লকডাউনে কলেজ শিক্ষককে পিটিয়ে হাত ভাঙলেন এসি ল্যান্ড

| আপডেট :  ৩ জুলাই ২০২১, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ জুলাই ২০২১, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ণ

রাজশাহীর বাগমারায় লকডাউন নিশ্চিত করতে গিয়ে এক কলেজ শিক্ষককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসি ল্যান্ডের (উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি) বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের নাম আবদুল আজিজ। তিনি উপজেলার সাধনপুর পঙ্গু ও শিশু নিকেতন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন আবদুল আজিজের স্ত্রী বেবী খানম।

এ বিষয়ে জানতে কলেজ শিক্ষক আবদুল আজিজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী বেবী খানম ফোন ধরেন। তিনি জানান, এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান তার স্বামীকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে তিনি বাড়িতে এসে ক্ষমাও চেয়েছেন।

বেবী খানম জানান, তার স্বামী আবদুল আজিজ ডায়াবেটিসের রোগী। তিনি বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি বাড়িতে ফিরছিলেন। সে সময় পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা সবাইকে বাড়িতে ফেরার জন্য সিকদারী বাজার থেকে লোকজনকে ধাওয়া করেন।

আহত আবদুল আজিজের স্ত্রী জানান, তাদের বাড়ি সিকদারী বাজারের কাছেই। পুলিশের ধাওয়ায় তারা সবাই আজিজের বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার স্বামী বাড়িতে ঢোকার মতো সময় পাননি। সে সময় আজিজ বাড়ির সামনে একটি ওষুধের দোকানে ঢুকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মালিক দোকানের শাটার বন্ধ করে দেন।

বেবী খানম বলেন, লোকজনকে তাড়া করার সময় এসি ল্যান্ড বৃষ্টিভেজা রাস্তায় পিছলে পড়ে যান। নিজেকে সামলে নেওয়ার পর তিনি আজিজকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। তিনি কলেজ শিক্ষক এটি জানার পরে এসি ল্যান্ড তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। বাড়ির দিকে ফেরার জন্য তিনি হাঁটতে শুরু করলে এসি ল্যান্ড তাকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।

বেবী খানম আরো বলেন, আমার স্বামী রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল এবং তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। এসি ল্যান্ড সেখান থেকে চলে গেলে পরিবারের সদস্যরা আমার স্বামীকে উদ্ধার করেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলাম তার ভাঙা হাড়টি তার চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে। সন্ধ্যায় আজিজকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। স্থানীয় এক ব্যক্তি তার হাত ব্যান্ডেজ করে দেন। আজ সকালে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার বাম হাতে প্লাস্টার করা হয়েছে।

বেবি খানম জানান, সকালে ইউএনও তাদের বাড়িতে আসেন। আজিজকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি সেখানে ছিলেন। ইউএনও তাদের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বাড়িতেও আসেন। এরপর এসি ল্যান্ডও তাদের বাড়িতে আসেন। এসি ল্যান্ড ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা যদি তাকে ক্ষমা না করি, তবে তার চাকরি হুমকির মুখে পড়বে। তাই, আমরা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমাদের আর কোনও অভিযোগ নেই।

তবে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান। তিনি জানান, লকডাউন কার্যকর করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে তিনি লোকজনকে ধাওয়া দিয়ে বাড়িতে পাঠানোর সময় কলেজ শিক্ষক আবদুল আজিজ মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হন।

এ ঘটনায় ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, আমি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করছিলাম বলে আমাকে দোষ দেওয়া হচ্ছে। তিনি লোকজনের মধ্যে দৌঁড়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। তার আঘাত পাওয়ার খবর শুনে আমরা তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলাম। আজিজ বা তার স্ত্রী আপনাদের যা বলেছেন, এমন কিছু তারা আমাদের জানাননি।

ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান।
এদিকে, ইউএনও শরীফ আহমেদও এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে কলেজ শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, কলেজ শিক্ষক আব্দুল আজিজের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তিনি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং অনেকটা সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন।

তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। এখানে লকডাউন কার্যকর করা একটি কঠিন কাজ। লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে কঠোর হওয়ায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

পরে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে আবদুল আজিজের স্ত্রী বেবী খানম বলেন, আমার স্বামীকে পেটানোর ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটেছে এবং এটা আমাদের বাড়ির সামনে ঘটেছে। আমাদের পরিবারের সদস্যরা ও এলাকার অনেকেই সেটা দেখেছেন। কেউ অস্বীকার করলে করতে পারে। তাতে আমাদের কোনো মাথাব্যাথা নাই। আমরা এ ঘটনার কোনো বিচার কারো কাছে চাইনি। যা ঘটছে আল্লাহ দেখেছেন, তিনিই উপযুক্ত বিচার করবেন।
এদিকে, ঘটনার পর গতকাল রাতে বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান তার ফেসবুকে শিক্ষক আব্দুল আজিজের ছবিসহ ঘটনাটি তুলে ধরেন। ওই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘বাগমারায় নিজ বাড়ির দরজায় অসুস্থ এক কলেজ শিক্ষককে লকডাউনের বিধিনিষেধের নামে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে এসিল্যান্ড মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে।’ তার এই পোস্ট রাতেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। যদিও পরে জিল্লুর রহমান সেই পোস্টটি তার ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলেন।