উদ্বোধনের আগেই দৃষ্টি কেড়েছে সিরাজগঞ্জের ৩০ কোটি টাকার মসজিদ

| আপডেট :  ২ এপ্রিল ২০২১, ০৩:১১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২ এপ্রিল ২০২১, ০৩:১১ পূর্বাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে নির্মিত হয়েছে নজরকাড়া সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি মসজিদ। যা উদ্বোধনের আগেই দৃষ্টি কেড়েছে সবার। শুক্রবার (২ এপ্রিল) জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ নামে এ মসজিদটির উদ্বোধন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মমিন মণ্ডলসহ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও দেশ বরেণ্য আলেম-ওলামাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এদিকে, উদ্বোধন হবার আগেই মসজিদটি তার দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী দ্বারা দৃষ্টি কেড়েছে সিরাজগঞ্জবাসীর। অনেকেই ধারণা করছেন নির্মাণশৈলীর দিক থেকে দেশের অন্যতম সেরা মসজিদ হবে এটি।

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বেলকুচি পৌরসভা এলাকার ০৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুকন্দগাঁতী মহল্লায় সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়কের পশ্চিম পাশে আড়াই বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয়েছে আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মুকুন্দগাঁতী এলাকার বাসিন্দা রহমত গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকারের নির্মিত বাহেলা খাতুন চক্ষু হাসপাতাল এলাকার দুস্থ রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে আসছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

নিজস্ব অর্থায়নে ছেলে আমানুল্লাহ সরকার ও মা বাহেলা খাতুনের নামে ‘আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ’ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। শুরু থেকে প্রতিদিন অর্ধ-শতাধিক শ্রমিক দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করতে সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।

মসজিদটি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে ২০২০ সালের ০২ আগস্ট মারা যান শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার। এরপর তার ছেলে আমান উল্লাহ সরকার মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ করেন।

সরেজমিনে জানা যায়, নয়নাভিরাম দ্বিতল এই মসজিদটির ওপরে বিশাল আকৃতির একটি গম্বুজের পাশাপাশি ছোট-ছোট আরও আটটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির দু’পাশে রয়েছে ১১তলা সমতুল্য (১১০ ফিট) উচ্চতার মিনার। মসজিদের ভেতরে মার্বেল পাথর ও গ্রানাইড পাথর দ্বারা মোড়ানো দৃষ্টিনন্দন সূক্ষ্ম কারুকাজ নজর কেড়ে নেয় দর্শনার্থী এবং মুসল্লিদের। মসজিদের চারপাশে সাদা রঙের পিলার, সুউচ্চ জানালা, সাদাটে রঙের টাইলস। চত্বরে পরিকল্পিতভাবে লাগানো সবুজ ঘাস। সবকিছুই যেন অনন্য সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে দেয়।

রাত এলেই আলোর ঝলকানিতে অপরূপ রূপে শোভিত হয় মসজিদটি। চতুর দিকে রং-বেরঙের আলোকসজ্জা দূরের দর্শনার্থীকেও আকৃষ্ট করে। মসজিদের ভেতেরও রয়েছে একাধিক ঝাঁড়বাতির আলো। বেশ দূর থেকেই মসজিদের গম্বুজ ও নির্মাণাধীন মিনার দু’টি নজর কাড়ে। রাতের বেলা এক অন্যরকম আবহের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে বেশ শান্ত পরিবেশ।

উদ্বোধন হওয়ার আগেই প্রতিদিন সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এ মসজিদটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ এলাকার আশরাফ আলী নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, এত সুন্দর মসজিদ এর আগে দেখিনি। মসজিদটি সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্য হতে পারে।

শফিকুল নামে কামারখন্দের ভাড়াঙ্গা গ্রামের এক তাঁত শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, বেলকুচির এই মসজিদ দেখে মন জুড়িয়ে যায়।

কলেজছাত্র নুরন্নবী ও হাফিজুল বাংলানিউজকে বলেন, আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী যেকোনো দর্শককে মুগ্ধ করবে। বিশেষ করে মসজিদের সম্মুখের উচ্চ দু’টি সিঁড়ি এবং ব্যতিক্রমী প্রবেশপথ ও প্রধান ফটক যে কারও দৃষ্টি কাড়ে।

মসজিদ নির্মাণকালীন সময়ে দেখ-ভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াদুদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এই মসজিদের পাশেই ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের থাকার জন্য কোয়াটার নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে পাঠাগার ও শৌচাগার। সেইসঙ্গে মসজিদের প্রবেশ পথের দুই সিঁড়ির পাশে কাঁচে ঘেরা অটো ফিল্টার করা পানি দিয়ে ওজুর ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ইতালি ও ইন্ডিয়া থেকে আনা উন্নতমানের মার্বেল পাথরসহ কাঠের কারুকাজে মসজিদের বিভিন্ন স্থানকে আকর্ষণীয় করতে নান্দনিক নকশার কাজ করা হয়েছে। মসজিদটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল বাংলানিউজকে বলেন, আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদটি প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এর নির্মাণশৈলী দেখে হাজার হাজার মানুষ এখানে ভিড় করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে মসজিদটির উদ্বোধন করা হবে।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দেখাতেই যে কারও দৃষ্টি কারে মসজিদটি। এটা শুধু উপাসনালয় নয়। দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে এই মসজিদের নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয়। ব্যস্ত সড়কে যাতায়াতকারী যে কেউ প্রথম দেখাতেই থমকে দাঁড়ান। জেলা পৌরসভা সদরে হওয়ায় ইতোমধ্যে মসজিদ কমপ্লেক্স ঘিরে পর্যটকদের আনা-গোনা বেড়েছে।

সিরাজগঞ্জ ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক আহামেদ বাংলানিউজকে বলেন, আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন। দূর থেকে দেখেই যে কেউ মুগ্ধ হবেন। আমাদের মডেল মসজিদগুলোও দৃষ্টিনন্দন হিসাবে নির্মাণ করা হচ্ছে।