ছিলেন ছিচকে চো’র ! বিটিভি’র ভু’য়া পরিচয় দিয়ে বনেছেন সাংবাদিক

| আপডেট :  ১৮ জুন ২০২১, ০৫:২৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৮ জুন ২০২১, ০৫:০২ অপরাহ্ণ

বিটিভির প্রতিনিধি নন। নেই প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা। তবুও বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভির লোগো ব্যবহার করে উত্তরা এলাকায় বনেছেন সাংবাদিক ! এক সময় ছিলেন উত্তরার ছিচকে চুর ! নিজের নামটাও যিনি ঠিক করে লিখতে পারেনা তিনি এখন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার মালিক, পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে পদবী লিখেছেন বার্তা সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ !

বলছিলাম, উত্তরা ৮ নং সেক্টর, ফায়দাবাদ রেলগেট এলাকায় বসবাসরত, কুমিল্লা জে’লার দাউদকান্দি থানার অর্ন্তগত নাগের কান্দি গ্রামের আজহারুল হক এর ছেলে, রাজু আহমেদ ওরফে সায়মার কথা !

উত্তরায় এক নাচের স্কুলে, এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক জাভেদ এর মানিব্যাগ থেকে টাকা চু’রি করে ধরা পড়েছিলেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে উত্তরার সিনিয়র এক সাংবাদিক বিচার করে ছাড়িয়ে আনেন ! সেই থেকে সাংবাদিকদের সাথে সক্ষ’তা গড়ে তুলে, রাতারাতি বনে যান সাংবাদিক। সংবাদ লিখার যোগ্যতা না থাকার কারনে শুরুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ছবি তোলার কাজ করতেন । তারপর গাজীপুরে কর্মরত বিটিভির প্রতিনিধির স্নেহধন্য হয়ে তার ব্যাক্তিগত ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেন!

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, তখন থেকে ধিরে ধিরে নিজেকে বিটিভির প্রতিনিধির ভূয়া পরিচয় দিয়ে মোটর সাইকেলের সামনে বিটিভি’র বিশাল ষ্টিকার লাগিয়ে, দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন উত্তরা,গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা । কোন বেতন না পেলেও ১,৭৫০০০/ (এক লক্ষ পচাত্তর হাজার) টাকা দিয়ে স’রকারী নীতি লংঘন করে তিনি “মুত্তির চেতনায় বাংলাদেশ” নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার মালিকানা কিনেছেন !

যিনি সাংবাদিকতার আড়ালে, মেয়ে দিয়ে দেহ ব্যবসা এবং ব্ল্যা’কমেইলিং, চাদাবাজীসহ নানান অ’ভিযোগের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতি “দেশপত্র” পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে তার এসব অ’পকর্ম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর-ই, বি’ষয়টি উত্তরার গণমাধ্যমকর্মী থেকে সাধারণ মানূষের নজরে আসে ।

উক্ত পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর, স্থানীয় সাংবাদিকরাসহ খুশি নানা পেশার মানূষজন ! নাম প্রকাশ না করার শর্তে, উত্তরায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবীদ, ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলেন, তাদের কাছে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশের নাম করে বিভিন্ন মেয়ে দিয়ে অভিনব কায়দায় টাকা দাবী করতো। টাকা না দিলে ই’ভটিজিং ও নারী নি’র্যাতন এর মা’মলা দিবেন বলে ভ’য়ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যা’কমেইল করার চেষ্টা করতো এই প্র’তারক।

