নেপথ্যের রাজনীতিই কাল হলো হেফাজতের

| আপডেট :  ২০ এপ্রিল ২০২১, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ এপ্রিল ২০২১, ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলাম। শুরুতে দেশের রাজনীতিতে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলে আলোচনায় ছিলো এবং দেশের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ একটি অংশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও ছিলো হেফাজতের। আর এর পেছনে অনেক বড় ভূমিকা ছিলো হেফাজতের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফীর। তিনি আলেম হিসেবে যেমন সবার কাছে পছন্দের ছিলেন তেমনি একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে হেফাজতকে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের তকমা ধরে রেখেছিলেন।

কিন্তু স’মস্যা তখনই বাধে যখন আল্লামা শফীর মৃ’ত্যু হয়। আল্লামা শফীর মৃ’ত্যুর পর হেফাজতে আমির হন জুনায়েদ বাবুনগরী। বাবুনগরী ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে হেফাজত তার অরাজনৈতিক তকমা হারাতে থাকে। তখন থেকেই একটি অংশের নেতাদের অ’ভিযোগ ছিলো বাবুনগরীর বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এবং নেপথ্যে থেকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন বাবুনগরী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজত সারাদেশে তা’ণ্ডব চা’লায়। তখন হেফাজতের কর্মকাণ্ড এমন রূপ নেয় যে তারা অনেক বড় রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে এবং তাদের কর্মকাণ্ডগুলো বিএনপি-জামায়াতের আদলে করা হয়। হেফাজতের নেপথ্যের বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের ধারনা ছিলো হেফাজত তা’ণ্ডব চালালে স’রকার ক’ঠোর হস্তে দ’মন করবে এবং দেশের অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হবে তখন তারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে এবং স’রকারকে বেকায়দায় ফেলবে। সেই অনুযায়ি হেফাজত তা’ণ্ডব চা’লায় এবং মানুষের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের সেই জ্বা’লাও পোড়াও তা’ণ্ডবে আ’তঙ্ক সৃষ্টি হয়।

পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় ছিলো না এই পরিস্থিতি বিএনপি-জামায়াতের নয় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে হেফাজতে ইসলাম নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এরপর থেকে হেফাজতে ইমলাম তার অরাজনৈতিক তকমা হা’রিয়ে ফে’লে। কিন্তু স’রকার তখন নীরব অবস্থান গ্রহণ করে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও স’ন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিডিও সংগ্রহ করে একে একে অ’পরাধীদের গ্রে’ফতার করতে শুরু করেছে এখন। আর এর সর্বশেষ গ্রে’ফতার করে হেফাজতের আলোচিত নেতা দলটির যুগ্ম মহাস’চিব মামুনুল হককে। এরপর থেকে একে একে নেতাদের গ্রে’ফতার এবং দলের আমির বাবুনগরীও গ্রে’ফতার আ’তঙ্কে রয়েছেন। আর এসব কারণে দলের পরিস্থিতি নিয়ে হিসেব নিকেশে বসেছে দলটির শীর্ষ নেতারা।

হেফাজতের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের মধ্যে এখন একটি বি’ষয় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হলে অনে্যর রজানৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হেফাজতের এই অবস্থা। আর এর জন্য দলের একটি বড় অংশই জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হককে দায়ি করছেন। তারা মনে করছেন বিএনপি-জামায়াতের আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রলোভনে পড়ে হেফাজত বিপথগামী হয়েছে এবং তাদের সংগঠনের মূল আদর্শ থেকে সরে গিয়ে নেপথ্যের রজানীতির হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো আর এ জন্য সংগঠন হিসেবে হেফাজতকে মাশুল দিতে হচ্ছে। এই মাসুলের পরিমাণে কতোটা ভ’য়াবহ হবে সেটার কারণে সংগঠনটি কি শেষ পর্যন্ত ভে’ঙে যাবে তা নিয়েও দলের মধ্যে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।

হেফাজতের একটি বড় অংশ এখন চাইছে দল থেকে বাবুনগরী এবং মামুনুল হককে বাদ দিয়ে তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের নেতাদের সামনে এনে আপাতত হেফাজতকে ‘হেফাজত’ করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই নেপথ্যের বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশের কারণে হয়তো সেটা নাও হতে পারে। তারা নেপথ্যে থেকে হেফাজতে তাদের ভাবাপন্নদের ক্ষমতায় বসানোর পায়তার করবে ফলে হেফাজতকে আগের জায়গায় ফিরে নেয়া কঠিন হবে। নেপথ্যে থেকে তারা হেফাজতকে আদতে তাদের মতো করে চালাতে চাইছে আর এই নেপথ্যের রাজনীতি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে হেফাজতের জন্য।

বিশ্লেষকর বলছেন, কোনো সংগঠনের মূল নেতৃত্ব যদি আর্থিক বা অন্য কোনো কারণে কোনো বিশেষ রাজনীতির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয় তাহলে ওই সংগঠনের আর কিছু করার থাকে না। যেমনটি হয়েছে হেফাজতের বেলায়। হেফাজতের আমির যখন কোনো বিশেষ সুবিধার কারণে অন্য রাজনীতির প্রতি বেশি সাহনুভূতিশীল তখন সংগঠনের অন্য নেতাদের পক্ষ আর কিছু করার থাকে না।

সুতরাং হেফাজতের নেপথ্যে থেকে বিএনপি-জামায়াত যে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলো সেটা অনেকটাই পরিষ্কিার হয়েছে হেফাজতের স’রকার বি’রোধী কার্যক্রম এবং সারাদেশে তা’ণ্ডব চা’লানোর মধ্যে দিয়ে। আর এ কারণে স’রকার ক’ঠোর অবস্থানে যাওয়া এখন হেফাজত নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। তবে এই অবস্থা থেকে জুনায়েদ বাবুনগরী-মামুনুল হকরা কীভাবে হেফাজতকে ‌‌‌‌`হেফাজত` করবে সেটাই এখন দেখার বি’ষয়। সূত্রঃ বাগ্নলা ইনসাইডার