‘পৃথিবীতে যত নোংরামি হচ্ছে তার একটি কারণ অশালীন পোশাক’

| আপডেট :  ২৮ আগস্ট ২০২১, ০৫:১৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ আগস্ট ২০২১, ০৫:১৯ অপরাহ্ণ

আজকের প্রজন্ম নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনঃ শাহ্ আবদুল হান্নান আমি নিজে গত শতাব্দীর ষাটের দশকের ছাত্র। সময়ের পরিবর্তনে নিশ্চয়ই সমস্যা বা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। কিন্তু গত বিশ বছরে এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে যা আগের কোনো প্রজন্ম মোকাবিলা করেছে বলে মনে হয় না। এখন যারা আঠার বা তার কম বয়সের, তাদের একটা অংশ মোবাইল প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির ভয়াবহ নৈতিকতাবিধ্বংসী উপাদানের শিকার।

মোবাইলে নানা গোপন ছবি ধারণ এবং কথাবার্তা রেকর্ড করার একটি সুযোগ রয়েছে, যা অনেক সময় অন্য ব্যক্তি জানতে পারে না। তাছাড়া কিছু কোম্পানি এমন সময়ে কলচার্জ কমিয়ে দেয় যার ফলে এ বয়সের ছেলেমেয়েরা প্রায় সারা রাত মোবাইলে কথা বলে তাদের বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে। এর ফলে তাদের কান নষ্ট হয়, ঘুম নষ্ট হয়, লেখাপড়া নষ্ট হয়, ভালো করে পরের দিন ক্লাস করা হয় না।

এছাড়াও রয়েছে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, যার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তেমনিভাবে আগের প্রজন্ম ইন্টারনেট প্রযুক্তির ভালো বা মন্দের সম্মুখীন হয়নি। এ প্রযুক্তির কল্যাণের শেষ নেই, যেগুলো বর্ণনার স্থান এটা নয়। কিন্তু এর অন্য দিকটি হচ্ছে, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি এবং নগ্ন যৌনতার অস্বাভাবিক ও সীমাহীন বিস্তার হচ্ছে ঘরে ঘরে, বিশেষ করে সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে।

বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এ প্রযুক্তি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো এই ভয়াবহ বিকৃতি প্রতিরোধের কোনো কার্যকর চেষ্টা করেছে বলে আমার জানা নেই। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই যে, আমি নিজে যখন ইন্টারনেটে কাজ করি তখন সময়ে সময়ে বিকৃত যৌন দৃশ্যাবলি স্ক্রিনে চলে আসে। এসব বন্ধ করা কঠিন হয়। এসব ক্ষেত্রে যেভাবেই হোক বিভিন্ন দেশের সরকারকে ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ভাবতে হবে এবং বসতে হবে যেন এটা বন্ধ করা যায়।

আমরা এটুকু জানি, কোনো কোনো দেশ এক্ষেত্রে সফল হয়েছে। আজকের প্রজন্ম আরও নানা ধরনের নতুন মাত্রার অস্বাভাবিকতার সম্মুখীন। যেমন—আজকাল কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সুপার স্টার বা এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হাজার হাজার কিশোরীকে নানা ধরনের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নিয়োজিত করছে। যদিও তারা এগুলোকে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা বলছে না। এসবের আসল উদ্দেশ্য পুঁজিবাদের মূলনীতি অনুযায়ী এসব কোম্পনির মুনাফা বৃদ্ধি করা। তাতে নৈতিকতার কী হলো সেটা কোনো বিষয় নয়।

এসব প্রতিযোগিতার উপস্থাপিকা এবং অংশগ্রহণকারীরা অনেক সময় এমন পোশাক পরিধান করে থাকেন যা আমাদের কালচারে মোটেই সঙ্গত বলা চলে না। তাদের উগ্র সাজসজ্জা থাকে, অনেক সময় পোশাক টাইট হয়, ওড়না থাকে না, কামিজ ছোট হয় এবং উগ্র রং-চংয়ের হয়। এগুলো প্রকৃতপক্ষে আমাদের উঠতি বংশধরদের শিক্ষা বা রুচি বা যোগ্যতা কোনোভাবে বৃদ্ধি করছে না।

