ফুটবল বিশ্বকাপের ৬ লাখ টি–শার্ট তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে

| আপডেট :  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:৫৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:৫৫ অপরাহ্ণ

আর ২৭০ দিন পর কাতারে শুরু হবে বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল না থাকলেও দর্শক-ভক্তদের গায়ে জড়ানো টি-শার্টে লাল-সবুজের দেশটির নাম থাকছে। চট্টগ্রামের একটি কারখানায় আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা বা ফিফার লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি হচ্ছে টি-শার্ট। গত সপ্তাহে টি-শার্টের একটি চালান রপ্তানিও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আগামী ২১ নভেম্বর কাতারে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। দেশটির আটটি স্টেডিয়ামে ফুটবলের এই মহাযজ্ঞ চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিশ্বকাপ ফুটবলে পোশাকপণ্য ও সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য আয়োজক সংস্থা ফিফা বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেয়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানকে জার্সি, টি-শার্ট, জ্যাকেটসহ নানা সরঞ্জাম তৈরির কার্যাদেশ দেয়।

কাতার বিশ্বকাপের পোশাকপণ্য সরবরাহে অনেকের মতো ফিফার লাইসেন্স পেয়েছে রাশিয়ার একটি বিখ্যাত ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে গোসাইলডাঙ্গার সনেট টেক্সটাইল লিমিটেডকে ছয় লাখ টি-শার্ট বানানোর কার্যাদেশ দেয় গত বছর। সব প্রক্রিয়া শেষে ফিফার অনুমোদনের পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে টি-শার্ট উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ছয় লাখ টি-শার্টের রপ্তানিমূল্য ১৫ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৩ কোটি টাকা।

আগ্রাবাদে গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় সনেট টেক্সটাইলে গিয়ে দেখা যায়, ফুটবল বিশ্বকাপের টি-শার্টের দ্বিতীয় চালান প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। পুরুষ ও নারীদের জন্য চার রঙের টি-শার্টের মান যাচাই করে কার্টনে রাখছেন শ্রমিকেরা। সাথী আকতার নামের এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে কারখানায় কাজ করছি। বিশ্বকাপ ফুটবলের অফিশিয়াল টি-শার্ট তৈরির কাজে যুক্ত থাকতে পেরে ভালো লাগছে।’কারখানার কর্মকর্তারা জানান, ফিফার অফিশিয়াল টি-শার্ট তৈরিতে কঠোর শর্ত মানতে হয়। কোনো টি-শার্ট বাইরে সরবরাহ করা যায় না। আবার নকশা থেকে শুরু করে সবকিছুই কোথাও হস্তান্তর করাও যায় না।

সনেট টেক্সটাইলের পরিচালক গাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিন লাখ টি-শার্ট গত বৃহস্পতিবার জাহাজীকরণ করা হয়েছে। আরও তিন লাখ টি-শার্ট রপ্তানির অপেক্ষায় আছে। এর আগেও তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপ, ইউরো কাপের টি-শার্ট রপ্তানির কথা জানান তিনি। গাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিট পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর পরিচালক।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাততলা ভবনের এই কারখানায় কাজ করছেন ৮০০ শ্রমিক। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সনেট টেক্সটাইলের আরও দুটি পোশাক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রুপটির বার্ষিক রপ্তানি ২ কোটি ডলার বা প্রায় ১৭১ কোটি টাকা। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ১০-১২টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই কারখানা থেকে পোশাক কেনে।

চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক ফুটবলের বড় এই আসরে মূলত নিট পোশাকের প্রাধান্য। নিট পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে প্রতিবার বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টি-শার্ট, জার্সি রপ্তানি হয়। এবারও হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ২ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।