লোভ দেখিয়ে ড্যান্স ক্লাবে শতাধিক নারী পাচার

| আপডেট :  ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

দুবাইয়ের বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাব ও ডিজে পার্টিতে কাজ করে প্রতিমাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে নিম্ন আয়ের কম বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে নারী পাচার করে আসছিল জিয়া উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্র। বিভিন্ন গার্মেন্টসের কর্মজীবী মেয়েদের তারা টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভন দিয়ে ড্যান্স ক্লাবে চাকরির কথা বলতো। এভাবে গত কয়েক বছরে শতাধিক নারীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে চক্রটি। কিন্তু পাচার করার পর সেখানে বাধ্য করা হতো যৌনকাজে।

চক্রটি পাচারের শিকার হওয়া নারীদের কাছ থেকে প্রথমে কোনো টাকাই নিতো না। উল্টো ওই নারীদেরকেই টাকা দিতো। আর সেটার যোগান নিতো পাচার হওয়া বা ফাঁদে পড়া পুরুষদের কাছ থেকে। দুবাই পাচারচক্রের মূল হোতা এই জিয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ শামসুদ্দীনকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পায় র‌্যাব।

সোমবার (২২ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ পাচারচক্রের হাত থেকে ১ জন নারী ও ৩ জন পুরুষকে উদ্ধার করা হয় রাজধানীর উত্তরা থেকে।

জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, চক্রটি বিদেশে যেতে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেটও তৈরি করে দিতো। এরপরেই নারীদের বিদেশে পাচার করে দেওয়া হতো। চক্রটি দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় পাচার করতো। বিএমইটি কার্ডটি কোনো রকম ট্রেনিং ছাড়াই করে দিতো। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একজন দক্ষকর্মী হিসেবে বিএমইটি কার্ড তৈরি করতে এক মাস সময় লাগতো। আমরা একজন ভিকটিমকে পেয়েছি, যাকে ট্রেনিং ছাড়াই বিএমইটি কার্ড দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটি হারিয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতেই আবারও কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়, পাচারকারী চক্র অতি কৌশলে নকল এই বিএমইটি কার্ড তৈরি করে নারীদের পাচার অব্যাহত রেখেছে। পাচার করতে যাওয়া একজন নারীকে দেশে থাকা অবস্থায় ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। তাকে আরও টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, তারা পুরুষ ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর জন্য তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু মেয়েদের পাঠাতে কোনো টাকা নেওয়া হতো না। উল্টো মেয়েদের টাকা দেওয়া হতো।

এছাড়াও, চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও টাকা নেওয়ার পর কোনো নারী বিদেশ যেতে না চাইলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। তখন বাধ্য হয়ে অনেকে যেতে রাজি হয়। পরে তাদেরকে সেখানে নিয়ে ড্যান্স ক্লাব ও ডিজে পার্টিতে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়।

তিনি আরও বলেন, পল্টন থেকে গ্রেপ্তারকৃত শামসুদ্দিনের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন, ১০টি পাসপোর্ট, ১টি বিএমইটি কার্ড উদ্ধার করা হয়। চক্রটি দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ভারতে নারী-পুরুষ পাচার করে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষকে পাচার করেছে চক্রটি।