কু’প্র’স্তাবে সাড়া না দেয়ায় নারী পুলিশের স্বামীকে ‘শিবিরকর্মী’ সাজালেন দুই ওসি

| আপডেট :  ২৫ মার্চ ২০২১, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৫ মার্চ ২০২১, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

দুই ওসির কু’প্রস্তাবে সা’ড়া না দেয়ায় এক না’রী পু’লিশ পরিদর্শকের স্বামীকে ‘শিবিরকর্মী’ সাজিয়ে ফাঁ’সানোর অ’ভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পূর্বের আ’ক্রোশ মেটাতে এক এসআই দ্বারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বা’মীকে শা’রীরিক নি”র্যাতনের অ’ভিযোগ করেছেন ওই না’রী পুলিশ পরিদর্শক।

বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) ক’মিশনারের কাছে লিখিতভাবে দুই ওসি ও এক এসআইয়ের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগটি করেছেন ওই না’রী প’রিদর্শক। অ’ভিযোগ ওঠা দুই ওসি হলেন- আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এবং দামকুড়া থানায় কর্মরত ওসি মাহবুব আলম।

জানা গেছে, দামকুড়া থানার ও’সি মাহবুব আলম ওই না’রী পরিদর্শকের সাবেক স্বামী। ২০১৮ সালে ওসি মাহবুবের সাথে তার বি’চ্ছেদ ঘটে। এরপর ওই না’রী পুলিশ কর্মকর্তা আরেকটি বিয়ে করেন। ওসি মাহবুবও পরে পুলিশে কর্মরত আরেক না’রীকে বিয়ে করেন।

অ’ভিযোগকারী না’রী পুলিশ পরিদর্শক বর্তমানে রাজশাহীর চারঘাটে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্তিতে কর্মরত আছেন। তার মূল কর্মস্থল ঢাকায় পুলিশের অ’পরা’ধ ত’দন্ত বিভাগ (সি’আইডি)। সারদা পুলিশ একাডেমিতে দায়িত্ব শেষে আবার ঢাকা সি’আইডিতে ফিরে যাবেন।

অ’ভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০১৩ সালে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলমের সাথে আমার বিয়ে হয়। শা’রী’রিক এবং মা’ন’সিক নি”র্যা’তনের স্বী’কার হয়ে আমি নি’রুপায় হয়ে ২০১৮ সালে মাহবুব আলমের সাথে বিবাহ বি’চ্ছেদ ঘটাই। এরপর থেকে মাহবুব আলম আমাকে তার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য বিভিন্নভাবে বি’র’ক্ত করে। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ললিতাহার এলাকার আব্দুল ওদুদের ছেলে মাহবুব হুসাইনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয় এবং আমি সুখে শা’ন্তিতে বসবাস করছি।’

অ’ভিযোগে উল্লেখ বলা হয়, ‘রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ রাজশাহীতে যোগদান করার পর আমার সাথে পরিচয় হলে আমি তাকে কথা প্রসঙ্গে আমার বি’ষয়টা জানাই। এরপর থেকে নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আমাকে বিভিন্ন সময় বি’র’ক্ত করতে থাকেন। আমি বি’ষয়টি না বোঝার ভান করে তাকে এ’ড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলম বোয়ালিয়া থানার ওসি (ত’দন্ত) হিসেবে ক’র্মরত ছিলেন। সেই সময় ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ মাহবুব আলমের বি’ষয়ে কথা বলার জন্য আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করতেন এবং বলতেন ‘একই শহরে অন্য ছে’লেকে বিয়ে করে তুমি কি সংসার করতে পারবা? তুমি তো বি’প’দে পড়ে যাবা।’

এছাড়া পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলমও আমার বর্তমান স্বামী মাহবুব হুসাইনকে মতিহার থানায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন হু’ম’কি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘না’রী পুলিশ কর্মকর্তাকে বিয়ে করে তুমি ভালো থাকতে পারবে না। ওর সাথে মিশে তুমি আমার সাথে শ’ত্রুতা তৈরি করো না।’

অ’ভিযোগে ওই না’রী আরও লিখেছেন, ‘গত ১৬ মার্চ রাত দেড়টার সময় আমার স্বামী মাহবুব হুসাইন আমাকে ফোন করে বলেন বাসায় পুলিশ এসেছে। আমি আমার স্বামীর ফোন থেকে বোয়ালিয়া থানার ওসি (ত’দন্ত) লতিফের সাথে কথা বলি। তারা তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ির বাসা থেকে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর আনুমানিক রাত ২টা ২০ মিনিটে পুনরায় এসে আমার স্বামীকে নিয়ে যায়।

আমি পুলিশ পরিদর্শক (ত’দন্ত) লতিফকে ফোন করে বলি তুমি কি ওকে (মাহবুব হুসাইন) নিতে গেছো? লতিফ জানায় হ্যাঁ নিতে গিয়েছি।’ এরপর থেকে আমি অসংখ্যবার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এনং ওসি (ত’দন্ত) লতিফকে ফোন করি এটা জানার জন্য যে, তারা আমার স্বামীকে কেন নিয়ে গেছে? কিন্তু আমি পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তারা আমার ফোন রিসিভি করেনি।

এরপর সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে আমি বোয়ালিয়া থানায় আসি। ডিউটি অফিসার এএসআই চাঁদ সুলতানা আমাকে জানায় যে, আমার স্বামীকে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়েছে রাত ২টা ৩০ মিনিটের পর। ওই সময় আমি ডিউটি অফিসারের সাথে এবং থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারি আমার স্বামীর নামে তাদের কাছে কোনো রাজনৈতিক তথ্য নেই।