এছাড়াও তার বি’রুদ্ধে রয়েছে, পরনারীকে নিজের স্ত্রী সাজিয়ে স’র্বনাশ ঘটানোর গা শিউরে উঠার মতোও অ’ভিযোগও।
প্রতারনার ধরন:- তার টাগের্ট, বড় ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবীদ, লোকাল কাউন্সিলর, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ! তারপর বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করার নামে তার চ’ক্রের সুন্দরী মেয়েদের পাঠাতো ! গড়ে তুলতো সক্ষ’তা, এক সময়, সেসব ব্যাক্তিদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে, নে’শা জাতীয় জিনিস খাইয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে ছবি এবং ভিডিও করে । তারপর রাজু টিভিতে সংবাদ প্রকাশের ভ’য় দেখিয়ে তাদের চাহিদামত টাকা আদায় করার অ’ভিযোগ উঠেছে।

এসব অ’পকর্মের স্বী’কারোক্তি দিয়েছিলেন রাজুর আরেক অ’পকর্মের সহযোগী, রাজুর রক্ষিতা, সাংবাদিক নামধারী হাফছা আহমেদ মিতু । প্রতারনার স্বীকার ব্যাক্তিরা সামাজিক ,রাজনৈতিক এবং পারিবারিক সম্মান ন’ষ্ট হবার ভ’য়ে মুখ খুলেনি এই নামধারী সাংবাদিকের বি’রুদ্ধে ।

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভূয়া দাওয়াত কার্ড তৈরি করে সুকৌশলে দাওয়াতের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যায়, পরবর্তীতে মোট অংকের টাকা দাবী করেন। টাকা না দিলে সেসব ই’ভটিজিং ও নারী নি’র্যাতন এর মা’মলা দিবেন বলে ভ’য়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।

রাজুর অ’পকর্মের সহযোগী হাফছা আহমেদ মিতু ‘কে দিয়ে- বিভিন্ন ব্যাবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ কয়েকজনের বি’রুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন অ’ভিযোগে সাধারন ডায়েরী এবং মা’মলা করিয়ে উক্ত ব্যাক্তিদের ব্ল্যা’কমেইল করার চেষ্টা করেন । সেসব অ’ভিযোগের কপি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে ।

শুধু তাই নয়, গাজীপুর গাছা থানায় এই প্রতিবেদকের নামে ধ”ণের মত একটি গু’রুতর অ’ভিযোগ এনে রাজু, হাফছা আহমেদ মিতুকে দিয়ে একটি অ’ভিযোগ দা’য়ের করান, যা প্রাথমিক ত’দন্তে পুলিশের কাছে মিথ্যে প্রমান হলে, সে অ’ভিযোগ পুলিশ আমলে নেয়নি ।

রাজুর গ্রামের বাড়ী, দাউদকান্দি থানার অর্ন্তগত নাগের কান্দি গ্রামের আ: সাত্তার মিয়া (৪৮) জানান, রাজু ছোট বেলায় গ্রামে থাকাকালীন, সে কোনদিন স্কুলেও যায়নি, তিনি্ এই প্রতিবেদকের কাছে উল্টো প্রশ্ন ছু’ড়ে বলেন-, পড়ালেখা না জানা লোক সে আবার সাংবাদিক হয় কেমন করে ?একই এলাকার হেলাল (৪০) নামে এক ব্যাক্তি জানান, ছোটবেলায় গ্রামে চু’রি করে ধরা খেয়ে পা’লিয়ে ঢাকায় চলে যায়, এখন এলাকায় আসে’না !

ফেসবুকে প্রতারনার ধরন- মুত্তির চেতনায় বাংলাদেশ, সাংবাদিক ক্লাব উত্তরাসহ কয়েকটি ফেসবুক পেইজ এডমিন তিনি, সেসব পেইজে বিভিন্ন পেশার মানুষজন ছাড়াও পেশাদার সাংবাদিকদসহ সমাজের বিত্তবানদের বি’রুদ্ধে খা’রাপ মন্তব্যের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সেই আইডিতে বিভিন্ন সময় সংবাদ ও সাংবাদিকদের নামে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য লিখে মানহানী করার চেষ্টার প্রমান মিলেছে উক্ত ফেসবুক এবং পেইজগুলোর পোষ্ট দেখে ।

