‘এটা গেটলক’ বলেই চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয় মরিয়মকে

| আপডেট :  ১৩ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৫৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৫৬ অপরাহ্ণ

রাজধানীর ভাটারার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে গত ৯ নভেম্বর সকালে রাইদা পরিবহনের একটি বাস থেকে ১০ বছরের এক মেয়েকে ফেলে হ’ত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রে’ফতার করেছে রেপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (রেব)। নি’হত শি’শুটির নাম ম’রিয়ম আক্তার। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অ’ভিযান চালিয়ে ঘটনায় জ’ড়িত অ’ভিযু’ক্ত দুজনকে গ্রে’ফতার করা হয়। তারা হলেন- রাইদা পরিবহনের চালক রাজু মিয়া (২৫) ও তার সহযোগী ইম’রান হোসেন (৩৩)।

শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যা’­ব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নি’হত মে’য়েটি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জ’ড়িত ছিল। ঘটনার দিন সে সাহায্য চাইতে বাসটিতে উঠেছিল। হেলপার এসময় তাকে বলে, এটা গেটলক বাস। এই বলে বাসের গেট খুলে চলন্ত বাস থেকে ম’রিয়মকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে গুরুতর আ’হত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই তার মৃ’ত্যু হয়।

পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতা’লে নিলে চিকিৎসক মৃ’ত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শি’শুটির বাবা রনি মিয়া জানতে পারেন ভাটারা এলাকায় একটি মেয়ে শি’শুর ম’রদেহ পাওয়া গেছে। ওইদিন বিকেলে তিনি মে’য়ের ম’রদেহ শনাক্ত করেন। পরে এই ঘটনায় রাতেই অ’জ্ঞাত গাড়িচালককে আ’সামি করে মা’মলা দায়ের করেন তিনি। পরবর্তীতে রেব এই ঘটনার ছায়া ত’দন্ত শুরু করে। এসময় র‌্যা’­ব ঘটনাস্থল ও আশপাশের প্রায় ৫০টির বেশি সিসিটিভি ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে। এরপরই শি’শুটির মৃ’ত্যু র’হস্য উদঘাটন হয়।

র‌্যা’­ব মুখপাত্র বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে- ম’রিয়ম হেঁটে ফুটওভা’রব্রিজ দিয়ে রাস্তা অ’তিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফ্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম ম’রিয়মকে আ’হত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এখানেই অকালে মৃ’ত্যু হয় ম’রিয়মের।

মঈন আরও বলেন, অর্থ সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে উঠেছিল ম’রিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে ওঠা এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় ওই বাসের ড্রাইভা’র ও হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হয়। এরপরই পৃথক অ’ভিযানে অ’ভিযু’ক্তদের গ্রে’ফতার করা হয়। তারা এই ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ম’রিয়ম তার পরিবারের সঙ্গে খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করতো। তার বাবা রনি একজন প্রাইভেট’কারচালক।

ম’রিয়ম ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তবে অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে অর্থ সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করতো। ঘটনার দিন সকালে ম’রিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পথচারী ও বাস যাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল।

র‌্যা’­ব জানায়, বাসচালক রাজু মিয়া ছয়বছর ধরে রাইদা পরিবহনের গাড়ি চালান। পোস্তগো’লা থেকে বাড্ডা-দিয়াবাড়ি পর্যন্ত তিনি রাইদা পরিবহনের বাসচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর তার সহযোগী (হেলপার) ইম’রান হোসেন আগে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ছয়মাস আগে তিনি রাইদা পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এদিকে, শি’শুটিকে ধ’র্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না এমন প্রশ্নে কমান্ডার আল মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধ’র্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। আম’রা প্রায় অর্ধশতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বাসটিকে শনাক্ত করেছি।

বাসটির চালকের সঠিক কাগজপত্র ছিল কি না জানতে চাইলে রেবের এই কর্মক’র্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে তাদের সব কাগজপত্র সঠিক ছিল। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আম’রা ত’দন্ত করবো। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, বাসটি গেট’কল সার্ভিস ছিল। তাই মে’য়েটিকে হেলপার প্রেসার করেছিল যেন দ্রুত নেমে যায়। নি’হত ম’রিয়ম বাস থেকে নামা’র সময় বাসের গতি ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে সে বাস থেকে রাস্তায় পড়ে মা’রা যায়।