ঢাকায় ১৫ দিন রিকশা চালাই , আর বাকী দিন বাড়িতে চাষাবাদ

| আপডেট :  ১ নভেম্বর ২০২১, ১০:২১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ নভেম্বর ২০২১, ১০:২১ অপরাহ্ণ

আজকে রিকশায় চড়ার পর রিকশাওয়ালা বললো আপা সন্ধ্যা ৬ টা থেকে এখন কয় ঘন্টা হয়। আমি দেখলাম ১১ টা বাজে। মানে ১৭ ঘন্টা।
বললাম ভাই : ১৭ ঘন্টা উত্তরে সে বললো, আপা জীবনে একটানা কখনও এইরকম রিকশা চালাই নাই। আজকেই চালাইলাম।
আমি বললাম, আপনার বাড়ী কোথায়? তিনি বললেন, আপা পাবনা, চাটমোহর। আপা আপনি ঐদিকে গিয়েছিলেন কখনও। আমি বললাম, হ্যাঁ , সাথিয়াতেও গিয়েছিলাম।

নিজেই বললো, আপা আমার খুব বেশি আর্থিক সংকট নাই। বাড়িতে জমি আছে ১ বিঘে। সেখানেই নিজেই আবাদ করি। ঢাকায় ১৫ দিন রিকশা চালাই , আর বাকী দিন বাড়িতে চাষাবাদ। এভাবেই চলে। আর আমাদের বাজারের সাথে লাগোয়া বাড়ি। সেখানে আমাদের একটা দোকান আছে সেটা ভাড়া দিয়েছি। সেখান থেকে ৭ হাজার টাকা আয় হয়।
তো আমি বললাম, তাহলে এত কস্ট করতেছেন কেন?
উত্তরে যা বললো, আমি অবাক হয়ে গেলাম।

বললো আপা, আমাদের সাথে এক ভাই রিকশা চালাতেন। তার নাম হাসান। যদিও ১৯৯৫ সালের দিকে তিনি হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে প্রদীপ থেকে হাসান হয়ে গিয়েছিলেন। সে লোকটা একটা অদ্ভুত ধরণের ভালো মানুষ ছিলেন। দুটা ছেলেমেয়ে। মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। বাড়ি তাদের সৈয়দপুর৷ সেই হাসান ভাই রিকশাওয়ালাদের মধ্যে খুব শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন।

তো গত সপ্তাহে তিনি হুট করে মারা যান। তারপর মেয়েটার বিয়ে নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তো তিনি সহ ১৪ জন রিকশা ড্রাইভার ভাবলেন তাদের কিছু করতে হবে। তারা মহল্লা থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা তুলেছেন।

আর বাকী টাকা তারা ১৪ জন রিকশা ড্রাইভার বহন করবেন বলে পণ করেছেন। তাই তারা গতরাতে একযোগে সারারাত রিকশা চালিয়েছেন । আজকে তারা একেক জন ১৫০০ করে দিবেন। তো আমি জিজ্ঞাস করলাম আজকে কত টাকা হয়েছে। তার হাসির ঝিলিক ১৪৩০ টাকা। তো আমার ভাড়া ৫০ ছিলো আমি তাকে ৭০ টাকা দিয়ে বললাম তাহলে আপনার ১৫০০ কোটা ফিলাপ।

তিনি বললো, আপা এখন জমা তুলতে হবে তো।
এর মধ্যেই আরেক রিকশা ড্রাইভার, তাকে বললো,
কিরে যাবিনা এখন গ্যারেজে?
সে বললো, আর দুটো খ্যাপ।

তারপর সে রিকশা চলে গেল। তার চেহারায়ও ক্লান্তি। আমাকে বললো আপা উনিও ১৪ জনের একজন।
বললো আপা, আজকে দিনে ঘুমায়া বিকেলে বাজার করবো৷ আর কিছু টাকা শর্ট থাকলে আবারও এইরকম ১৭ ঘন্টার খ্যাপ মারবো।

জিজ্ঞেস করলাম, কি নাম ভাই আপনার?
বললো, মিজানুর রহমান।
বললো দোয়া করবেন আপা। যেন গায়ে গতরে খাটতে পারি।
বললাম চা খাবেন?
বললো না আপা, ভাত খাইয়া ঘুমাবো!

আমি বললাম নাম্বারটা দেন। বিয়ে কেমন হলো, জানতে ফোন দিবো।
সে নাম্বার দিলো। আমি নাম্বার নিয়ে হাটা দিলাম। পিছন ফিরে দেখলাম, মিজানুর রহমান দ্রুতবেগে রিকশা চালিয়ে চলে যাচ্ছেন।
লেখাটি লাকী আক্তার-এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ( লেখাটির আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব।)