বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যাদের সিট দিলাম তারা এখন এমপি-মন্ত্রী, আর আমারে কয় ‘হামিদ পাগলা’

| আপডেট :  ২৭ জুন ২০২১, ০৭:৩৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ জুন ২০২১, ০৭:৩৫ অপরাহ্ণ

আমার সঙ্গে যারা ছিল ওরা তো স’চিব, ব্যারিস্টার, এমপি-মন্ত্রীও হয়েছে। যাদের হলে সিট দিলাম, ওদের অনেকেই এখন দেশের পদস্থ কর্মকর্তা; আর আমারে লোকজন কয় ‘হামিদ পাগ’লা’।

শুক্রবার কথাগুলো বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৪-৮৫ ব্যাচের মেধাবী ছাত্র মো. আবদুল হামিদ। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজে’লার মইলাকান্দা ইউনিয়নের মেসিডেঙ্গি গ্রামের মৃ’ত এমডি সাবুদ আলীর ছেলে তিনি।

মো. আবদুল হামিদ পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্টার মার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন। মা’দকের নে’শায় মেধাবী সেই ছেলেটির স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তিনি এখন এলাকায় ‘হামিদ পাগ’লা’ নামে পরিচিত।

অসংলগ্ন আচরণের কারণে এলাকাবাসী তাকে পা’গল বলেই চেনেন। শত চেষ্টা করেও তাকে নে’শা থেকে ফেরাতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। এই সুযোগে তার জমি দ’খলে নিয়েছেন অন্য ভাইয়েরা। সহায়-সম্বল হা’রিয়ে ভবঘুরে এই মেধাবী ছেলেটি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, কাউরাট স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান আবদুল হামিদ। শুধু তাই নয়, তিনি উপজে’লায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। গৌরীপুর আরকে স’রকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। এসএসসিতেও প্রথম বিভাগ (স্টার মার্ক) পেয়ে বোর্ডের শিক্ষাবৃত্তি পান ১৯৮২ সালে।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। প্রথম বিভাগ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন এবং লাভ করেন শিক্ষাবৃত্তি। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফিতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালেই পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ও ভাইদের কর্মসংস্থানের জন্য ‘মা মৎস্য ফিসারিজ’ করার জন্য পুকুর খননের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ভাইয়েরা তাকে ভু’ল বোঝেন।

জমি নিয়ে বিভেদের জেরে নানা অজুহাতে তার উপরে নেমে আসে অ’ত্যাচার-নি’র্যাতন। এরই মাঝে মা’দকের নে’শা পেয়ে বসে। প্রথমে সিগারেট, পরে ম’দ ও গাঁ’জার নে’শায় জীবনটাই ত’ছনছ হয়ে যায় হামিদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাটা তার পক্ষে আর চা’লিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পা’গলের মতো অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন হামিদ। বিয়ে করলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে এ আশায় তাকে বিয়ে করালেও তিনি এখন ছন্নছাড়া জীবনযাপন করছেন।

হামিদ আফসোস করে বলেন, ‘অনেকবার নে’শা ছাড়ার চেষ্টা করেছি। ছাড়ছিও। কিন্তু শেষমেশ ছাড়তে পারি নাই। আমার মাথাটা এখন ঠিক নাই, চিকিৎসা দরকার। স্ত্রী-স’ন্তান, ছোট বোন, মা কারো জন্যই তো কিছু করতে পারলাম না। নে’শা শুধু আমারে খাইছে না; আমার পরিবার, স্বপ্ন সব খাইছে। অকর্মা মানুষ আমি।