রিকশা চালিয়ে হাসপাতাল-বিদ্যালয়-মসজিদ করা জয়নাল মারা গেছেন

| আপডেট :  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৫৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৫৯ অপরাহ্ণ

পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। ক্ষুদ্র এ পেশা থেকে জমানো টাকা দিয়েই বানিয়েছিলেন মসজিদ-হাসপাতাল-বিদ্যালয়। জেলা প্রশাসন থেকে পেয়েছিলেন ‘সাদা মনের মানুষ’র সনদ ও পদক। জয়নাল আবেদিন (৬৫) নামের উদার এ মানুষটি আর নেই। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

জয়নাল আবেদিন সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ইউনিয়নের টান হাসাদিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল গনির ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও দুই নাতি রেখে গেছেন। ছেলে চাকরি করতে পাঁচ মাস আগে সুইডেন গেছেন। তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

পরানগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার রুবেল মিয়া জাগো নিউজকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, সম্প্রতি জয়নাল আবেদিন স্ট্রোক করেন। শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালের দিকে মারা যান।

ইউপি মেম্বার রুবেল মিয়া আরও বলেন, জয়নাল আবেদিন মৃত্যুর আগে বলেছিলেন তাকে যেন নিজ গ্রামে মসজিদের পাশে সামাজিক করবস্থানে দাফন করা হয়। তার ইচ্ছা অনুযায়ী বাদ আসর জানাজা শেষে তাকে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।পরানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হানিফা সরকার বলেন, ‘তার মৃত্যুকে আমরা শোকাহত। তবে, তার প্রতিষ্ঠা করা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন চালু থাকে। সেজন্য কাজ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল ও বিদ্যালয় করার পর একটি মসজিদ নির্মাণের কাজ হাতে দিয়েছিলেন জয়নাল। তবে, মসজিদের কাজ শেষ হয়নি। ওই মসজিদের পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে।’ স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবার মৃত্যুর পরপরই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান জয়নাল আবেদিন। এরপর রিকশা চালিয়ে অল্প অল্প করে অর্থ জমাতে শুরু করেন। সেই অর্থের বেশিরভাগই ব্যাংকে জমাতেন।

২০০১ সালে সবমিলিয়ে দুই লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে হাসপাতাল করার জন্য বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে নিজ গ্রাম টান হাসাদিয়া গ্রামে ২৪ শতাংশ জমি ৪০ হাজার টাকায় কেনেন। সেখানে ছোট একটি আধাপাকা টিনশেড ঘর তৈরি করে জয়নাল আবেদিন তার মেয়ের নামে ‘মমতাজ হাসপাতাল’ গড়ে তোলেন।

শুধু চিকিৎসাসেবা নয়, হাসাদিয়া গ্রামের দরিদ্র মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে ২০০৭ সালে ‘টান হাসাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন।২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘এসো বাংলাদেশ গড়ি’ শীর্ষক রোড শো চলাকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জয়নাল আবেদিনকে ‘সাদা মনের মানুষ’ হিসেবে সনদ ও পদক দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর ৪০তম জাতীয় সমবায় দিবসে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাকে। সূত্রঃ জাগো নিউজ