দেশে তৈরি হচ্ছে পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে সুতা

| আপডেট :  ২ এপ্রিল ২০২১, ০১:২৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪৬ অপরাহ্ণ

উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বগুড়ায় প্রথমবারের মতো পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে ফাইবার (আঁশ) তৈরি করে হস্তশিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। কলাগাছের বাকল থেকে আঁশ পাওয়ার পর অবশিষ্ট বর্জ্য থেকে তৈরি হবে ভার্মি কমপোস্ট। এতে পরিত্যক্ত কলাগাছ যেমন কাজে লাগানো হচ্ছে, তেমনি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব আঁশ থেকে উৎপাদিত সুতা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পপণ্য যাবে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে।

জানা যায়, একটি কলাগাছ থেকে ৪০০ গ্রাম ফাইবার তৈরি হয়, ৯০ টাকা খরচে উৎপাদিত প্রতি কেজি ফাইবার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। পাশাপাশি স্বল্প খরচে একটি রিংয়ের মধ্যে ২১ দিনে বর্জ্য থেকে গোবর ও কেঁচোর সাহায্যে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কমপোস্ট। ৬০ কেজি বর্জ্য, গোবর থেকে হাফ কেজি কেঁচোর মাধ্যমে ৪০ কেজি সার পাওয়া যাবে। ব্যবহৃত কেঁচো থেকে আরও বেশি পরিমাণ কেঁচোও পাওয়া যাবে।

কলা চাষের জন্য বিখ্যাত জেলা বগুড়া। এ জেলার শিবগঞ্জে ৫০০ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার চাষি কলা চাষ করেন। তারা বাগান থেকে কলা কাটার পর গাছগুলো যেখানে-সেখানে ফেলে দিতেন। এতে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কলাগাছ পচে পরিবেশ হতো দূষণীয়। তবে পরিত্যক্ত এসব কলাগাছ সংগ্রহ করে গাছের বাকল থেকে আঁশ সংগ্রহ করছেন বগুড়ার শিবগঞ্জের অর্জুনপুর গ্রামের উদ্যোক্তা বকুল হোসেন।

পিকেএসএফের অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএসের এসইপি প্রকল্পের সহযোগিতায় বকুল হোসেন গড়ে তুলেছেন মেসার্স বকুল ফাইবার অ্যান্ড ভার্মি কম্পোস্ট প্ল্যান্টস। তার পরিবারের সদস্যসহ বেকার নারী-পুরুষরা এখানে কাজ করছেন।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে উদ্যোক্তা বকুল হোসেন বলেন, আগে কলাগাছ মানুষ ফেলে দিত। এতে গাছ পচে পরিবেশদূষণ হতো। কলাগাছ থেকে সুতা বের হবে, আর এর বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি হবে। এতে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান হবে।

প্রকল্প সহযোগী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে ফাইবার তৈরির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে সুতা দিয়ে পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। শিবগঞ্জে দুটি মেশিনে কলাগাছ থেকে ফাইবার উৎপাদন করা হচ্ছে। একটি মেশিনের দাম ৪৫ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। প্রতি মেশিনের জন্য কলাগাছ প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। মেশিন থেকে পাওয়া ফাইবার পানিতে ধোয়ার পর তা রোদে শুকানো হচ্ছে। এরপর এসব ফাইবার প্রক্রিয়াজাত করে সুতা উৎপাদন করে তা দিয়ে বিভিন্ন শৌখিন হস্তশিল্পপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান সুতা তৈরি করে পণ্য উৎপাদন করছে বলে জানা গেছে।

শিবগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা যেমন উপকৃত হতে পারব, তেমনি এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাকৃতিক বস্তুর চাহিদা দেশে-বিদেশে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এটা ভবিষ্যতে আরও বড় বাজার হবে। আরও বেশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। ব্যাংকগুলোও এগিয়ে আসবে। এতে এই শিল্পের আরও প্রসার ঘটতে থাকবে।

টিএমএসএস উপনির্বাহী পরিচালক-৩ সোহরাব আলী খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলাগাছের ব্যবহার করে সুতা তৈরি করা হয়। এই সুতা ব্যবহার করে জিনিসপত্র তৈরি করা হবে। কালাগাছের বর্জ্য থেকে ভার্মি কমপোস্ট তৈরি হবে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে, যা অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় সারা বছর ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়। এর মধ্যে শিবগঞ্জে বেশি কলা চাষ হয়ে থাকে। কলা কাটার পর পরিত্যক্ত গাছ থেকে ফাইবার তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে বেকারদের।