সারারাতে ডাকাতের ৮০ চড় খেয়েছেন ডা. সজিব!

| আপডেট :  ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০১:১৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০১:১৫ অপরাহ্ণ

ঢাকায় প্রয়োজনীয় কাজ শেষে টাঙ্গাইল আসার জন্য ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাসে ওঠেন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতা’লের আবাসিক চিকিৎসা কর্মক’র্তা (আরএমও) ডা. শফিকুল ইস’লাম সজিব।বাসে উঠার পরপরই বাসে থাকা যাত্রীবেশে ডা’কাতদল তাকেসহ অন্যান্য যাত্রীদের অ’স্ত্রের মুখে জি’ম্মি করে ফেলে। এরপর সারারাত তাকে অন্তত ৮০টি থাপ্পড় মা’রা হয়েছে তাকে।

এ নিয়ে রোববার তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের এ ভ’য়ংকর অ’ভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।ফেসবুক পোস্টে শফিকুল ইস’লাম সজিব লিখেছেন, মহাসড়কে চলাচলকারী একটা বাস ১২ ঘণ্টা ধরে ঢাকা শহরে সারারাত ঘুরে ডা’কাতি করে, কিন্তু ঢাকা সিটির কোনো চেকপোস্ট সেটি থামায় না, বিষয়টা খুবই ভাবনার।একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাতে যাতায়াত না করার এবং কাউন্টার ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে বাসে না ওঠার পরাম’র্শ দিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়েছিলেন শফিকুল। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার পর ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে যাওয়ার বাস না পেয়ে এক বন্ধুকে নিয়ে রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল্লাহপুরে যান তিনি। উদ্দেশ্য, অন্য কোনো বাসে টাঙ্গাইলে যাওয়া। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাস পেয়ে সেটিতে ওঠেন তারা। বাসটা একটু অন্ধকার ও ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল তাদের কাছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাসচালকের হেলপার জানান, বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমাচ্ছেন। এছাড়া আরও যাত্রী পথ থেকে উঠবেন।

এর কিছুক্ষণের মধ্যে বাসটি নির্জন একটা জায়গায় পৌঁছালে সাত-আটজন গলায়, পেটে ছু’রি ধরে তাদের জি’ম্মি করে। এর মধ্যে কেউ একজন বলে ওঠেন, এ বাসের সবাই ডা’কাত। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে শফিকুল আত্মসম’র্পণ করে ওদের বলেন, যা আছে নিয়ে যান। কিন্তু কোনো ক্ষতি করবেন না।এরপর ডা’কাত দলের সদস্যরা শফিকুলের তিনটি মোবাইল ফোন, দুটি এটিএম কার্ড, দুটি ওয়ালেট, বিকাশ ও কার্ডের পিন নম্বর নেয়। সেই সঙ্গে তাকে বিকাশ থেকে টাকা দিতেও বাধ্য করে ডা’কাত দল।

সবকিছু কেড়ে নিয়ে ডা’কাত দলের সদস্যরা তাদের চোখ-হাত-পা বেঁধে ফেলে। হাত-পা-চোখ সব বাঁ’ধা থাকায় অ্যাজমা রোগী শফিকুলের শ্বা’সক’ষ্ট হচ্ছিল। তার ব্যাগ থেকে ডা’কাতদের ইনহেলার দিতে বললেও তারা দেয়নি। তখন মৃ’ত্যুভ’য়ে শফিকুল শুধু কলেমা পড়ছিলেন। তার মনে হচ্ছিল, বাচ্চাদের মুখ বুঝি আর দেখা হলো না।

এর মধ্যে আশপাশের লোকজনের গোঙানির শব্দ আসছিল শফিকুলের কানে। সব নিয়েও নি’র্যাতন করছিল ডা’কাত দল। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চন্দ্রার আগে কবিরপুর এলাকায় শফিকুলের বন্ধুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেয় তারা। এরপর শফিকুলকে মা’রতে মা’রতে পেছনে নিয়ে যায় ডা’কাতেরা। সারা রাতে অন্তত ৮০টি থাপ্পড় মা’রা হয়েছে তাকে। ওই বন্ধু পরে শফিকুলের স্বজনদের খবর দেন। একটা সময় বাসটি অনেকক্ষণ থামিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে বাসচালকের হেলপার পরিচয়ে একজন তার চোখ ও হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন।

তার দাবি, তিনি (হেলপার) নিজে আর বাসচালকও ভুক্তভোগী। ডা’কাত দলের লোকজন যাত্রী সেজে তাদের বাসে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল। এ জায়গাটি যাত্রাবাড়ীর কাছে বুঝতে পেরে শফিকুল বাসটি যাত্রাবাড়ী থা’নায় নিয়ে যেতে বলেন চালককে।

চালক ও হেলপার প্রথমে রাজি হলেও পরে বলেন, মা’মলা করলে বাস থা’নায় আ’ট’কে রাখবে। মালিকের সঙ্গে পরাম’র্শ না করে এ সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।যাত্রাবাড়ী পৌঁছে শফিকুল বাস থেকে নেমে দৌড়ে মাতুয়াইলের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড অ্যান্ড মাদার হেলথ (আইসিএমএইচ) হাসপাতা’লে যান। সেখান থেকে পরে যাত্রাবাড়ী থা’নায় গিয়ে পু’লিশকে সব কিছু খুলে বলেন।

শুনে তারা বলেন, যেহেতু আবদুল্লাহপুর থেকে বাসে উঠেছেন, তাই অ’ভিযোগ দিতে হবে সেখানে। শুনে তিনি উত্তরা পশ্চিম থা’নায় আসেন। সেখান থেকে বলা হয়, যেখানে নেমেছেন অ’ভিযোগ সেখানে দিতে হবে। কোনো থা’নাই যখন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিল না, তখন তিনি বাসায় ফিরে যান।