প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে দেশ ও রাজনীতি ছাড়ছেন খালেদা জিয়া

| আপডেট :  ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:৪২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:৪২ অপরাহ্ণ

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে এখন বিচ্ছিন্ন । কারাবরণে তিন বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। আইনিভাবে ব্য’র্থ হয়ে বিশেষ শর্তে জা’মিনে রয়েছেন গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে। প্রথমে ছয় মাসের জন্য জা’মিন দেয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর জা’মিনের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত করা হয়।

এ জা’মিনও শেষের পথে। খালেদা জিয়ার পরিবার স’রকারের সাথে সমঝোতা করছেন। যেতে চাচ্ছেন লন্ডনে। দেশ ছাড়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন পরিবারকে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী ও স্ব’রা’ষ্ট্রন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।আবেদনে কী থাকছে, কীভাবে পূর্বের ন্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে পরিবার, এ বি’ষয়ে বিএনপির হাইকমান্ড অন্ধকারে রয়েছেন। খালেদা জিয়ার পরামর্শে পরিবারই সবকিছু করছেন।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে জানা গেছে, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইমেজ রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষুণ্ন হয়ে গেছে। তাই তিনি হয়তো আর রাজনৈতিক অঙ্গনে মৌলকভাবে আসবেন না। চিকিৎসা ও বেঁচে থাকাকেই পরিবার এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। শা’রীরিকভাবে নানা স’মস্যায় জর্জরিত বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায় হয়তো শেষের পথেই বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতা জে’লে গেলে অনেক সময় আরও বিকশিত হন, আরও বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার জে’লজীবন তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটছে দলের কার্যত ভূমিকার কারণে। আড়াই বছরে দল খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কিছুই করতে পারেনি। তাই তিনি দেশ ছেড়ে লন্ডনে বসবাসকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন।

মার্চেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মুক্তি পাওয়ার সবুজ সংকেত রয়েছে স’রকার থেকে। পরিবারের নির্ভরযোগ্য সূত্র দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।খালেদার দেশ ছাড়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চার আইনজীবী তার পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করে জা’মিনের মেয়াদ বাড়ানোর একটি খসড়া আবেদন তৈরি করেছেন।

দলটির হাইকমান্ড মনে করছেন, খালেদা জিয়া কা’রাগারের বাইরে থাকলেও পুরোপুরি মুক্ত নন। তাকে গৃহব’ন্দি করে রাখা হয়েছে। তার এখন বেঁচে থাকাই একমাত্র পথ। তাই চলতি সপ্তাহেই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হবে। নতুন জা’মিনের জন্য ফের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে লিখিত আবেদনে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চাইবেন তারা।

খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি শুভেচ্ছা চিঠিও ইতোমধ্যে সিনিয়র আইনজীবীদের সহযোগিতায় তৈরি করেছেন। আবেদন ও চিঠিতে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের বি’ষয়টি উল্লেখ থাকবে। তার অনুমতি নিয়ে ভাই শামীম এসকান্দার ব্রিটিশ হাইকমিশনে নিজের ও বোন খালেদা জিয়ার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলও স’রকার অনুমতি দিলে খালেদার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। স’রকার অনুমতি দিলে ব্রিটিশ হাইকমিশন তার চিকিৎসার জন্য ভিসা দেয়ার ঘোষণা দেয় এর আগে।

এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেছিলেন, স’রকার অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য তারা ব্রিটেন যেতে ভিসা দেবেন।

আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিলো ভালো চিকিৎসা, উন্নত চিকিৎসা। উন্নত চিকিৎসা এখানে প্রপার ওয়েতে হচ্ছে না। এজন্য তিনি দেশের বাইরে যেতে চাইছেন, তার পরিবারও সেটি চাচ্ছে। এর আগেও পরিবার থেকে আবেদন করা হলে স’রকার ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। এবারো যদি আবেদন করা হয় স’রকার সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে নেবে বলে আমরা আশা করছি। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবিক দিকটি বিবেচনা করার জন্য আবেদনে উল্লেখ থাকবে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্র চিকিৎসার জন্য সাময়িকভাবে মুক্তি দিলেও খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তার এখন প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা যেটাকে আমরা চিকিৎসকের ভাষায় বলি— আধুনিক চিকিৎসা। তিনি অতীতে লন্ডন, নিউইয়র্কসহ যেখানে যে চিকিৎসা নিয়েছেন এখন সেখানেই সে চিকিৎসাগুলো নিতে হবে।

বাসায় তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। এখন তার প্রয়োজন স্থায়ী জা’মিন ও চিকিৎসা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবি’ষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এখন সব মহল থেকে যে স্থায়ী জা’মিনের কথা বলা হচ্ছে তা স’রকারের ও’পর নির্ভর করছে। আমরা চূড়ান্ত শুনানির জন্য আপিল করেছি। স’রকারের সদিচ্ছা থাকলে শিগগিরই তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বি’ষয়ে আইনজীবীরা ভালো জানেন, আইনজীবীরা কী করছেন, আমরা কিছু জানি না।