জমি বেচে মসজিদ গড়েছেন নায়ক আলমগীর

| আপডেট :  ৩ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া। যুবক অবস্থায় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় স্থায়ী হয়েছিলেন তিনি। পরে বিয়ে করে পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস শুরু করেন দুদু মিয়া।

গোপালপুর গ্রামের সন্তান জাইটের গোষ্ঠীর ছে’লে দুদু মিয়ার ঘরে ১৯৫০ সালে ৩ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর। দুদু মিয়া ঠিকাদারির পাশাপাশি করতেন চলচ্চিত্রের প্রযোজনা। বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ এর প্রযোজকও ছিলেন দুদু মিয়া। সেই দুদু মিয়ার সন্তান চলচ্চিত্র থেকে পিছিয়ে থাকবেন তা কি হয়?

দুদু মিয়ার প্রথম ছে’লে মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর তার প্রথম সিনেমায় অ’ভিনয় করেন ‘আমা’র জন্মভূমি’তে। এরপর একে একে অ’ভিনয় করেন দস্যুরাণী, চাষির মে’য়ে, লাভ ইন শিমলা, মায়ের দোয়া, ম’রণের পরসহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে। অ’ভিনয়ের মাধ্যমে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে গোপালপুরের সন্তান নায়ক আলমগীরকে কোনোদিন দেখেননি তার এলাকার নতুন প্রজন্মের কেউ। তারা শুধু টিভিতেই দেখেছেন নায়ক আলমগীরকে। মুরুব্বীদের মুখে শুনেছেন আলমগীরের পরিবারের কথা।

শুক্রবার (২ এপ্রিল) সরেজমিনে নবীনগরের গোপালপুরে আলমগীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে ঢুকতে পারে না কোনো গাড়ি। স্থানীয়দের বাড়িঘরের ভেতর দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হয় তার বাড়িতে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায় নেই কোনো বসতঘর। একেবারে খালি জায়গার পাশে রয়েছে একটি একতলা ভবন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একতলা ভবনটি নায়ক আলমগীরের চাচাতো ভাইদের।

আলমগীরের জায়গার পাশের বাড়ির রাবিয়া খাতুন নামের এক বৃদ্ধা বলেন, নায়ক আলমগীররা তিন ভাই ও দুই বোন। বড় এক বোনের পরই আলমগীর। ভাইদের মধ্যে আলমগীরই বেঁচে আছেন, বাকি দুই ভাই মা’রা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, নায়ক আলমগীরের চাচা-চাচাতো ভাইয়েরা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযু’দ্ধের সময় রাজাকারেরা তাদের ৮ চালা বিশাল ঘরে আ’গুন জ্বালিয়ে দেন। সেই ঘরটি আর পুনর্নির্মাণ করেননি কেউ৷ পড়ে রয়েছে একেবারে খালি জায়গা।

ওই ঘটনার পর আলমগীরের পরিবারের সদস্যরা রাজধানীতে চলে যান। দীর্ঘদিন আগে তিনি এসেছিলেন গ্রামের বাড়ি দেখতে। তখন তিনি পৈতৃক ৯০ শতাশকোনি জমি বিক্রয় করে স্থানীয় বাজারে ম’সজিদ নির্মাণ করে দিয়ে গেছেন।

স’ম্পর্কে আলমগীরের ভাতিজা খায়েশ মিয়া বলেন, আলমগীর কাকা প্রতিবছর ঈদে এলাকার বাড়ি বাড়ি অর্থ সহায়তা পাঠান। এখানেতো তাদের খালি জায়গা ছাড়া কিছুই নেই। তাদের পরিবারটি ছিল খাঁটি মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। মুক্তিযু’দ্ধের সময় রাজাকাররা তাদের বাড়ি আ’গুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর তারা ঢাকায় স্থায়ী হয়ে যান। সর্বশেষ তিনি যখন এসেছিলেন, স্থানীয় বাজারের একটি ম’সজিদ তৈরি করে গেছেন।

গোপালপুর বাজারের ম’সজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দুজ্জামান বলেন, ২০০২ সালে নায়ক আলমগীর নিজস্ব অর্থায়ণে বাজারের ম’সজিদটি দুইতলা করে গেছেন। তিনি এলাকায় না আসলেও কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পাঠিয়েছেন। এলাকাবাসীর খোঁজ খবর নেন। গ্রামের কেউ ফোন দিলে তিনি কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, উনার বাবা প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। ম’সজিদ মাদরাসার প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল তার। মুক্তিযু’দ্ধের আগেই তাদের বাড়িতে একটি মক্তব ছিল। আম’রা সেই মক্তবে পড়েছি। রাজাকাররা তাদের ৮ চালা টিনের ঘরটিতে আ’গুন জ্বালিয়ে দেয়। সেই জায়গায় কিছু না করায় একেবারে খালি পড়ে রয়েছে। আলমগীর সাহেব তার গ্রামের খালি জায়গায় বাড়ির কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে নায়ক আলমগীর নবীনগর আসন থেকে এমপি নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। দলীয় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে রাজনীতির প্রতি তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।