শীতে খুপড়ি ঘরে দিন কাটছে অসহায় লাজলীর

| আপডেট :  ২৪ নভেম্বর ২০২১, ০২:২৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ নভেম্বর ২০২১, ০২:২৭ অপরাহ্ণ

লাজলী খাতুন, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামের মৃত আব্দুল সালামের মেয়ে। আট বছর আগে তারা বাবা মারা যান। ভাই বিদেশে যাওয়ার কথা বলে বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মা ঢাকায় ঝিয়ের কাজ করেন। মায়ের সঙ্গে থেকে কিছুদিন গার্মেন্টসে কাজ করলেও আবার বাড়ি চলে আসেন। এখন পরিবারের কেউ খবর না নেওয়ায় চার মাস ধরে একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন লাজলী খাতুন। শীত চলে আসায় সেই ঘরে কষ্টে জীবন কাটছে তার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি ক্ষেতের মাঝখানে কয়েকটি টিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা খুপড়িতে দিনযাপন করছেন লাজলী। ঘরের আসবাবপত্র নেই বললেই চলে। বাঁশের মাচার ওপর বিছানা করে থাকেন। মশারি থাকলেও নেই শীত নিবারণের ব্যবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৮ বছর বয়সী এ তরুণী লেখাপড়া করেছেন এসএসসি পর্যন্ত। সাত বছর আগে প্রতিবেশী এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। কিন্তু ছেলের পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি।

ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। বাড়ি থেকে বের হয়ে পাগলের মতো বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতেন। একদিন লালমনিরহাট পৌরসভার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখে সন্দেহ হলে তাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। এক বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পান। লাজলী খাতুন বলেন, অনেক কষ্টে পড়ে আছি। কিছুদিন চাচা বাড়িতে ছিলাম। আর কতো থাকা যায়। তাই খুপড়ি ঘরটি করে আছি। শীতে কষ্টে দিন কাটছে।

স্থানীয় নীলা বেগম ও খোরশেদ হোসেন বলেন, লাজলী খাতুন আগে ভালো ছিল। পড়াশোনাও করেছেন। কী থেকে যে কী হলো আমরা জানি না। সে কারও কাছে যায় না, খায়ও না। সব সময় একা থাকে। একটি প্রতিবন্ধী কার্ড হয়েছে সে টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে চলে। গ্রামে তার কেউ নেই। তার মা ও ভাই তাকে সাহায্য করে না। এভাবেই এ শীতে কষ্ট করে আছে সে।

লাজলীর চাচা নুরুজ্জামান বলেন, লাজলী খাতুনের বাবার মৃত্যুর পর তার ভাই বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সব জমি বিক্রি করেছে। এরপর সবাই ঢাকা চলে যায়। লাজলীর মাথার সমস্যার কারণে হাজতে ছিল এক বছর। এরপর সুস্থ হয়ে চাচার বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর নিজেই টিনের চালা তৈরি করে ওই জমিতে চার মাস ধরে বসবাস করছে।

চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লাজলী খাতুনের অসহায় অবস্থা এবং মানসিক সমস্যার কারণে তাকে একটি প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। সে এলাকায় একটি টিনের চালায় বসবাস করছে বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তার বিষয়ে তথ্য দিলে আমরা খোঁজ নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সূত্রঃ জাগোনিউজ