হলুদের মঞ্চে থাকার কথা যে কনের, তাঁকে শোয়ানো হলো কবরে

| আপডেট :  ২১ মার্চ ২০২২, ০৪:৪২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ মার্চ ২০২২, ০৪:৪২ অপরাহ্ণ

কাকলি আক্তারের বিয়ের দিন ছিল আজ সোমবার। সে হিসাবে গতকাল রোববার রাতে গায়েহলুদ হওয়ার কথা ছিল। পরিবারের একমাত্র মেয়েস’ন্তানের বিয়ে ঘিরে বাড়িতে ছিল উৎসবের আমেজ। প্রতিদিনই বাড়িতে আসছিলেন বন্ধু ও স্বজনেরা। আনন্দের এই ফল্গুধারা বি’ষাদে পরিণত হতে সময় লাগল কেবল কয়েক মিনিট। গায়েহলুদের রাতে, অর্থাৎ গতকাল রোববার রাতে কাকলিকে কবরে শুইয়ে দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে তাঁর ভাই ফারুক মাদবর বলছিলেন, ‘দানবের আ’ঘাতে নীল বর্ণে রাঙা আমার বোনের দেহ কবরে রেখে এলাম। ওর জন্য দোয়া করবেন।’

কাকলি আক্তার (১৮) শরীয়তপুর সদরের চর পালং এলাকার প্রবাসী নুরুজ্জামান মাদবরের মেয়ে। শহরের শরীয়তপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় দাখিল শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন তিনি। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জাহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক তরুণ গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে কু’পিয়ে আ’হত করেন বলে অ’ভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার ভোরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মা’রা যান। আর রাত ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম শরীয়তপুর পৌরসভার কাশাভোগ এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে। শরীয়তপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র জাহিদুল মাদ্রাসায় পড়ার সময় থেকে কাকলিকে উ’ত্ত্যক্ত করতেন। কাকলিকে বিয়ে করার জন্য তাঁর পরিবারের কাছে প্রস্তাবও দেন তিনি। কাকলির পরিবার তাদের মেয়েকে জাহিদুলের কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। কাকলিকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় তাঁর পরিবার। এতে ক্ষু’ব্ধ হন জাহিদুল।

বৃহস্পতিবার রাতে জাহিদুল কাকলিদের বসতঘরে ঢুকে ধা’রালো অ’স্ত্র দিয়ে তাঁকে কু’পিয়ে আ’হত করেন। কাকলির চি’ৎকারে বাড়ির মানুষ এগিয়ে এসে তাঁকে উ’দ্ধার করেন। পা’লিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন জাহিদুলকে আ’টক করে পি’টুনি দেন। খবর পেয়ে পুলিশ দুজনকে উ’দ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তাঁদের অবস্থার অ’বনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার রাতে দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কাকলি আক্তারের অবস্থার আরও অ’বনতি হলে ধানমন্ডির একটি বেস’রকারি হাসপাতালের আইসিউতে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। রোববার ভোরে সেখানে তাঁর মৃ’ত্যু হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লা’শের ম’য়নাত’দন্ত করা হয়। রোববার রাতে কাকলির লা’শ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে।

কাকলিরা দুই ভাই, এক বোন। দুই ভাই শহরে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ চালান। আর বাবা নুরুজ্জামান মাদবর সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন। কাকলির বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল। ধুমধামে বিয়ের আয়োজন করার জন্য চলছিল প্রস্তুতি। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা ও দুটি অনুষ্ঠানের মঞ্চ নির্মাণের কাজ করছিলেন ডেকোরেটর-শ্র’মিকেরা। তবে বৃহস্পতিবারের হা’মলার পর উৎসবমুখর পরিবেশ বি’ষাদে পরিণত হয়।

কাকলির ভাই ফারুক মাদবর বলেন, ‘আমাদের একটাই বোন। অনেক আনন্দ আর ধুমধামের মধ্যে বিয়ের আয়োজন করছিলাম। জাহিদুল সবকিছু ত’ছনছ করে দিয়েছে। মেহেদি আর হলুদে বোনকে রাঙিয়ে তুলতাম। অথচ আজ বোনের নিথর দেহ কবরে শুইয়ে দিয়েছি।’

কাকলির মা ফরিদা বেগম বলেন, ‘কাকলিকে বিয়ে দিতে পারলাম না, নিরাপত্তা দিতে পারলাম না, বাঁচাতে পারলাম না। ঘা’তকের হিংসা ওকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। ওর বাবার কাছে আমি কী জবাব দেব?’

কাকলির মামা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, এভাবে একটি প্রিয়মুখ হা’রিয়ে যাবে, কেউ ভাবতে পারেনি। মুহূর্তেই বিয়েবাড়ির আনন্দ বি’ষাদে পরিণত হলো। হা’মলার পর বিয়ের প্রস্তুতি বন্ধ করে কাকলিকে বাঁচাতে প্রা’ণপণে ছুটেছেন তাঁরা, কিন্তু পারেননি। ব’খাটের থাবায় যেন আর কোনো কাকলিকে এভাবে বিদায় নিতে না হয়, সে জন্য ক’ঠোর শা’স্তির ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানান তিনি।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ত’রুণীকে কু’পিয়ে হ’’ত্যার ঘটনাটিতে তাঁরা হতবাক। অ’ভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম ঢাকায় চিকিৎসাধীন। তাঁকে গ্রে’প্তার করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।