আগামীতে এমপি প্রার্থী হবেন চেয়ারম্যান পদে ফেল করা সেই ভিক্ষুক

| আপডেট :  ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৪০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৪০ অপরাহ্ণ

‘এবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ফেল করেছি। তাতে কী? আগামীতে এমপি নির্বাচন করমু। গরিব অসহায় মানুষ ভালোবেসে আমারে ভোট দিয়েছে। ফেল করলেও আমি সবার হৃদয় জয় করেছি। আমিই বৈলরের গরিব অসহায় মানুষের চেয়ারম্যান।’ হাসিমুখে কথাগুলো বলেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ভিক্ষুক আবুল মুনসুর ফকির। সরকারের দেওয়া উপহারের ঘর চেয়ে না পেয়ে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন মুনসুর ফকির। রবিবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চশমা প্রতীকে ৩৭৭ ভোট পেয়েছেন তিনি।

মুনসুর ফকির বলেন, ‘এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমি মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। নির্বাচনে হারলেও আমি মানুষের অনেক ভোট পেয়েছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের সেবা করে যেতে চাই। সোমবার সকালে দূরদূরান্ত থেকে আমাকে একনজর দেখার জন্য মঠবাড়ি বড়পুকুরপাড় এলাকার ঝুপড়িঘরে ছুটে আসছেন মানুষ। এবার অনেকে জানতো না আমি প্রার্থী হয়েছি। তারা আমাকে আগামীতে আরও বড় পদে দেখতে চান। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দু’তিন দিনের মধ্যে আবারও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করে টাকা জোগাড় করবো। এই টাকা জমিয়ে আগামীতে এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হবো।’

মুনসুর ফকির আরও বলেন, ‌‘টাকা ছাড়া মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে সরকারি ঘর, বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ কোনও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। আমি ঘর ও বয়স্ক ভাতার কার্ড চেয়ে পাইনি। তাই মানুষের পাশে থেকে তাদের বিনা পয়সায় সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কাজ করতে চাই।

চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে মুনসুর ফকির বলেন, ‘১২ বছর ধরে ভিক্ষা করে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলাম। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র কেনার জন্য সরকারি ফি বাবদ ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পোস্টার করতে লেগেছে চার হাজার টাকা। বাকি টাকা গাড়ি ভাড়া, চা পানসহ অন্যান্য কাজে খরচ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা নিইনি।’ আবুল মুনসুর ফকিরের স্ত্রী সমলা বেগম জানান, তার স্বামী রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। তাদের সংসারে চার ছেলে ও এক মেয়ে আছে। দুই ছেলে পোশাক কারখানায় কাজ করলেও বাকিরা কর্মহীন। ঘরভিটা ছাড়া আবাদি কোনও জমি নেই।

বয়সের ভারে রিকশা চালাতে না পেরে ভিক্ষা করে সংসার চালাতে শুরু করেন মুনসুর। কয়েক মাস আগে চেয়ারম্যানের কাছে একটা ঘর আর বয়স্ক ভাতার কার্ড চেয়েছেন। না পেয়ে আমার স্বামী রাগ করে বাড়িঘর ছেড়ে খালের ওপর ঝুপড়ি ঘর তুলে ১২ বছর ধরে একা বসবাস করছেন। এরপর থেকে ভিক্ষা করে টাকা পয়সা জমিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী হন। ৩৭৭ ভোট পাওয়ায় আমরা খুশি। আগামীতে এমপি নির্বাচন করলে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজন তার সঙ্গে মাঠে কাজ করবো।

এদিকে, নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে ফেল করলেও ৩৭৭ ভোট পাওয়ায় এলাকাবাসী খুশি। নির্বাচনের পরদিন সোমবার সকাল থেকেই তাকে দেখার জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বৈলরের বড়পুকুরপাড় খালের ওপর ঝুপড়ি ঘরের চারপাশে ভিড় করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ভিক্ষা করে টাকা জমিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ৩৭৭ ভোট পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। মানুষ তাকে ভালোবাসে বলেই ভোট দিয়েছে। তার চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি অনেকের জানা ছিল না। আগামীতে এমপি প্রার্থী হলে আমরা তার পাশে থাকবো।

সরকারি ঘর বরাদ্দ ও বয়স্ক ভাতার কার্ড চেয়ে না পেয়ে প্রতিবাদে চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ত্রিশালের ২ নম্বর বৈলর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ভিক্ষুক আবুল মুনসুর ফকির। একজন ভিক্ষুক চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন