সব
স্ত্রী আসমা খাতুন ‘প’রকীয়া প্রেমে’ জড়ানোয় তার ও’পর ক্ষু’ব্ধ ছিলেন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়। সেই ক্ষো’ভ থেকেই আসমা (৩০), তার প’রকীয়া প্রেমিক শাকিল খান (২৫) ও সৎ ছেলে রবিনকে (৭) গু’লি করে হ’’ত্যা করেন সৌমেন। রিভলভারসহ আ’টক হওয়ার পর প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদে তিনি এমন দাবিই করেছেন।
রোববার (১৩ জুন) বিকেলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জি’জ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।
এর আগে, বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড় এলাকায় এএসআই সৌমেন রায় তার সার্ভিসের জন্য পাওয়া রিভলভার দিয়ে গু’লি করে হ’’ত্যা করেন ওই তিনজনকে। হ’’ত্যাকাণ্ডের পর জনতা ঘা’তক এএসআই সৌমেন রায়কে রিভলভারসহ আ’টক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। বিকেলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ম’য়নাত’দন্ত শেষে নি’হত তিনজনের ম’রদেহ নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদে সৌমেন জানিয়েছেন, আসমা খাতুনের প’রকীয়া প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই তিনি এই হ’’ত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ব্যাপারে এখনো ত’দন্ত চলছে। তাকে আরও জি’জ্ঞাসাবাদ চলছে। ত’দন্তের মাধ্যমে এ হ’’ত্যাকাণ্ডের বি’ষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
বিকেলে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা সৌমেনের ব্যক্তিগত স’মস্যা। পারিবারিক ক’লহের জেরে সৌমেন এই হ’’ত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কারও ব্যক্তিগত অ’পকর্মের দায় পুলিশ বিভাগ বহন করবে না। এ ঘটনায় কোনো ছাড় দেয়া হবে না। দো’ষীকে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তি পেতে হবে।’
নি’হত আসমা কুমারখালী উপজে’লার বাগুলাট ইউনিয়নের নাতুড়িয়া গ্রামের আমির আলী মেয়ে। তার বি’ষয়ে বাগুলাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বক্কর জানান, ১২-১৩ বছর আগে কুমারখালী উপজে’লার ভড়ুয়াপাড়া গ্রামের ওয়াজ আলীর ছেলে সুজনের সঙ্গে আসমা খাতুনের প্রথম বিয়ে হয়। সেখানে তার একটি কন্যাস’ন্তানও রয়েছে। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতেই কুমারখালী উপজে’লার চাঁদপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের সরোয়ারের ছেলে রুবেলের সঙ্গে আসমার প’রকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প’রকীয়ার এই সম্পর্কের জেরে প্রথম স্বামী সুজনকে ডি’ভোর্স দিয়ে রুবেলকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসমা খাতুন। দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে এক ছেলেস’ন্তানের জন্ম দেন আসমা। যার নাম রবিন।
তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের সঙ্গেও বেশিদিন সংসার করা হয়নি আসমা খাতুনের। বনিবনা না হওয়ায় কয়েক বছর সংসার করার পরই রুবেলকে ডি’ভোর্স দেন তিনি।
অন্যদিকে সৌমেন রায়ের বাড়ি মাগুরার শালিকা উপজে’লার কসবা গ্রামে। তিনি এএসআই হিসেবে ২০১৬ সালের ১৩ মে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগদান করেন। এরপর কোনো একটি মা’মলার ত’দন্তে আসমার বাড়িতে যান তিনি। সেখান থেকেই তাদের পরিচয় এবং এক পর্যায়ে তাদের প’রকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সৌমেন রায়ের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারটি স্থানীয়দের কাছে স্পষ্ট না হলেও তাদের চলাফেরা ও যোগাযোগের বি’ষয়টি অনেকেই জানতেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আসমার মা হাসিনা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, রোববার সকালে সৌমেন আসমা এবং নাতি রবিনকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তারা এই হ’’ত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারেন।
নি’হত আসমার ছোট ভাই হাসান জানান, তার বোনের এর আগে দুটি বিয়ে হয়েছিল। ভাগনে রবিন বোনের দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের স’ন্তান। পাঁচ বছর আগে এএসআই সৌমেনের সঙ্গে তার বোন আসমার তৃতীয় বিয়ে হয়। আসমা খাতুন এএসআই সৌমেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। সৌমেনের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। তারা খুলনায় থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সৌমেনের সঙ্গে বিয়ের পর শাকিলের সঙ্গে আসমা প’রকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। নি’হত শাকিল চা’পড়া ইউনিয়নের সাওতা কারিগর পাড়ার মজিবারের ছেলে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই শাকিলের সঙ্গে আসমার প’রকীয়া চলছিল। সম্প্রতি সৌমেন কুষ্টিয়ার হালসা পুলিশ ক্যাম্প থেকে খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি হলে শাকিল আর আসমা আরও বে’পরোয়া হয়ে ওঠেন। শাকিলের সঙ্গে আসমার প’রকীয়া প্রেমের সম্পর্কের বি’ষয়টি জানতে পেরে সৌমেন চ’রম ক্ষু’ব্ধ হন। এ নিয়ে তিনি আসমাকে বেশ কয়েকবার শা’রীরিক নি’র্যাতনও করেন।
শাকিলের মা জানান, মাস দুয়েক আগে এক পুলিশ কর্মকর্তা অ’স্ত্র মাজায় করে তাদের বাড়িতে এসে বলেন, শাকিল তার বউয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। যদি কথা বলা বন্ধ না করেন, তাহলে খবর আছে বলে শাসিয়ে যান।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় থানায় এখনো মা’মলা হয়নি। তবে মা’মলার প্রস্তুতি চলছে।’