পদোন্নতি পাননি আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার, মিলনকে তিরস্কার, প্রকাশ্যে এলো কারণ

| আপডেট :  ১৩ মার্চ ২০২১, ০৬:১২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ মার্চ ২০২১, ০৬:১২ পূর্বাহ্ণ

দেশে একটা সময় ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে এই সম্মানিত ব্যক্তি অনিয়মের বিরুদ্ধে সব সময় রুখে দাঁড়ান। এমনকি তিনি অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। তবে দেশের এই আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট কে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু কি কারণে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি তা নিয়ে বর্তমানে বেশ আলোচনা চলছে। এদিকে, অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনকে নিয়েও দেশে একটা সময় বেশ আলোচনা শুরু হয়। এই সম্মানিত ব্যক্তি দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি এবার তিরস্কার হলেন।

তিন মাসে দুর্নীতি দূর করার প্রস্তাব দিয়ে আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনকে তিরস্কার করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ১লা মার্চ অসদাচরণের অভিযোগে তাকে এ শাস্তি প্রদান করা হয়। জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ’রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব কবীরের উদ্ধৃতি দিয়ে গত ২৯শে জুলাই একটি অনলাইন পত্রিকায় ’তিন মাসে দুর্নীতি দূর করতে ১০ কর্মকর্তার উইং চান অতিরিক্ত সচিব’- শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত ও প্রকৃত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র ব্যতীত পত্রিকায় প্রকাশিত এ লেখায় তার মনগড়া, ভিত্তিহীন ও সরকারের জন্য অস্বস্তিকর বক্তব্য প্রকাশিত হওয়া সরকারি কর্মচারী হিসেবে তার আচরণবিধি ল’ঙ্ঘ’নে’র শামিল হওয়ায় এবং তিনি সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদের কর্মকর্তা বিধায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।’ এতে বলা হয়, ’অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রুজু করা বিভাগীয় মামলায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৫ই নভেম্বর তারিখের ১৮৭ নম্বর সড়কে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠানোর মাধ্যমে তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হলে তিনি ১৫ নভেম্বর লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি প্রার্থনা করেন।

বিভাগীয় মামলায় গত ২৭শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যক্তিগত শুনানিতে মামলার অভিযোগ, উভয় পক্ষের বক্তব্য, দাখিল করা কাগজপত্র ও প্রাসঙ্গিক সকল বিষয়ে পর্যালোচনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।’ এতে আরও বলা হয়, ’এ বিভাগীয় মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয়টি বিবেচনায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি ৪(ক) মোতাবেক তাকে ’তিরস্কার’- নামের লঘুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে এ লঘুদণ্ড আরোপের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনায় একই বিধিমালার বিধি ৪(ক) মোতাবেক তাকে তিরস্কার নামের ল’ঘু’দ’ণ্ড প্রদান করা হলো।’

দুর্নীতি দূর করতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গত বছরের ২৯শে জুলাই একটি গণমাধ্যমকে মাহবুব কবীর মিলন বলেছিলেন, ৩ মাসের মধ্যে দেশের সব খাতের দুর্নীতি দূর করতে পারবে তার নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের উইং। এর এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত বছরের ৬ই আগস্ট তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। সেই মামলায় দণ্ড হিসেবে তাকে ’তিরস্কার’ করেছে সরকার। ১লা মার্চ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, মাহবুব কবীর মিলন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ভেজাল ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিলেন। তিনি রেলওয়ের দুর্নীতি বন্ধ এবং ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে বেশকিছু উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। বিশেষ করে ’জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না’ এবং ’টিকিট যার, ভ্রমণ তার’-এ নিয়ম প্রবর্তন করেন তিনি। এ ছাড়াও অনলাইন রিফান্ড বা অনলাইনে টিকিট কাটার পর যাত্রী যদি সেটি পরিবর্তন করেন বা যাত্রা বাতিল করতে চান, তাহলে তিনি টিকিট ফেরত দিয়ে অনলাইনেই অর্থ ফেরত নিতে পারবেন- এমন নিয়মও চালু করতে চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে রেলওয়ের নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধেও নিজে ভূমিকা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আলোচিত এই অতিরিক্ত সচিব।

অপরদিকে প্রশাসনে উপ-সচিব পদে সমপ্রতি সবচেয়ে বড় পদোন্নতির ঘটনা ঘটলেও তালিকায় নেই র‌্যাব’র আলোচিত সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নাম। ২০১৫ সাল থেকে র‌্যাব’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকা সারোয়ার ভেজালবিরোধী অভিযানসহ নানা অভিযানে নেতৃত্ব দেন। সবশেষ এমপি হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান পরিচালনা করেন। এর কিছুদিন পর তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। সূত্র: মানবজমিন

উল্লেখ্য, দেশে করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ার পর রাজধানী ঢাকা শহরের কয়েকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে যখন নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে তখন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সেই সকল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি তিনি দেশে বেশ আলোচিত হন। এছাড়া তিনি প্রায় সময় নানা রকম অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তবে তিনি কেন পদোন্নতি পাননি এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। একই সাথে মিলনকে কেন তিরস্কার করা হয়েছে তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।