কন্যা সন্তান হওয়ায় তিন দিনের ন’বজাতককে নিয়ে বাড়িতে উঠতে দেননি স্বামী

| আপডেট :  ১২ মার্চ ২০২১, ০৫:২১ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১২ মার্চ ২০২১, ০৫:১৬ অপরাহ্ণ

কন্যা স’ন্তান জন্ম দেওয়ায় এক গৃ’হবধূকে স্বামীর বাড়ি ছাড়তে হয়েছে বলে অ’ভিযোগ উঠেছে। স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই না পেয়ে পুলিশের সহায়তায় ন’বজাতক স’ন্তানসহ বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন গৃ’হবধূ রোকসানা বেগম। বৃহস্পতিবার বিকালে তিন দিন বয়সী ন’বজাতক ও তার মা রোকসানার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজে’লার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রতাপ ঘোড়ামা’রা গ্রামে।

তবে স্বামী রাজা মিয়া দাবি করেছেন, তিনি রোকসানা বেগমকে তা’লা’ক দিয়েছেন। তাই তাকে স’ন্তানসহ বাড়িতে উঠতে দেননি। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রসব ব্যা’থা শুরু হলে স্বা’মীর বাড়ি থেকেই ফুফি শাশুড়ির সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রোকসানা বেগম।

রোকসানা বেগম জানান, তার বাবার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজে’লার ধনিয়ারকুড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে। পারিবারিকভাবে গত বছরের ১০ জুন সাদুল্যাপুর উপজে’লার প্রতাপ ঘোড়ামা’রা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এটি তাদের উভ’য়েরই দ্বিতীয় বিয়ে।

তিনি জানান, বিয়েল প্রথম মাসেই তিনি গর্ভধারণ করেন। বি’ষয়টি জানতে পেরে তখন থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে স’ন্দেহ করে মা’নসিক নি’র্যাতন শুরু করেন। এরপর থেকে এভাবেই তিনি শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন।

রাজা মিয়া দাবি করেন, বিয়ের কয়েকদিন পরই তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী গর্ভধারণ করেছেন। তখন তার চলাফেরা কিছুটা বে’পরোয়া ভাব দেখেন। এজন্য তিনি বিয়ের ২২ দিন পরই ২০২০ সালের ২ জুলাই রোকসানা বেগমকে তা’লা’ক দিয়েছেন। চাকরির সুবাধে তিনি যেহেতু ঢাকায় থাকতেন, তাই তা’লা’ক দেওয়ার পরও রোকসানা বেগমকে নিজের বাড়িতেই থাকতে দিয়েছেন।

রোকসানা বেগম জানান, তার স্বামী রাজা মিয়া সবসময়ে পুত্র স’ন্তান আশা করতেন। কিন্তু তার কন্যা স’ন্তান হবে জানতে পেরে তখন থেকেই খা’রাপ আচরণ শুরু করেন। স্বামীর বাড়িতেই থাকা অবস্থায় গত ৮ মার্চ প্রসব ব্যাথা শুরু হলে ফুফি শাশুড়ি কোহিনুর বেগম তাকে রংপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখানে তিনি অ’স্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যা স’ন্তান প্রসব করেণ। হাসপাতালে তিন দিন থাকার পর ১১ মার্চ বিকালে স’ন্তানসহ স্বামীর বাড়ীতে আসলে তাকে উঠতে দেননি শ্বশুর মহব্বর আলী। এসময় তিনি জানান, ছেলে রাজা মিয়া তাকে তা’লা’ক দিয়েছেন। তাই এই বাড়িতে আশ্রয় তার হবে না।এরপর শ্বশুর বাড়িতে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে যান।

এই বি’ষয়ে জানতে মহব্বর আলীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

শাশুড়ি আসমা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই রাজা মিয়ার সঙ্গে স্ত্রী রোকাসানা বেগমের ঝামেলা শুরু হয়। তখন ছেলে রাজা মিয়া তাকে তা’লা’ক দিয়েছেন বলে শুনেছেন।

সাদুল্যাপুর থানার ওসি মাসুদ রানা জানান, ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। সেখানে গিয়ে তালাবদ্ধ একটি বাড়ির সামনে ন’বজাতক স’ন্তানসহ মা রোকসানা বেগমকে পাওয়া যায়। ওই সময় রোকসানা বেগমের স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে পাওয়া যায়নি।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় ন’বজাতকের সুস্থতার বি’ষয় চিন্তা করে রোকসানা বেগমকে তার বাবার বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পরে ন’বজাতকসহ রোকসানা বেগমকে নিয়ে যান তার মা ফাতেমা বেগম। এই বি’ষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত অ’ভিযোগ করেনি। অ’ভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাইবান্ধা জে’লা জজ আ’দালতের এপিপি অ্যাডভোকেট এমএ মাজেদ স’রকার বলেন, গর্ভবতী অবস্থায় কোন নারীকে তা’লা’ক দেওয়া যাবেনা। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কেউ গর্ভবতী নারীকে তা’লা’ক দিলে সেটি কার্যকর হবে না। যদি তা’লা’ক দিতেই হয় তবে স’ন্তান প্রসবের তিন মাস পর তা’লা’ক দিলে সেটি কার্যকর হবে। রাষ্টীয় এই নিময় অনুযায়ী রোকসানা বেগমের তা’লা’ক কার্যকর নয়। যদি তার স্বামী তা’লা’ক দিয়েও থাকেন তবে সেটি এখনো কার্যকর হয়নি।

সাদুল্যাপুর উপজে’লা স্বা’স্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুরঞ্জন কুমার বলেন ‘মায়ের গর্ভে স’ন্তান মেয়ে হবে, নাকি ছেলে হবে’ সেটির জন্য বাবায় দায়ী। এজন্য মাকে কোন প্রকার দোষারোপ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে রোকসানা বেগমকে দোষ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কন্যা স’ন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য কোন মাকেই এককভাবে দায়ী করা ভু’ল।’