১২ বছর পর স্বামীর ঠিকানা পেয়ে পুত্র-কন্যা নিয়ে বাড়ির সামনে অনশনে নারী

| আপডেট :  ১ মার্চ ২০২১, ০৫:২৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ মার্চ ২০২১, ০৫:২৩ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ ১২ বছর পর স্বামীর ঠিকানার খোঁজ পেয়ে স’ন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে অ’নশনে এক নারী। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজে’লার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের রামসিং বাইশের পাড় গ্রামে। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।স্বামী এবং স’ন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করা নারী লায়লা বেগম জানান, আমার বাড়ি ময়মনসিংহ জে’লার ফুলবাড়িয়া উপজে’লার ধামর গ্রামে।

পিতা নজরুল ইসলাম। রাজারহাট উপজে’লার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের রামসিং বাইশের পাড় এলাকার মৃ’ত নরেন্দ্র নাথ মণ্ডলের ছেলে শ্রী পরেশ চন্দ্র মণ্ডলের সাথে পরিচয় হয় তার।সেসময় তাকে বলেন, সে ব্র্যাকে চাকুরী করেন। তাদের বিয়েতে বা’ধা হয়ে দাঁড়ায় দু’জনে ভিন্ন ধর্ম। পরে পরেশ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কোর্ট এফিডডেফিটের মাধ্যমে তার নাম হয় মো. আব্দুল হামিদ।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবনে ২০০৫ সালের ৫ডিসেম্বর একটি পুত্র স’ন্তান এবং ২০০৭ সালের ৫অক্টোবর একটি কন্যা স’ন্তান হয়।

পরেশ চন্দ্র মণ্ডল ওরফে আব্দুল হামিদ ২০০৮ সালে বদলি জনিত কথা বলে কুমিল্লা চলে যান। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে অনেক খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। স’ন্তানদের তিনি চ’রম বি’পাকে পড়েন।

স্বামীর ফিরে না আসায় গাজীপুর সদর উপজে’লার রাতুল গলির নুর ভিলায় পিতা-মাতার কাছে আশ্রয় নেন। ব্যবসায়িক কাজের জন্য তার বাবা-মা সেখানেই থাকেন। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দু’টি স’ন্তানকে নিয়ে তিনি এখানেই রয়েছেন।

কয়েক মাস আগে তার পিতা নজরুল ইসলাম মা’রা যান। একদিকে স’ন্তানদের পিতৃ পরিচয় আর বৃ’দ্ধ মাকে নিয়ে মানবেতর জী’বন কা’টাতে হচ্ছে তাকে। তার স্বামী বদলির সময় কাগজপত্র নিয়ে চলে যাওয়ায় স্বা’মীর স্থায়ী ঠিকানার খোঁজ পাননি।

আকস্মিকভাবে তার স্বামী পরেশ চন্দ্র মণ্ডল ওরফে আব্দুল হামিদের এইচএসসি পাশের মার্কশিট খুঁজে পান তিনি। এরই সূত্র ধরে গাজীপুর থেকে স’ন্তানদের নিয়ে সোমবার সকালে পরেশ চন্দ্র মণ্ডল ওরফে আব্দুল হামিদের বাড়িতে আসেন। তাদের পরিচয় পাবার পরপরই স্বামীর পরিবারের লো’কজন বাড়িতে তা’লা লাগিয়ে সটকে পড়েন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমার স’ন্তানদের পিতৃ পরিচয় দিতে পারছি না। তাই আমার স্বামী না আসা পর্যন্ত স’ন্তানদের নিয়ে অ’নশন চা’লিয়ে যাবো।

লায়লা বেগমের বড় স’ন্তান মেহেদী হাসান রিপন (১৬)বলেন, আমি ছোট থাকতেই আমার বাবা আমাদের ছে’ড়ে চলে গেছেন। এখন বাবার ঠিকানা পেয়েছি। আমরা আমাদের বাবার পরিচয় নিয়ে বাঁ’চতে চাই।

ছোট মেয়ে নুশরাত জাহান ইলমা (১৪)বলেন, আমরা জন্মের পর থেকেই বাবাকে দেখিনি। আজ মা ও আমরা বাবার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি তাই বাবাকে না দেখা পর্যন্ত এখান থেকে ফিরবো না। বাবা যদি না আসে এবং আমাদের পিতৃ পরিচয় না দেয় তাহলে আমার এখানেই আত্মহ’’ত্যা করবো।

নাজিমখাঁন ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার আজিজার রহমান জানান, শ্রী পরেশ চন্দ্র মণ্ডল ২০০১ সালে একটি বিয়ে করে তাকে ডি’ভোর্স দেয়। এরপর কোথায় যায় জানি না। আজ জানলাম সে মু’সলিম হয়ে বিয়ে করেছে। আবার ২০০৯ সালে রংপুর গঙ্গাচড়া এলাকায় শ্রী হরিশংকর এর কন্যা শ্রী কল্পনা রাণীকে বিয়ে করেন। তাকে নিয়েই সংসার করছেন বলে আমরা জানি।

এই বি’ষয়ে পরেশ চন্দ্র ওরফে আব্দুল হামিদের সঙ্গে ০১৭৩২৫**৩৭৮ এই নম্বরে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরেশ চন্দ্র ওরফে আব্দুল হামিদের ছোট ভাই নির্মল চন্দ্র বলেন, এই ঘটনা নতুন নয়। আমার বড় ভাই পূর্বেও এমন নারী কে’লেঙ্কারির ঘটনায় ঘটিয়েছে। সেগুলোর জরিমানা দিতে আমাদের পরিবারের সহায় সম্পত্তি শেষ। এরপর ২০০০ সালে ভাইয়ের সাথে পরিবারের সকলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। সেই থেকে তার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ নেই আমাদের।

এ বি’ষয়ে রাজারহাট থানার অফিসার ই’নচার্জ মো. রাজু স’রকার জানান, বি’ষয়টি জানতে পেরেছি। ভু’ক্তভোগী নারী লায়লা বেগম থানায় একটি অ’ভিযোগ দেবার জন্য এসেছে। অ’ভিযোগ নিয়ে ত’দন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।