আমি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে চাইলে ডিউটি অফিসার জানায় ওসি স্যারের নি’ষেধ আছে। সকাল অনুমানিক ৮টা ৩০ মিনিটে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় থানায় এসে হেসে আমাকে বলেন, ‘সেইতো দৌড়াইয়া আমার কাছে আসলা। কিন্তু সময়মতো আসো নাই, তখনতো আমাকে ভালো লাগে নাই।

এরপর তিনি বললেন, ‘তোমার স্বামী তো শিবির করে।’

আমি বললাম, না স্যার ও কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জ’ড়িত না।’

তখন তিনি বললেন, ‘পুলিশ কমিশনার স্যারের কাছে তোমার কথা বলি, তিনি বললে তোমার স্বামীকে ছে’ড়ে দেব।’

আমি বললাম, স্যার আমি কি আপনার সাথে কমিশনার স্যারের কাছে যাব?’

নিবারণ স্যার বললেন, ‘না তোমার যেতে হবে না।’

তখন আমি ডিউটি অফিসারের রুমে অ’সহায়ের মতো বসে থাকলাম। এরপর আনুমানিক দুপুর একটার দিকে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ থানায় ফিরলেন। আমি পেছন পেছন তার অফিস রুমে ঢুকলাম।

তিনি বললেন, ‘তোমার স্বামীর নামে মা’ম’লা হবে।’

তখন আমি বললাম, ‘স্যার আমি কি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে পারব?’ তিনি অনুমতি দিলেন।

আমি আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর মু’খে হা’তে আ’ঘা’তের চি’হ্ন। আমি আমার স্বা’মীকে দেখে তার দুইটা মোবাইলের একটা ওসি স্যারের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে কোর্টে চলে আসি।

ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমার স্বামীসহ গ্রে’ফ’তারকৃত অন্যান্যদের কোর্ট নিয়ে আসে। তখন জানতে পারি আমার স্বা’মীর নামে স’ন্ত্রাস দ’মন আইনের মা’ম’লা দিয়েছে এবং তার নামের পাশে শিবিরকর্মী লিখে দিয়েছে। অথচ আমার স্বামী কোনোভাবেই জা’মাত-শি’বিরে সাথে জ’ড়িত না। মূলত আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথেই জ’ড়িত নয়। কোনো দলীয় কমিটিতে আমার স্বা’মীর নাম কেউ দেখাতে পারবে না।

এরপর আমি জে’লখানায় আমার স্বা’মীর সাথে দেখা করতে গেলে আমার স্বামী আমাকে জানান, বোয়ালিয়া থানার এসআই মতিনসহ ওই টিমে থাকা অন্যান্য সদস্যরা শুধু আমার স্বামীকে শা’রী’রিক নি”র্যাতন করেছে।

এসআই মতিন আমার স্বামীকে বলেছে, ‘মাহবুব স্যারের বউকে বিয়ে করার শখ হয়েছে তোর। মাহাবুব স্যার তোর জী’বন ব’রবাদ করে দেবে। তুই মনে রাখিস।’

ওই নারী পরিদর্শক আরও লিখেছেন, ‘আমার স্বামী রাজনৈতিক দলের সাথে জ’ড়িত নয়। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে সহজ স্বাভাবিক ও শান্তিময় জীবন-যাপন করছিলাম। ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ তার ব্যক্তিগত নোং’রা উদ্দেশ্য আমার উপর প্রয়োগ করতে না পেরে এবং ওসি মাহবুব আলম আমার উপর পূর্ববর্তী আ’ক্রোশ থেকে আমার জী’বনটা ধ্বং”স করে দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীকে মি’থ্যা বানোয়াট মা’ম’লায় চালান দিয়েছে। আমি পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে যেন হে’য় প্র’তিপন্ন হই সেজন্যই এই ধরনের কাজ করেছে।

আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন না’রী সদস্য। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আ’ক্রোশবশত আমার এবং আমার স্বামীর উপর এই শা’রী’রিক ও মা’নসিক নি”র্যাতনে সুষ্ঠু ত’দন্তপূর্বক ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এবং ওসি মাহবুব আলমসহ আমার স্বামীকে যারা থানায় শা’রী’রিকভাবে নি”র্যাতন করেছে তাদের বি’রুদ্ধে আ’ইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিনীত আবেদন করছি।’

বি’ষয়টি নিয়ে ওসি মাহবুব আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ধরনের ঘটনা সঠিক নয় বলে দা’বি করেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। তারপর ছা’ড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। সে আমাকে ফাঁ’সা’তে মি’থ্যা অ’ভিযোগ তু’লেছে।

ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ওই না’রীর সঙ্গে কোনো আ’প’ত্তিকর কথা হয়নি। তার স্বা’মীকে সুনির্দিষ্ট অ’ভিযোগের ভিত্তিতে গ্রে”ফতার করা হয়েছে। কিন্তু স্বামীকে বাঁ’চাতে সে আমার নামে মি”থ্যা অ’ভিযোগ তুলেছে।

এ বি’ষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) ক’মিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, এ ধরনের একটি অ’ভিযোগ আসার কথা শুনেছি। অ’ভিযোগের ভিত্তিতে ত’দন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, শুনেছি না’রী পুলিশ পরিদর্শক আরএমপির দামকুড়া থানার ওসি মাহবুবের স্ত্রী ছিলেন। পরে ছা’ড়াছাড়ি হয়। অ’ভিযোগ এলে অবশ্যই ত’দন্ত হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। সূত্রঃ জাগোনিউজ