চীন-জার্মানি থেকে জিন এনে অপারেশন করান কবিরাজ!

| আপডেট :  ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চিকিৎসার নামে নামের আগে ডাক্তার লাগিয়ে রেজাউল ইসলাম অসহায় মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। একই অভিযোগ উঠেছে পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কবিরাজ আকরাম হোসাইনের নামেও। হোমিও চিকিৎসক রেজাউল ইসলাম উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকার সামছুর রহমানের ছেলে ও কবিরাজ আকরাম হোসাইন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হোগলা এলাকার মৃত সৈয়দ আলী গাজীর ছেলে।

নামের আগে ডাক্তার লাগানো রেজাউল ইসলাম ও কথিত জিনের বাদশা আকরামের বিরুদ্ধে তথ্যানুসন্ধানে জান গেছে, চিকিৎসার নামে এলাকার সহজ সরল সাধারণ মানুষের পরীক্ষার নামে প্রতারণার ফাঁদে পেতে ঘোষণা করে বড় বড় দুরারোগ্য ব্যাধির কথা। রোগী চিন্তায় পড়ে গেলে নিরাময়ের ওষুধও তার কাছে আছে জানিয়ে শুরু হয় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়। উপজেলার মৌতলা এলাকার নাসিমা ও ফাতেমা দুই বোন জানান, ভণ্ড চিকিৎসক রেজাউল ও কবিরাজ আকরাম হোসেনের প্রতারণার ফাঁদ ধরার জন্য পরিচয় গোপন রেখে রেজাউলের বাড়িতে যান।

তারা দেখেন, বাড়ির সামনে ডক্তার রেজাউলের বিরাট সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে লেখা কম্পিউটারের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে জার্মানির ওষুধ দেওয়া হয়। রোগী এসেছে শুনে কথিত চিকিৎসক রেজাউল তার চেম্বারে বসিয়ে গভীর মনোযোগ সহকারে রোগী দেখছে। এরপর ডাক্তার হাতে একটি এনালাইজার মেশিন দিয়ে ল্যাপটপের সাহায্যে কিছু একটা দেখে তাদের নাকি লিভারে সমস্যা হয়েছে জানায়। রোগের কথা শোনার পর চিকিৎসা পদ্ধতি জানতে চাইলে ডাক্তার মিচকি হেসে জানায়, সমস্যা নেই। আমি এই রোগের চিকিৎসা করে দিলে সব সমাধান হবে যাবে। তবে আমার ভিজিট দিতে হবে ৩০০ টাকা, টেস্ট ১১শ’ টাকা আর ওষুধ ৪ হাজার টাকা।

রেজাউলের এ কথায় অনুসন্ধানী দুই বোন রাজি হয়ে গেলে ডাক্তার রেজাউল সন্দেহের নজরে তাকায়। এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে কথিত এইসএসপি পাস হোমিও ডাক্তার রেজাউল।

কথিত ডাক্তার রেজাউল প্রতারণার স্বীকার উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের দুদলি গ্রামের আল আমিন বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য রেজাউলের বাড়িতে যাই। প্রতারণার মাধ্যমে তার নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা। একই এলাকার সাবিনা খাতুন ও শফিকুল ইসলামের অভিযোগ তারাও ভুয়া ডাক্তারের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায় সেখানে চিকিৎসার নামে পাতা হয়েছে প্রতারণার মহা ফাঁদ। হোগলা গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী গাজীর ছেলে আকরাম গাজী পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। তিনি জিন-পরী দিয়ে রোগীদের বড় বড় রোগ অপারশেন করে থাকেন। ক্যান্সার, যৌন, সন্তান না হওয়া নারীদের সন্তান দান থেকে শুরু সব ধরণের চিকিৎসা করেন তিনি। আশ্চার্যজনক হলেও সত্য বিভিন্ন বড় বড় রোগের অপারেশন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সার্জারি জিনেরা। এসব প্রতারণা করে রোগিদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আকরাম হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা। যে সব নারীদের সন্তান হয় না তাদেরকে কবিরাজ আকরামের বাড়িতে রেখে চিকিৎসাও নাকি দিয়ে থাকে জিনের মাধ্যমে।

একই গ্রামের মহাদেব কুমার, শাহাজান হোসেন, তৌহিদ, জাকির হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আকরাম নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে রোগী চিকিৎসা করেন। জার্মানি, ফরাসি ও চীন থেকে জিনের ডাক্তার এনে বিভিন্ন বড় বড় রোগের অপারেশন করার নামে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা বলে দাবি তাদের।

এ বিষয়ে আকরামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তৈল ও পানি পড়া দিয়ে থাকি। তবে এখন থেকে এসব কাজ আর করব না। হোমিও চিকিৎসক রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি হোমিও পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার পরীক্ষার যন্ত্রপাতি না থাকলেও রোগীদের মনোবল চাঙা রাখার জন্য পরীক্ষার কথা বলে থাকেন। ভুল স্বীকার করে আগামী তিনি এসব করবেন না বলে জানান।

এদিকে এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ তৈয়েবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিনের দ্বারা অপারেশন এসবের কোনো ভিত্তি নেই। এ ছাড়া অনেকে নামের আগে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা সেবার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। যেটি খুবি দুঃখজনক। আমি সিভিল সার্জন স্যারের সাথে কথা বলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব ভুয়া কবিরাজ ও চিকিৎসক নামধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।