নাঈমকে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকটি অবৈধভাবে নেন হারুন, করতেন তেল চুরি

| আপডেট :  ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর গু’লিস্তানে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃ’ত্যু হয়েছে যে ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় সেটি চালক হিসেবে অ’বৈধপন্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে বরাদ্দ নিয়েছিলেন হারুন মিয়া। তার অনিয়মের এখানেই শেষ নয়, বরাদ্দ নেওয়ার পর সেটি তিনি অন্য পরিচ্ছতাকর্মী দিয়ে চালাতেন। এছাড়াও গাড়ির তেল চু’রির কারসাজিতেও তিনি জ’ড়িত। শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃ’ত্যুর পর আ’ট’ক পরিচ্ছতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদে হারুনের অনিয়মের নানা তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে গ্রে’প্তার এড়াতে আত্মগো’পনে রয়েছেন হারুন। তাকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।পু’লিশের একটি সূত্র জানায়, হারুন মিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিশেষ ট্রাক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কিন্তু তিনি এই ট্রাকটি মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিজের নামে বরাদ্দ নেন। এতেই হয়ে ওঠেন ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি চালক।

সূত্র ঢাকা’টাইমসকে জানিয়েছে, হারুনের নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অ’বৈধভাবে তিন লাখ টাকায় তিন মাসের জন্য ময়লার গাড়ি বরাদ্দ নেন তিনি। গত দেড় বছর ধরে তিনি ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি চালানোর দায়িত্বে রয়েছেন। তিন লাখ টাকায় বরাদ্দ নিলেও তার আয় হতো দ্বিগুণ টাকা। এছাড়াও গাড়ির তেল চু’রির কারসাজিও করতেন।

ডিএসসিসির একাধিক সূত্র জানায়, ময়লার গাড়ির জন্য প্রতিদিন বরাদ্দকৃত ১১ লিটার তেলের মধ্যে ৬ লিটার চু’রি করে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এভাবে হারুন প্রতিমাসে ১৮০ লিটার তেল চু’রি করে বিক্রি করে দিতেন। এতে তার আয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে গু’লিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার গোলচত্বরের দক্ষিণ পাশে নটরডেম কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান রাস্তা পার হওয়ার সময় পূর্ব দিক থেকে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ট্রাক (রেজি: নম্বর ঢাকা মেট্রো-শ ১১-১২৪৪) চালক রাসেল খান বেপরোয়া গতিতে ময়লা নিয়ে নাঈমকে সজো’রে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় পরে যান।

এতে নাঈমের মা’থাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জ’খম হয়। তখন স্থানীয়রা তাকে উ’দ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে (ঢামেক) নেয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সেখানেই তার মৃ’ত্যু হয়। দুর্ঘ’টনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় টহল পু’লিশ ও পথচারীরা ট্রাকের চালক (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) রাসেল, গাড়ির ভেতরে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মী গো’লাম রব্বানী ও বেলালকে আওয়ামী লীগের অফিসের পূর্ব প্রান্ত থেকে আ’ট’ক করা হয়। এ ঘটনায় নি’হতের বাবা শাহ আলম দেওয়ান বাদী হয়ে মা’মলা করেন।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপপু’লিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ বলেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রাসেল খান। তিনি প্রকৃতপক্ষে ওই গাড়ির চালক নন। আম’রা গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ও গ্রে’প্তার রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, গাড়িটির মূল চালক হারুন।

তিনি বলেন, গাড়িটি চালানোর কথা হারুনের, কিন্তু তিনি না চালিয়ে রাসেলকে দিয়ে চালাচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে হারুনকে গ্রে’প্তারে অ’ভিযান চলছে। দ্রুতই আম’রা তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। হারুনকে গ্রে’প্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কেন তিনি রাসেলকে দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

এদিকে সহকর্মীর মৃ’ত্যুর ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল, গু’লিস্থান, ফার্মগেট ও উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বি’ক্ষোভ করে। পরে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তারা সড়ক থেকে ওঠেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বি’জ্ঞপ্তিতে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মক’র্তা আবু নাছের জানান, অ’বৈধভাবে গাড়ি বরাদ্দ

নিয়ে তা চালানোয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন মিয়া ও এ কাজে সহযোগিতা করায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুর রাজ্জাককে কর্মচ্যুত করা হয়েছে। তিনি জানান, বরাদ্দ গাড়ি নিজে না চালিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্যকে চালাতে দেওয়ায় করপোরেশনের গাড়িচালক (ভা’রী) মো. ই’রান মিয়ার বি’রুদ্ধে বিভাগীয় মা’মলা রুজু ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।