উত্তরা এলাকায় মূলধারার অনেক গণমাধ্যমকর্মীরা রাজুর বি’ষয়ে ঘৃণা প্রকাশ করে কেউ কোন মন্তব্য করতে চায়নি ।
এবি’ষয়ে মন্তব্য জানার জন্য কথিত সাংবাদিক রাজুর সেল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায় ।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ( বিটিভি) এর বক্তব্য- বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এর উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) অনুপ কুমার খাস্তগীর বলছেন, বিটিভি নিউজ কিংবা বার্তা বিভাগে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কেন, দেশের কোথাও মো. রাজু আহমেদ নামে আমাদের কোনো কর্মী নেই।
মোটরসাইকেলে ‘বিটিভি সংবাদ’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে সর্বত্র যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি কমপ্লিট একজন প্র’তারক। মিডিয়া কর্মী হিসেবে অতিশীঘ্রই তাকে ধরে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করাটা আপনারও দায়িত্ব রয়েছে।বিটিভির বার্তা বিভাগের শীর্ষ ওই কর্মকর্তা লিখিত বার্তা ছাড়াও মঙ্গলবার (০৮ জুন) দুপুর ২ টা ৫০ মিনিটে এ বক্তব্য তুলে ধরেন ।

গাজীপুর জে’লা প্রেসক্লাব এর সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক, এ,কে,এম রিপন আনসারী মনে করেন, এ দেশে প্র’তারণা করে সহজে পার পাওয়া যায়, এ কারণে সাংবাদিকতার নামেও প্র’তারণা বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক’ নামধারী অ’পরাধীদের চিহ্নিত করে ক’ঠোর শা’স্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলেই এই প্র’তারণা রোধ করা সম্ভব। এ জন্য গণমাধ্যম ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

উত্তরার দৈনিক ইত্তেফাক সাংবাদিক, সংগঠক, কাজী রফিক বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। উত্তরা এবং টংগী এলাকায় ঘরে ঘরে যেভাবে পঙ্গপালের মতো সাংবাদিক তৈরী হচ্ছে এবং এই মহান পেশা যেভাবে কুলশীত হচ্ছে, তাতে করে আগামী ৫ বছর পর মূলধারার সাংবাদিকরা এই পেশা ছাড়তে বা’ধ্য হবে। তিনি আরো বলেন, দ্রুত এই সকল অপ-সাংবাদিকতা বন্ধ করতে মূলধারার সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে।

এ দেশে যখন, খুশী কবির, এলিনা খান’রা যখন মা’নবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, তখন এর বিপরীতে গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় তালিকাভুক্ত অ’পহরনকারী চ’ক্রের হোতা, বার বার গ্রে’ফতার হয়ে জে’ল খাটা আ’সামি শাহিনরাও শক্ত অবস্থান নিয়ে মা’নবাধিকার এবং সাংবাদিকের আইডি কার্ড ব্যবহার করছেন।

এদেশে কামাল লোহানী, আকরাম হোসেন খাঁন, রেহমান সোবহান এর মতো ব্যক্তিত্বও মা’নবাধিকারকর্মী,
অন্যদিকে রাজুর সহযোগি উত্তরা এলাকার ইয়াবাসেবী, পেশাদার যৌ’নকর্মি হিসেবে খ্যাত হাফছা আহমেদ মিতুও হয়েছেন “গাজীপুর জে’লা নারী সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থা”র সাধারন সম্পাদক ! আরো কাধে বহন করছেন…. অসংখ্য গণমাধ্যমের কার্ড এবং অনেক মা’নবাধিকার সংগঠনের ভাইটাল পদ !

আর লেখাপড়া না জানা ছিচকে চোর রাজু আহমেদ সায়মাও হয়েছেন, মিডিয়ার মালিক ও “সাংবাদিক ক্লাব উত্তরা”র সভাপতি । সুত্রঃ অল বিডি নিউজ