হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি ব্যাংকার; আটদিন পরও অধরা প্রভাবশালী আসামিরা, স্ত্রীর ক্ষোভ

| আপডেট :  ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে হুইপপুত্রের গো’পন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী আব্দুল মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহ’’ত্যার ঘটনার আটদিন পার হলেও অধরা আ’সামিরা। নিষ্ক্রিয় প্রশাসন। আত্মহ’’ত্যায় প্ররোচণাকারী জাবেদ ইকবাল, পারভেজ ইকবাল, হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীসহ প্রভাবশালীরা গ্রে’প্তার না হওয়ায় তীব্র ক্ষো’ভ প্রকাশ করেছেন মোর্শেদের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্ররোচণকারীদের নাম জানানো এবং মা’মলা করার পরও পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ সদ্য স্বামীহারা ইশরাত। গণমাধ্যমের কাছে বিচার চেয়ে আর্জি জানাতে গিয়ে বারবার চোখ ভিজেছে তার।

মধ্যম হালিশর মাইজপাড়ার আলী সওদারগরের বাড়ির ইসহাক মিয়ার ছেলে জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবাল, পাঁচলাইশ এমএম প্যালেসের সৈয়দ মো. আবু মহসিনের ছেলে নাইম উদ্দিন সাকিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেলের নামে মা’মলা করলেও মোরশেদের স্ত্রীর অ’ভিযোগ, এ ঘটনায় জ’ড়িত জাতীয় সং’সদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র শারুন চৌধুরী।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) ঘটনার আটদিন পর তিনি প্রভাবশালীদের ক্ষমতার জো’র ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙুল তুলে বলেন, সেদিন নিচে যে গাড়ি বসা ছিল সে গাড়িটার নেমপ্লেট ছিল না। ওই গাড়ির ভিতরে শারুন বসা ছিলেন। সেদিন ভ’য় দেখানো, টাকা দেওয়ার ডেট, ফোনকল- সব মিলিয়ে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

‘ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে আমি মা’মলায় তাদের নামটাই দিয়েছি। এই শারুন, বাচ্চু এদেরকে তো ওরা কন্ট্রাক্টে নিয়েছে।’

মোর্শেদের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহানের অ’ভিযোগ, হুইপপুত্র শারুন, আরশাদ আর জাবেদ গং মিলে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের কানে দেওয়া হচ্ছে ওরা অনেক উপর মহল পর্যন্ত যাচ্ছে। তোলপাড় করে ফেলছে যেন ওরা গ্রে’প্তার না হয়। আমি এখন আল্লাহর দরবারে বিচার ছেড়ে দিলাম। আর কি করবো বলেন। আমি বারবার জাবেদ, আরশাদ এদের নাম মোর্শেদের মুখে শুনেছি।

এ বি’ষয়ে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্ম’দ তানভীর গণমাধ্যমকে বলেন,পরস্পরবি’রোধী অনেক বক্তব্য এসসেছে। আমরা সতর্ককতার সঙ্গে এগোতে চাচ্ছি যেন কোনো ভু’ল না হয়। ত’দন্ত অব্যাহত আছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সবাইকে জি’জ্ঞাসাবাদ করবো। যখন ক্রস চেক করবো আশাকরি সত্যটা বেরিয়ে আসবে। আর মা’মলা হলেই যে কেউ গ্রে’প্তার হবে এমন কোনো কথা নেই।

বি’ষয়টি নিয়ে কথা হয় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। কেউ যদি ত’দন্তের মধ্য দিয়ে তার বি’রুদ্ধে অ’পরাধ প্রমাণিত হয় অবশ্যই তাকে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত বলে মনে করি। সে স’রকারদলীয় হোক বা বি’রোধীদলীয় হোক।

এর আগে ১১ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহনের নেপথ্যে দায়ীদের অবিলম্বে গ্রে’প্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ইশরাত।

সেখানে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মে মাসে স্বামীকে পাঁচলাইশের এমএম টাওয়ারে নিয়ে যায় সৈয়দ সাকিন সাঈম উদ্দীন। সেখানে অ’স্ত্রের মুখে জি’ম্মি করে শা’রীরিক নি’র্যাতন, আমাকে বেঁ’ধে ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করে জো’রপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছিল। আমার ও মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। সেটা এখনো পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। ২০১৯ সালে বাসায় হা’মলা হওয়ার মা’মলা করা হয়। তাদের কাছে জমা থাকা চেক নিয়ে আ’দালতে মা’মলা পর্যন্ত হয়েছে। মা’মলা করে ক্ষান্ত হননি। প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে বিভিন্নভাবে হ’য়রানি, মা’নসিক নি’র্যাতন ছাড়াও আমাকে নি’র্যাতন করেন। আমাদের বাসায় আ’ক্রমণ, মেয়েকে অ’পহরণ, আমার স্বামীকে খু’ন করবে বলে অনেকবার প্রকাশ্যে হু’মকি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পাওনার অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার পরও জামানত হিসেবে দেওয়া চেকগুলো ফেরত না দিয়ে আপস ও আলোচনার কথা বলে গত ২০১৯ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীন অ’স্ত্রের মুখে ৮৪টি চেকে জো’রপূর্বক সই নিয়ে নেন। ছয়টি অলিখিত ও স্বাক্ষরিত নন জু’ডিশিয়াল স্ট্যাম্প রয়েছে তাদের কাছে।

ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, অ’ত্যাচার-নি’র্যাতন থেকে চিরমুক্তি পেতে স্বামী আত্মহ’’ত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। হু’মকিদাতাদের অর্থবিত্ত এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে আমরা চ’রম অ’সহায়। আমি ও মেয়ের জীবন ও মানইজ্জত নিয়ে চ’রম শঙ্কিত রয়েছি। প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ত’দন্তের মাধ্যমে স্বামীর আত্মহননের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও তাদের সহযোগীদের গ্রে’প্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তির দাবি জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর আত্মহ’’ত্যার প্ররোচণাকারীদের বিচার দাবি করছি।

উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল ভোরে নগরের পাচঁলাইশ থানার মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নাহার ভবনের ৬ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোর্শেদ চৌধুরীর ঝু’লন্ত ম’রদেহ উ’দ্ধার করে পুলিশ। নগরের পূর্ব মাদারবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মৌমিন চৌধুরীর ছেলে আব্দুল মোর্শেদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহ’’ত্যার ঘটনায় চারজনকে আ’সামি করে স্ত্রী বা’দী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মা’মলা করেন।