর্ণ এবং উঁচু জমিতে ভালো হয়। বেলে দো-আঁশ মাটি আদর্শ হলেও অন্য মাটিতে ও রোপণ করা যায়। তবে আপেল গাছ কোনোভাবেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

প্রণব হালদার আরও বলেন, যেহেতু আমার বাগানটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা তাই আরো কয়েক বছর পর্যবেক্ষণ করব। এরপর যদি লাভজনকভাবে আপেল ফলাতে সক্ষম হই তাহলে বাগান সম্প্রসারণ করতে চাই। তবে শুরুতে বড় পরিসরে বাগান করা উচিত নয়। কয়েকটি চারা রোপণ করে সফল হলে বড় বাগান করা উচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বিগবিজয় হাজরা বলেন, সাধারণত আপেল শীত প্রধান দেশে চাষ করা হয়। তবে আমাদের দেশে এখন আপেল চাষ করা সম্ভব। প্রণবের আবাদ করা জাতের চারাগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পিরোজপুর জেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান। এখানে দুই বছর বয়সে গাছে ফুল ও ফল এসেছে। আশা করা যায় গাছগুলোর পরিণত বয়সে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, প্রবণ হালদার আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করেছেন। কয়েক বছর আগে সবুজ বাগান সোসাইটি নামে একটি বাগান সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রথম জানতে পারেন বাংলাদেশেও আপেল চাষ করা সম্ভব। এরপরউ এ বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয় তার। বর্তমানে বাড়ির সামনে ৫৫ শতাংশ জমিতে তিনটি জাতের আপেলসহ মিশ্র ফলের বাগান করেছেন প্রণব হালদার।।