চোরেরা দেখতে অবিকল মানুষের মত

| আপডেট :  ৬ জুলাই ২০২১, ০৪:৩৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ জুলাই ২০২১, ০৪:৩৪ অপরাহ্ণ

লেখা চোরদের জ্বালায় যদিও আমি অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছি, তারপরেও দুইটা কথা বলি। চোর আসলে নানা রকম হয়। ধরেন, লেখা পোস্ট করার সাথে সাথে যারা নিজেদের ওয়ালে কপি পেস্ট করে, লোকজন প্রশংসা করলে বিনয়ে গলে গলে ধন্যবাদ দেয়, এরা হচ্ছে ছিঁচকে চোর।

আমার ধারনা ছোটবেলায় স্কুলে অন্যদের পেন্সিল ইরেজার চুরি করা দিয়ে এদের হাতে খড়ি হয়েছে। জাস্ট নিজের মনে করে নিয়ে নেয় আরকি।
একদল চোরের আবার সামান্য ইমান আছে। এরা পরকালে আল্লাহকে আর ইহকালে পাবলিক এর কাছে জবাব দেয়ার ভয়ে নিচে লেখে দেয় “কালেক্টেড”।জানে আমার পিতৃপ্রদত্ত একটা নাম আছে।

তাদের আমার লেখা ভাল্লাগে, পোস্ট দিতে ইচ্ছা করে কিন্তু লেখককে ক্রেডিট দিতে ইচ্ছা করেনা। অদ্ভুত স্বেচ্ছাচারী চোর এরা।
আরেকদল সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এরা ঠিক চোর না, এরা হচ্ছে ডাকাত।
এরকম এক ডাকাত কি করেছে বলি, পিরিয়ড বিষয়ক আমার একটা লেখা পোষ্ট করেছিলাম বেশ আগে।

একদিন দেখি ২৫/২৬ বছর বয়সী এক পুরুষ ডাকাত সেই লেখাটা একটা সাহিত্য গ্রুপে নিজের নামে পোষ্ট করেছে এবং যথারীতি সেখানে প্রশংসার ঝড় উঠে গেছে। তার আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই তাকে বাহবা দিতে দিতে টায়ার্ড।
আমি সেইসব কমেন্টে তার উত্তর পরে রাগে দুঃখে নিজের আঙুল কামড়ায়ে খায়ে ফেলতেসি এমন অবস্থা।

সে সবাইকে দোয়া করতে বলছে। যেন সে ভবিষ্যতে এমন লেখা আরো উপহার দিতে পারে।ভালো কথা, এই পর্যন্তও সহ্য করলাম।
তারপর দেখি, একজন ভদ্রমহিলা কমেন্ট করেছে
– বাবা, তোমার মায়ের বান্ধবী হিসেবে আমি গর্ব বোধ করছি যে, সে তোমার মত সোনার টুকরা ছেলে জন্ম দিয়েছে। অনেক বড় হউ বাবা। অনেক দোয়া রইলো।

ডাকাত সেইটার উত্তরে লেখসে
– সব আমার পরিবারের শিক্ষা আন্টি। উনারাই আমাকে এসব শিখিয়েছেন। উনাদের কারণেই আমি এভাবে চিন্তা করতে পারি। লিখতে পারি। দোয়া করবেন যেন ভবিষ্যতে যেন এভাবেই উনাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।

এইটা পড়ার পর মনে হইলো, আমি এখনো বাইচা আছি কিল্লিগা ? আল্লাহর কি কোন বিচার নাই? ইসরাফিল সাহেব শিঙ্গায় এখনো ফুক দেয় নাই?
মনে মনে কইলাম, চুরার চুরা বাবা মায়ের দোয়া থাকলে তুই বড় হইয়া বিরাট বড় ঋণখেলাপী হবি সন্দেহ নাই।জনগনের টাকা মাইরা খাবি।

পরে গ্রুপ এর এডমিনকে বলায় উনি পোষ্ট টা ডিলিট করে দিলেন আর আমি তারে ব্লক দিলাম। তবে ব্লক দেয়ার আগে তার প্রোফাইলটা ঘুরে দেখতে গেলাম। এবং অবাক হয়ে খেয়াল করলাম। চোরেরা দেখতে অবিকল মানুষের মত…

মরাল অফ দ্য স্টোরি ইজ, আসেন আমরা সবাই আমাদের সন্তানদেরকে বেসিক কিছু অনেস্টির শিক্ষা দেই। বাচ্চাদের সামনে ছোটখাটো বিষয়ে চট করে, রসিকতা করে, এমন কি খেলার ছলে নিজেরাও মিথ্যা না বলি। তাদেরকেও না বলতে উৎসাহিত করি এবং সত্য বলার সৎ সাহস দেই।

অন্যের জিনিস না বলে নিয়ে নেয়া, পড়া শিখতে না পারলে টিচার এর সাথে ভয় পেয়ে মিথ্যা বলা এগুলোকে নিরুৎসাহিত করি। মানুষ যা চর্চা করে তাতেই এক্সপার্ট হয়। মনে রাখবেন, পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত দাগী আসামীও ছোটবেলায় কিউট চোর ছিল।

অতএব আমাদের যদি বাচ্চারা কিউট মিথ্যাবাদী না হয়ে, সামান্য বেয়াদব সত্যবাদী হয় তাতেও চিন্তিত হবার কিছু নেই। কারণ, কেউ যদি শুধু সত্য বলাটা শিখে ফেলে,তার পক্ষে জীবনে খারাপ কিছু করা অসম্ভব কঠিন…

লেখাটি রাখি নাহিদের ফেসবুক থেকে নেওয়া (সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।)