বর্তমান বস্তুবাদী সভ্যতার প্রভাবেই বলব, এ বয়সের ছেলেমেযেরা নৈতিকতার ক্ষেত্রে তাদের যা কর্তব্য তা তারা ধরে রাখতে পারছে না। তারাও ভোগবাদী হয়ে যাচ্ছে। একটি উদাহরণ দিই—আমারই এক ভাগনি, যে হলে থাকে, তার সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে জানতে পারলাম, ছুটির দিনগুলোতে এ বয়সের মেয়েরা বিশেষ করে সাজসজ্জা, ঘুরে বেড়ানো এবং পার্লারে গিয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। সে বলল, কোনো ভালো অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিলে তারা বলে, এতে কী হবে। এ ক’দিনের দুনিয়াতে ভোগ করাই তো উচিত।

এ সুযোগ তো আর আসবে না। তার কথায় বিশ্বব্যাপী সেক্যুলার চিন্তা এবং পরিস্থিতির ভয়াবহতাই প্রমাণ করে। আমার নিবেদন, এই প্রজন্মই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। কারণ ভবিষ্যত্ মানবতা তাদেরই সন্তান-সন্তুতি হবে। এটা অভিভাবকদের জন্য একান্ত জরুরি যে তারা এই প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অমুসলিমদের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ হওয়া উচিত তা তাদেরই ধর্মীয় বা আদর্শিক নেতারা ঠিক করবেন।

কিন্তু মুসলিম উম্মার ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, অভিভাবকদের দায়িত্ব হচ্ছে :
১. ৮-১০ বছরের মধ্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী ছেলে এবং মেয়েকে নিজে পড়িয়ে দেয়া, অন্তত জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী হচ্ছে সর্বোত্তম আদর্শ। এটা ভালো করে না পড়ে কখনোই উত্তম নৈতিকতা অর্জন করা সম্ভব নয়।

২. তেমনিভাবে অন্তত আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, ফাতেমা, আয়েশা ও খাদিজার (রা.) জীবনী ১১-১২ বছরের মধ্যে পড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এদের সমান মানুষ পৃথিবীতে হয়নি।

৩. অন্তত খোলাফায়ে রাশেদার ইতিহাস পড়ানোর ব্যবস্থা করা, যাতে তারা আদর্শ শাসনের নমুনা বুঝতে পারে এবং তাদের অতীত ঐতিহ্য জানতে পারে।

৪. তেমনিভাবে এ বয়সের ছেলেমেয়েকে তাদের দেশে ইসলামের আগমন ও বিস্তার এবং শাসনের ইতিহাস পড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা, যাতে তারা তাদের স্থানীয় ঐতিহ্য জানতে পারে।

৫. তাদের অল্প বয়সে অন্তত কোরআনে পাকের কিছু অংশের অতি সুন্দর তিলাওয়াত শেখানো, যাতে তাদের মনে কোরআনের সুরের যে সৌন্দর্য, যে মাধুর্য তা তাদের অন্তরকে প্রভাবিত করে। একই সঙ্গে কোরআনের যতটুকু সম্ভব অর্থ পড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা।

৬. সর্বশেষ হচ্ছে তাদের শুরু থেকেই শালীন পোশাকের দিকে উদ্বুদ্ধ করা। পৃথিবীতে যত নোংরামি হচ্ছে তার একটি কারণ অশালীন পোশাক। আমি মুসলিম উম্মাহর সরকার, নেতৃবৃন্দ, আলেম, চিন্তাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ইমাম ও খতিব—সবার কাছে আবেদন করি, এ বিষয়টি আপনারা গভীরভাবে বিবেচনা করুন এবং এ ব্যাপারে সামগ্রিক কার্যকর স্থানীয়, সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিন।

লেখক : সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার