বোরকা পরে বাদাম বিক্রি করছেন এইচএসসিতে এ প্লাস পাওয়া লতা! ভর্তি হতে চান মেডিকেলে

| আপডেট :  ১৫ মার্চ ২০২১, ০৫:৫৮ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৫ মার্চ ২০২১, ০৫:৫৮ অপরাহ্ণ

কুড়ি বছরের লতা রায়। মেধাবী এই মেয়েটি এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিতে পেয়েছেন এ প্লাস। নীলফামারী স’রকারি কলেজের ছাত্রী লতা। তার প্র’চণ্ড মা’থা ব্য’থা ও য’ন্ত্রণা। অর্থের অভাবে নিজের চি’কিৎসাও করাতে পারছেন না লতা।

লতার বয়স যখন সাড়ে ৪ বছর তখন তার মা ভানুমতি রায় মা’রা যান। বাবা জগন্দ্র রায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন জয়শ্রী রানী রায়কে। সেই ঘরে রয়েছে হিমন রায় নামের ১৫ বছরের ছেলে। সংসারে অ’ভাব-অ’নটন থাকায় এখন লতা রায়ের বাবা ঢাকায় ইটভাটাতে শ্র’মিকের কাজ করছেন।

নীলফামারী জে’লা সদরের গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ডারারপাড় নিজপাড়া গ্রামের মেয়ে লতা রায়কে বিমাতার সং’সারে অ”ত্যা’চার সহ্য করে থাকতে হচ্ছে। তার স্বপ্ন একজন চি’কিৎসক হবেন। তাই নিজের ভবি’ষ্যৎ গড়তে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার অর্থ জুগিয়েছেন এতদিন।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়ে তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। আগামী এপ্রিল মাসেই মেডিকেলে সুযোগ পাওয়ার লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন লতা রায়। কিন্তু বাবার অভাবী সংসারে অর্থ জোগাতে লতা রায় রাস্তায় নেমেছে বাদাম বিক্রি করতে। লোকচক্ষুর আড়ালে বাদাম বিক্রিতে নেমে তাকে পরিধান করতে হয় বোরকা।

লতা রায় জানান, বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসা জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিশ্বাসী, আশাবা’দী, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ মানুষ ব্যর্থ হয় না এবং হতাশাগ্রস্তও হয় না। হতাশা আসে ব্য’র্থতার গ্লানি থেকে। সাধারণত মানুষ প্রাপ্তিতে তৃপ্ত ও অপ্রাপ্তিতে অতৃপ্ত হয়। তাৎক্ষণিক লাভ-ক্ষ’তিকে মানুষ সফলতা ও ব্য’র্থতার মানদ’ণ্ড মনে করে এবং সেভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তাই আমি নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে বাদাম বিক্রি করতে রাস্তায় নামতে বা’ধ্য হই।

তিনি বলেন, নীলফামারী শহরে এসে বাদাম বিক্রি করতাম; যা লাভ হতো তা খা’রাপ ছিল না।

লতা রায়ের বাদাম বিক্রির বি’ষয়সহ তার পারিবারিক অবস্থা স্থানীয় সাংবাদিকরা জানতে পারেন। বি’ষয়টি অবগত করা হয় নীলফামারী সদর আসনের সং’সদ সদস্য সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে। তিনি ঢাকায় থাকায় বি’ষয়টি সদর উপজে’লা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান ও জে’লা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাত জাহান পল্লবীকে রোববার বিকালে লতার বাড়িতে প্রেরণ করেন। সেখানে আসাদুজ্জামান নূর মোবাইলে লতার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন এবং তার মাথার ব্য’থার চিকিৎসাসহ লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় লতা রায়কে।

দ্রুততার সঙ্গে লতা রায়ের এমন দায়দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রসঙ্গে লতা বলেন, একটি বড় হতাশা থেকে মুক্তি পেলাম। আমাদের সং’সদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর আমার সব দায়দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আপনারা আমার জন্য প্রার্থনা করবেন আমি যেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে একজন চিকিৎসক হতে পারি। চিকিৎসক হতে পারলে এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে পারব।