শত শত কঙ্কাল কাদের?

| আপডেট :  ১ মার্চ ২০২১, ১২:১৩ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ মার্চ ২০২১, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বরফের নিচে চা’পা পড়ে আছে শত শত মা’নুষের ক’ঙ্কাল। অর্ধশত বছরেও এই ‘কঙ্কালের র’হস্য ভেদ করতে পারেনি নৃবিজ্ঞানীরা। ভারতের উত্তরাখণ্ডের হিমালয়ে পর্বতমালার শৃঙ্গে রূপকুণ্ড হ্রদ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত। র’হস্যে ঘেরা এই হ্রদ ক’ঙ্কাল হ্রদ নামেই বেশি পরিচিত।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬,৫০০ ফুট

উঁচুতে উত্তরাখণ্ডের ত্রিসুলে অবস্থিত রূপকুণ্ড হ্রদ। আর এটি হ্রদ তো নয় যেন এক র’হস্যভাণ্ডার। বরফ গলতেই দেখা মেলে ক’ঙ্কালের। যেন মানুষের হাড়গোড়ের একটি লেক। আহামরি সৌন্দর্য না থাকলেও কঙ্কালের এই র’হস্যের কারণে বিজ্ঞানী, গবেষক ও নৃতাত্ত্বিকবিদদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এই রূপকুণ্ড হ্রদ।

১৯৪২ সালে ব্রিটিশ এক বনরক্ষক প্রথমবারের মতো এই বরফের চাদরে মোড়া হ্রদে মানুষের হাড় দেখতে পান। বছরের আট মাস হ্রদটি বরফে ঢাকা থাকলেও বরফ গলতে গলতে হাড়গোড় ও কঙ্কালের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় ৮৭০ বছর আগে তুষারঝড়ে ভারতীয় কোন এক রাজা, রানিসহ তাদের সতীর্থদের সলিল সমাধি হয় এখানে।

আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, অবশিষ্ট কঙ্কালগুলো ভারতীয় যো’দ্ধাদের, যারা ১৮৪১ সালে তিব্বত দ’খলের চেষ্টা করেছিলো। তবে তাদেরকে প্রতিহত করা হলে পিছু হটতে গিয়ে এই হ্রদে তাদের মৃ’ত্যু হয়। আবার অনেকেই বলেন, ম’হামা’রিতে মা’রা যাওয়াদের দেহাবশেষ এখানে সমাহিত করা হতো।

আবার গ্রামাঞ্চলের প্রচলিত বিশ্বাস মতে, নন্দাদেবীর তৈরি করা ঝড়ের কবলে পড়ে মানুষের মৃ’ত্যু হয়। তবে প্রথম দিকে কঙ্কালগুলো পর্যালোচনা করে জানানো হয়, লেকে যাদের মৃ’ত্যু হয় তাদের সবার দৈহিক উচ্চতা স্বাভাবিক মানুষের উচ্চতার চেয়ে বেশি। তাদের অধিকাংশই মধ্য বয়সী। যাদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে। তবে কিছু নারীর কঙ্কালের সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া মৃ’তদের সবাই সুস্বা’স্থ্যের অধিকারী ছিলেন বলেও ঐ গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

বলা হয়, কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনায় এক দল মানুষের মৃ’ত্যু হয়েছে এখানে।সবশেষ টানা ৫ বছর ভারত, যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানভিত্তিক ১৬টি প্রতিষ্ঠান ও ২৮ জন গবেষক তাদের গবেষণায় বলেছে এ সব ধারণা সত্য নাও হতে পারে। ১৫ নারীসহ ৩৮টি দেহাবশেষের জেনেটিক পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ম’রদেহের সবগুলোই ১২০০ বছর আগের। তারা বলছেন আলাদা আলাদা সময়ে তাদের মৃ’ত্যু হয়েছে।

রূপকুণ্ডের এই কঙ্কাল হ্রদ আজো এক র’হস্য হলেও নির্দিষ্ট একটি ঘটনায় তাদের মৃ’ত্যু হয়নি বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ইয়াডাওইন হার্নে। সাম্প্রতিক গবেষণায় আরো দেখা যায়, এই হ্রদে মেলা কঙ্কালের মধ্যে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসরত মানুষের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। এমনকি ইউরোপ ও গ্রিক আইল্যান্ডের মানুষের সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে।

অনেকের দাবি, বহু বছর আগে স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে তীর্থযাত্রায় এসেছিল একটি দল। আচমকা মা’রাত্মক শিলাবৃষ্টির কারণে মৃ’ত্যু হয় গোটা দলটির। প্রতিটি খুলির মাঝে ফাটল, এটা ছিল কঙ্কালগু’লির বৈশিষ্ট্য। ছোট কিন্তু এই গভীর আ’ঘাত থেকেই মৃ’ত্যু হয়েছিল বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

যু’দ্ধের কথা বলা হলেও, সেখানে কোনো রণসরঞ্জাম গোলাবারুদ কিছুই পাওয়া যায়নি। এমনকি ব্যবসা বাণিজ্যের রুট ধারণা করা হলেও তারও কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে অনেক দেহাবশেষ একসঙ্গে পাওয়ার বি’ষয়ে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ধর্মীয় কোনো গণ জমায়েতের সময় তাদের মৃ’ত্যু হয়ে থাকতে পারে।

জেনেটিক গবেষণা কিংবা প্রচলিত বিশ্বাস কোনোটিই এখনো শতভাগ নিশ্চিত করতে পারেনি আসলে কী হয়েছিলো রূপকূণ্ডে। হিমজলে কোত্থেকে এলো মানুষের এই কঙ্কাল। তা আজও এক র’হস্য।